বিতর্ক মূলত যাঁকে নিয়ে, সেই কবীর সুমন যথারীতি থাকছেন। সেই সঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণির বিতর্কিত বাংলা পাঠ্যবইয়ে জায়গা হচ্ছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মান্না দে-র মতো গায়কের। এমনকী সুমনের সমসময়ের নচিকেতারও। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে সোমবার এ কথা জানা গিয়েছে।
দ্বাদশ শ্রেণির ওই পাঠ্যবই থেকে কেউ বাদ পড়ুন, তা তিনি চান না বলে শিক্ষামন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে মন্ত্রী বলেছিলেন, বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে বাদ দিয়ে বইটি লেখারও পক্ষপাতী নন তিনি। শিক্ষামন্ত্রীর সেই ‘ব্যক্তিগত’ মতামতের আদলেই বইটির সংশোধনী সংক্রান্ত পরিশিষ্ট প্রস্তুত করেছে রাজ্য সরকারের তৈরি করা স্কুল পাঠ্যক্রম কমিটি। সোমবার স্কুলশিক্ষা সচিব অর্ণব রায়ের কাছে ওই পরিশিষ্টের খসড়া জমা দিয়েছে তারা। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আজ, মঙ্গলবার কলকাতায় ফিরে তা দেখবেন বলে শিক্ষা দফতরের খবর।
‘বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি’ নামে দ্বাদশ শ্রেণির ওই বাংলা পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্কের জেরে বইটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাজ্য সরকার। বইটির পঠনপাঠনও আপাতত বন্ধ। বইটির প্রথম অধ্যায় ‘বাংলা গানের ইতিহাস’-এ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মান্না দে-র মতো গায়কের নাম নেই। আবার কবীর সুমনকে অনেকখানি জায়গা দেওয়া হয়েছে বইয়ে। প্রাক্তন সাংসদ কবীর সুমনের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ। মূলত সেই কারণেই বইটির পঠনপাঠন আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। এ ছাড়া রামকিঙ্কর বেজকে সাঁওতাল ভাস্কর হিসেবে চিহ্নিত করার সঙ্গে সঙ্গে ওই বইয়ে জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়দের কারিগরি শিক্ষা প্রসারের হোতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিতর্ক বেধেছে এই সব অসঙ্গতিকে কেন্দ্র করেই। যদিও কবীর সুমনকে বইয়ে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়াই সরকারের ক্ষোভের মূল কারণ বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর।
এই সব বিতর্কের অবসান ঘটাতেই বইটির সংশোধনী পরিশিষ্ট আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কী আছে সোমবার জমা দেওয়া পরিশিষ্টের খসড়ায়?
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, বইটি থেকে কিছু বাদ যায়নি। তবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্রদের নাম ঢোকানো হয়েছে। তেমনই ‘বাংলা গানের বাঁক বদল’ বিষয়ে কবীর সুমন, মহীনের ঘোড়াগুলির পাশাপাশি নগর ফিলোমেল, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা চক্রবর্তী, মৌসুমী ভৌমিক, চন্দ্রবিন্দু, ভূমিকেও রাখা হয়েছে। খেলা, বিজ্ঞান, শিল্প-সহ সব অধ্যায়েই এই ধরনের সংশোধন করা হয়েছে বলে একটি সূত্রের খবর। চলচ্চিত্র সংক্রান্ত অধ্যায়ে জায়গা পেতে পারেন সন্ধ্যা রায়ও। কোথাও বইটির সংশ্লিষ্ট অংশের সঙ্গে সংশোধনী যুক্ত করা হয়েছে, কোথাও বা গোটা বিষয়টিই নতুন করে লেখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।
গত সপ্তাহেই বিধানসভায় গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার। পরে মন্ত্রী জানান, কাউকে বাদ দেওয়া হবে না। ওই বইয়ের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক কেউ বাদ পড়ুন, তা-ও তিনি চান না। মন্ত্রী কারও নাম না-করলেও তিনি আসলে কবীর সুমন, হেমন্ত, সন্ধ্যা, মান্নাদের নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন বলে মনে করেন অনেকে। সে-দিনই শিক্ষা দফতরের কর্তারা জানিয়ে দেন, সুমনের সমসাময়িক নচিকেতাও ঠাঁই পেতে পারেন ওই পাঠ্যবইয়ে।
মন্ত্রীর সেই মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই কি তৈরি হল পরিশিষ্ট?
পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যানের জবাব, “সংবাদমাধ্যমকে পরিশিষ্ট বিষয়ে একটি কথাও বলব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy