ফুটবল-প্রেমীদের গণ্ডি পেরিয়ে সরাসরি জনতার দরবারে। ফুটবলের চেনা জগৎ ছেড়ে রাজনীতির অচেনা পিচে ভাইচুং ভুটিয়া কি সফল হতে পারবেন? আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে আসন্ন লোকসভা ভোটে দার্জিলিং কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক যা বললেন—
প্রশ্ন: রাজনীতিতে আসবেন আগে থেকেই কি ঠিক ছিল?
ভাইচুং: সিদ্ধান্তটা হঠাৎ নিয়েছি বললে মিথ্যে বলা হবে! রাজনীতিতে আসব, মানুষের জন্য কাজ করব, এ সব অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম। অপেক্ষা করছিলাম শুধু সঠিক সময়ের। আমি মমতাজি-র কাছে কৃতজ্ঞ যে উনি আমাকে পাহাড়বাসীর জন্য কাজ করার একটা সুযোগ করে দিলেন।
প্র: বিশ্বের বহু তারকা ফুটবলারই বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত। আপনি হঠাৎ রাজনীতি বেছে নিলেন কেন?
ভাইচুং: প্রত্যেক ভারতবাসীর রোজকার জীবনে রাজনীতির প্রভাব মারাত্মক। সিস্টেমের ভিতরে না থাকলে, মানুষের উপকার করব কী ভাবে? জানি, অনেকেই রাজনীতিকে ভাল চোখে দেখে না। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের যে দিশা দেখিয়েছেন, তা শুধু বাংলা নয়, প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছেই একটা অনুপ্রেরণা।
প্র: ফুটবল মাঠে একশো কুড়ি মিনিট পর্যন্ত দৌড়তেন। কিন্তু ভোটের প্রচারে তো দিন রাত এক করে দিতে হবে।
ভাইচুং: মানুষের লোক হতে গেলে সেটা তো করতেই হবে। আমাদের উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা এবং বিচারধারাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তবে আমি কোনও মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাই না।
প্র: বেশির ভাগ মানুষেরই অভিযোগ, নিবার্চন জেতার পরে সেলিব্রিটিদের খুঁজে পাওয়া যায় না। জিতলে জনগন আপনাকে পাবে তো?
ভাইচুং: জেতা-হারাটা আমার হাতে নেই। তবে এটা ঠিক জিতলে দায়িত্ব বাড়বে। তখন লক্ষ্য হবে পাহাড়ে ফের শান্তি পুনর্স্থাপন করা। আর জনতার দাবিদাওয়া, সমস্যা এবং অভিযোগ শোনার জন্য যতটা সম্ভব তাঁদের কাছে থাকার চেষ্টা করব।
প্র: আপনি প্রার্থী হওয়ায় পাহাড়ের প্রধান শাসক দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা খুশি নয়। তারা বলছে, আপনি তো দার্জিলিঙের লোকই নন।
ভাইচুং: সিকিম আর দার্জিলিংকে আমি কখনও আলাদা চোখে দেখি না। ভাষা এক। সংস্কৃতিও এক। কাজের জন্য দার্জিলিঙের কত ছাত্র হোটেল ম্যানেজমেন্ট করে সিকিমে চাকরি করছে। আবার সিকিমের ছাত্ররা দার্জিলিঙে। ফুটবলার নীলেন্দ্র দিওয়ানও তো দার্জিলিঙের ছেলে। কিন্তু আমার দল সিকিম ইউনাইটেডে খেলেই প্রথম স্বীকৃতি পায়। বিমানে বিভিন্ন জায়গায় যখন যাওয়া-আসা করি, তখন কত পাহাড়ি ছেলে-মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়। তারা তো কখনও এ রকম আমরা-ওরা করে না।
প্র: ওদের তো আরও আপত্তি আপনি রাজনীতির লোক নন?
ভাইচুং: এগুলো অজুহাত। মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে রাজনীতির লোগো লাগিয়ে আসতে হবে, কোথায় বলা আছে? আমার কাছে এই জায়গাটা একেবারে নতুন হতে পারে। নিয়ম-কানুনও আলাদা। তবে মানুষের জন্য কাজ করার যে সদিচ্ছা আমার মধ্যে আছে, সেটা নেতাদের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।
প্র: ভোটের তথ্য বলছে, পাহাড়ে প্রধান শাসক দল যে প্রার্থীকে সমর্থন করে, সে-ই দার্জিলিঙে জেতে।
ভাইচুং: বাংলার মানুষ শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেনে। তাঁর সততাকে চেনে। পাহাড়ের উন্নতির পথে যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তার মুখোশ খুলে দেবে মানুষই।
প্র: শুক্রবার নিজের বাড়িতে নতুন প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনাকে কি আলাদা করে কোনও পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী?
ভাইচুং: কী আলোচনা হল, সেটা তো আর বলা যাবে না। তবে একটা কথা বলতে পারি। আমার নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পরে টানা তিন রাত ঘুমোতে পারিনি। ওই সময় কোনও ডাক্তার আমাকে দেখলে নিশ্চিত বলে দিত, ‘রক্তচাপ অসম্ভব বেশি, এখনই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।’ ওই বাহাত্তর ঘণ্টা যা টেনশন করেছি, গোটা ফুটবলজীবনে তা করিনি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হতেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। তিরানব্বইয়ে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে অভিষেক ম্যাচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ভয়ে কাঁপছি। তার পর গ্যালারিতে চল্লিশ হাজার দর্শক দেখে ভয়টা উড়ে গেল।
প্র: প্রচারে নামছেন কবে থেকে?
ভাইচুং: গৌতমদার (দেব) সঙ্গে কথা হয়েছে। খুব সম্ভবত সোমবার থেকে। তবে এখনও সরকারি ভাবে কিছু ঠিক হয়নি।
প্র: আপনার ভোটের প্রচারে কি সুব্রত ভট্টাচার্য, গৌতম সরকারদের মতো প্রাক্তন ফুটবলারদের দেখা যেতে পারে?
ভাইচুং: কোনও নির্দিষ্ট ফুটবলারকে আমন্ত্রণ জানানোর সময় আর নেই। তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় আমার প্রচারে আসতে চান, আমি স্বাগত জানাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy