Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

রং-তুলিকে ভালবেসেই বদলে গিয়েছিল বন্দুকবাজ হ্যাপি

২০০৭ সাল। সবেমাত্র বন্দিদের জন্য ‘সাংস্কৃতিক সংশোধন প্রক্রিয়া’ কর্মকাণ্ডের অধীনে আঁকার ক্লাস শুরু হয়েছে। ক্লাস চলছিল আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। বেঁটেখাটো রোগা চেহারার এক যুবক এসে আঁকার শিক্ষককে বলল, “আমিও আঁকব।” শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে সাদা কাগজ আর পেন্সিল দিয়ে বলেছিলেন, “বেশ তো আঁকুন না। কিন্তু কী আঁকবেন?” খানিক ভেবে বন্দি উত্তর দিল, “ফুল আঁকব।” অবাক হয়েছিলেন আঁকার শিক্ষক। ওই বন্দিকে বলেছিলেন, “তা হলে একশোটা ফুল আঁকতে হবে। আর তা ভরতে হবে একশো রকম রং দিয়ে।”

হ্যাপি সিংহের আঁকা ছবি।  নিজস্ব চিত্র

হ্যাপি সিংহের আঁকা ছবি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০৩:১৮
Share: Save:

২০০৭ সাল। সবেমাত্র বন্দিদের জন্য ‘সাংস্কৃতিক সংশোধন প্রক্রিয়া’ কর্মকাণ্ডের অধীনে আঁকার ক্লাস শুরু হয়েছে। ক্লাস চলছিল আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। বেঁটেখাটো রোগা চেহারার এক যুবক এসে আঁকার শিক্ষককে বলল, “আমিও আঁকব।” শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে সাদা কাগজ আর পেন্সিল দিয়ে বলেছিলেন, “বেশ তো আঁকুন না। কিন্তু কী আঁকবেন?” খানিক ভেবে বন্দি উত্তর দিল, “ফুল আঁকব।”

অবাক হয়েছিলেন আঁকার শিক্ষক। ওই বন্দিকে বলেছিলেন, “তা হলে একশোটা ফুল আঁকতে হবে। আর তা ভরতে হবে একশো রকম রং দিয়ে।” মাথায় হাত দিয়ে বন্দি বলেছিল, “একশো ফুল আর একশো রং! ঠিক আছে। তাই আঁকব।”

সেই শুরু। এ ভাবেই ‘শার্প শু্যটার’ হ্যাপি সিংহের হাতে বন্দুকের বদলে উঠে এসেছিল পেন্সিল আর রং-তুলি। খাদিমকর্তা অপহরণ মামলায় হ্যাপি সিংহ ছিল অন্যতম চক্রী। ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবজ্জীবন সাজা হয় তার। সিআইডির এক অফিসারের বক্তব্য, “শার্প শু্যটার হিসেবে নাম ছিল হ্যাপির। অপহরণের পিছনেও মূল মাথা ছিল সে।” কিন্তু সেই হ্যাপিই জেলের ভিতরে বন্দুকের মতোই ভালবেসে ফেলেছিল রং-তুলিকে। কারাকর্তারা জানাচ্ছেন, এর পর থেকে কখনও আঁকা ছাড়েনি হ্যাপি। অনেক সময়ে অন্য বন্দিদের আঁকা শেখানোয় উৎসাহও দিয়েছে।

কলকাতায় প্রথমে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বেশ কয়েক বছর ছিল হ্যাপি। সেখানেই সে বন্দিদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে সংশোধন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। ২০০৭ সালে আলিপুরে আঁকার ক্লাসেও ভর্তি হয়। জেল সূত্রের খবর, তার পরে সাফল্যের সঙ্গে তিন বছর আঁকা শিখেছে সে।

২০১০ সালে অবশ্য বহরমপুর জেলে বদলি হয়ে যায় হ্যাপি। তার আঁকার ক্লাসও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আঁকা ছাড়েনি সে। বহরমপুরে কয়েক বছর থাকার পরে হ্যাপির বদলি হয় প্রেসিডেন্সি জেলে। সেখানেও আঁকার অভ্যেস ছাড়েনি সে। কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, “বহরমপুরে এবং প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়েও কিন্তু আঁকা চালিয়ে গিয়েছে খাদিমকর্তা অপহরণ মামলার অন্যতম মূল আসামি হ্যাপি সিংহ।” কারাকর্তাদের কথায়, “আঁকা শেখার পর থেকে হ্যাপির ব্যবহারেও অনেক পরিবর্তন এসেছিল। জেলে কখনওই তার বিরুদ্ধে সে ভাবে কোনও অভিযোগ ওঠেনি।”

টানা তিন বছর হ্যাপিকে আঁকা শিখিয়েছেন সংশোধনাগারের আঁকার শিক্ষক চিত্ত দে। হ্যাপির ছবির প্রশংসা তাঁর মুখেও। চিত্তবাবুর বক্তব্য, “খুবই ভাল আঁকত হ্যাপি। যে তিন-চার জন বন্দির ছবি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে, তার মধ্যে হ্যাপি অন্যতম।”

অন্য বিষয়গুলি:

happy singh partha roy burman khadim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy