Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫

রেস্তোরাঁয় বসে ফোনে উল্টো কথা কেন

ভোর চারটে নাগাদ ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। পাল্টা ফোন করতেই ও-পার থেকে ভেসে এসেছিল পরিচিত মেয়েটির গলা, “খুব বিপদে পড়েছি। রক্ত বেরোচ্ছে। হয়তো বাঁচব না।” তার পরেই ফোনটা কেটে গিয়েছিল। বারবার চেষ্টা করেও আর ফোনের লাইন পাননি বছর ছাব্বিশের ওই যুবতী। এর পরেই যুবতীর নজরে আসে ওই মেয়েটির পাঠানো একটি এসএমএস। তাতে লেখা, “দিদি, আজ আমার সাথে খুব খারাপ হয়েছে। আমাকে বাড়ি যেতে দেয়নি। আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে। আমি খুব বিপদে আছি। আমি আর বাঁচতে পারব না। ভাল থেকো।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৪ ২১:৩৯
Share: Save:

ভোর চারটে নাগাদ ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। পাল্টা ফোন করতেই ও-পার থেকে ভেসে এসেছিল পরিচিত মেয়েটির গলা, “খুব বিপদে পড়েছি। রক্ত বেরোচ্ছে। হয়তো বাঁচব না।”

তার পরেই ফোনটা কেটে গিয়েছিল। বারবার চেষ্টা করেও আর ফোনের লাইন পাননি বছর ছাব্বিশের ওই যুবতী। এর পরেই যুবতীর নজরে আসে ওই মেয়েটির পাঠানো একটি এসএমএস। তাতে লেখা, “দিদি, আজ আমার সাথে খুব খারাপ হয়েছে। আমাকে বাড়ি যেতে দেয়নি। আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে। আমি খুব বিপদে আছি। আমি আর বাঁচতে পারব না। ভাল থেকো।”

মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় কর্মসূত্রে। বাড়ির অবস্থার কথা শুনে কিছুটা সহানুভূতি দেখানোর সঙ্গে সঙ্গেই বেড়েছিল ঘনিষ্ঠতা। সেই পরিচিত মেয়েটিকে যে এমন ভাবে ধর্ষিত হতে হবে, তা মঙ্গলবারও বিশ্বাস হচ্ছে না ওই যুবতীর। এ দিন তিনি জানিয়েছেন, রবিবার অফিস থেকে বেরোতে কিছুটা দেরি হয়েছিল মেয়েটির। তার পর হঠাৎই রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ যুবতীর কাছে একটি ফোন আসে। তাতে ওই মেয়েটি জানান, হাওড়া যাওয়ার বাস ধরার জন্য তিনি খিদিরপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। “হাওড়া যাওয়ার পথে খিদিরপুর কেন?” জিজ্ঞাসা করেছিলেন যুবতী। উত্তরে মেয়েটি জানিয়েছিলেন, ট্যাক্সি চেপে হাওড়া যাওয়ার পথে তাঁকে খিদিরপুর মোড়ে নামিয়ে দেন চালক। ওই যুবতী তাঁকে বলেন, রাস্তায় দাঁড়ানো পুলিশ কিংবা কিয়স্কে গিয়ে সাহায্য চাইতে। এর পরেই ফোনের লাইন কেটে গিয়েছিল।

যে সময় মেয়েটি ফোন করেছিলেন, বাস ধরার জন্য অপেক্ষা করার কথা বলেছিলেন, সিসিটিভির ফুটেজ কিন্তু অন্য সাক্ষ্য দিচ্ছে। ফুটেজে পুলিশ দেখেছে, ওই সময়ে খিদিরপুরে এক রেস্তোরাঁয় অভিযুক্তের সঙ্গে নরম পানীয় খাচ্ছিলেন নির্যাতিতা। তা হলে কেন যুবতীকে ও কথা বলেছিলেন তিনি? কিছু লুকোতে চাইছিলেন? নাকি কোনও ফাঁদে পড়েছিলেন? ধন্দ কাটছে না পুলিশের।

পুলিশকে ওই যুবতী জানিয়েছেন, এর পরে খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। এর পর ভোর চারটে নাগাদ ফোনের শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। দেখেন, পরিচিত মেয়েটির ফোন থেকে চার-চারটে মিসড কল। এর পরেই মেয়েটিকে ফোন করেন তিনি। টের পান, ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে গিয়েছে। তার প্রমাণ মেলে এসএমএস থেকেও। ওই যুবতী এ দিন জানান, সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ তিনি ওই মেয়েটিকে ফের ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন। লাইন পাননি।

পুলিশ সূত্রের খবর, নির্যাতিতার মোবাইল ঘাঁটতে গিয়েই ওই যুবতীর নম্বর তাঁরা পান। দেখেন, রাত ১০টা ৪৭ মিনিট, ১১টা ৫০ মিনিট এবং ১২টা ৩০ মিনিটে ফোন করা হয়েছে। সেই সূত্র ধরেই সোমবার দফায় দফায় তাঁর সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ কর্তারা। প্রশ্ন উঠেছে, এসএমএসে “আমাকে বাড়ি যেতে দেয়নি” কথাটির অর্থ কী? ওই সহকর্মী কি জানতেন, তরুণী কোথায় গিয়েছিলেন? কে বা কারা তাঁকে বাড়ি যেতে দেননি? এ প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।

বাড়িতে ফোন না করে, ওই মহিলা সহকর্মীকে কেন আগে ফোন করেছিলেন মেয়েটি? তার ব্যাখ্যা হিসেবে পুলিশ বলছে, সহকর্মী যুবতীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল। নানা সময়ে পরিবারের সুবিধা-অসুবিধা নিয়েও আলোচনা হত। সম্ভব হলে হাওড়ার কোনও শপিং মলে তাঁকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি। পুলিশ মনে করছে, সেই ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই সম্ভবত মাকে ফোন না করে যুবতীকে আগে ঘটনাটির কথা জানিয়েছিলেন মেয়েটি।

অন্য বিষয়গুলি:

rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy