Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মনিরুলের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন, উঠছে বিতর্ক

লাভপুর-কাণ্ডে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করে তাতে লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চলেছে বীরভূম জেলা পুলিশ। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, অতিরিক্ত চার্জশিটে মনিরুলের নাম রাখলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও খুনের অভিযোগ আনা হচ্ছে না। মনিরুল ও তাঁর দুই সঙ্গীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে অভিযোগ আনা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০৩:৩২
Share: Save:

লাভপুর-কাণ্ডে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করে তাতে লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চলেছে বীরভূম জেলা পুলিশ। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, অতিরিক্ত চার্জশিটে মনিরুলের নাম রাখলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও খুনের অভিযোগ আনা হচ্ছে না। মনিরুল ও তাঁর দুই সঙ্গীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে অভিযোগ আনা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, অস্ত্র আইনে কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে হলে জেলাশাসকের অনুমতি দরকার হয়। তাই অতিরিক্ত চার্জশিট সংক্রান্ত ফাইলটি পাঠানো হয়েছে জেলাশাসকের কাছে। তাঁর অনুমোদন পেলে আদালতে তা পেশ করা হবে। বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, “পুলিশের ওই আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।”

মঙ্গলবার বোলপুর আদালতে ওই মামলার যে চার্জশিট পুলিশ পেশ করেছিল, তাতে মনিরুল-সহ ২২ জন অভিযুক্তের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। চার্জশিটে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের সকলের বিরুদ্ধেই তিন ভাইকে খুন ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। লাভপুর-কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে ওই মামলার দ্রুত শুনানি শুরু করার জন্য বৃহস্পতিবারই কলকাতা হাইকোর্টের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে বর্তমানে এই সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থের মামলা চলছে।

লাভপুর-কাণ্ডে অতিরিক্ত চার্জশিট তৈরি করে অস্ত্র আইনে মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে পুলিশ যে অভিযোগ আনতে চলেছে, তা তিন ভাইকে পিটিয়ে খুনের এই মামলায় যে ধোপে টিকবে না, তা এক প্রকার মেনেই নিচ্ছেন জেলা পুলিশের কর্তাদের একাংশ।

তাঁরা বলছেন, ময়নাতদন্তে পরিষ্কার যে ওই তিন ভাইকে হতার জন্য কোনও আগ্নেয়াস্ত্র বা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। কিল, চড়, লাথিতেই মৃত্যু হয়েছে তিন ভাইয়ের। তাই অস্ত্র আইনে অভিযোগ এনে মূলত মনিরুলকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ারই চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। কলকাতা হাইকোর্টে নিহতদের ভাই যে মামলা করেছেন, তার আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় যেমন বলেছেন, “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মনিরুলকে অস্ত্র আইনে অভিযুক্ত করে খুনের অভিযোগ থেকে বাঁচাতে চাইছে পুলিশ।”

মূল চার্জশিটে মনিরুলের নাম না রেখে অতিরিক্ত চার্জশিটে তাঁর নাম ঢোকানো হল কেন? আর চার্জশিটে যখন নাম ঢোকানোই হল, তখন তাঁকে খুনের অভিযোগ থেকে পুরোপুরি মুক্ত করে দেওয়া হল কেন?

জেলা পুলিশ কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, এর ফলে প্রশাসন এক সঙ্গে দুই পাখি মারতে চাইছে। মনিরুলের নাম চার্জশিটে ঢুকিয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ দূর করার চেষ্টা হল। আবার তৃণমূল বিধায়কের সহজেই ছাড় পাওয়ার রাস্তা খুলে রাখা হল।

মৃত তিন ভাইয়ের পরিবারের এক সদস্যের প্রশ্ন, “মনিরুল গত ২১ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মীদের সামনে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি ওই তিন জনকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন। তার পরেও মনিরুলকে খুনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল কী ভাবে?”

তদন্তকারীরা বলছেন, নিহত তিন ভাইয়ের পরিবার আদালতের কাছে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে তাঁরা সবাই স্বীকার করেছেন যে, মনিরুল ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। সেটাই ওঁর সপক্ষে সব থেকে বড় প্রমাণ। কে কোথায় কী ভাষণ দিচ্ছেন বা দিয়েছেন, তার থেকেও আইনের চোখে এটা বড় প্রমাণ।

যদিও প্রশাসনের এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়নি নিহতদের ছোট ভাই সানোয়ার শেখের। বিষয়টি তিনি কলকাতা হাইকোর্টের সামনেও তুলে ধরতে চান। লাভপুর-কাণ্ডে চার বছরেও পুলিশ চার্জশিট না দেওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন সানোয়ার। বর্তমানে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে সেই মামলার শুনানি চলছে। এ দিন সানোয়ারের পরিবারের লোকেরা হাইকোর্টে এসে ওই মামলায় তাঁদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরেই সুব্রতবাবু বিচারপতি দত্তের এজলাসে গিয়ে লাভপুর-মামলা দ্রুত শোনার আর্জি জানান।

সুব্রতবাবু আদালতকে বলেন, “লাভপুর-কাণ্ডের এফআইআর-এ প্রথমে নাম থাকা সত্ত্বেও চার বছর পরে পুলিশ যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, সেখানে মনিরুলের নামই নেই। পুলিশ জানিয়েছে, গোপন জবানবন্দিতে ওই পরিবারের ৯ জনের এক জনও মনিরুলকে দোষী সাব্যস্ত করেননি। সেই কারণেই চার্জশিটে তাঁর নাম নেই।”

কেন মৃতদের পরিবারের সদস্যরা জবানবন্দিতে এমন কথা বলেছিলেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে সুব্রতবাবু বলেন, “গোপন জবানবন্দি দেওয়ার দিন সকালেই ওই পরিবারের একটি মেয়েকে বন্দুক দেখিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের কথা মতো গোপন জবানবন্দি না দিলে ওই মেয়েটিকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না বলে অপহরণকারীরা শাসিয়ে যায়। এটা মনে রাখা দরকার।”

সুব্রতবাবুর বক্তব্য শুনে বিচারপতি দত্ত বলেন, “মামলাটি বিচার্য বিষয়ের তালিকায় রয়েছে। যে কোনও দিন মামলাটির শুনানি হবে। সে দিন আপনি একটি অতিরিক্ত হলফনামা দিয়ে এই বিষয়গুলি জানাবেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

manirul islam lobhpur case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE