করমর্দন। কলকাতার এক অনুষ্ঠানে গায়ক-মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও নায়ক-সাংসদ দেব। যে সৌজন্যটুকু দেখাতে পারলেন না রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরের অফিসারেরা। শনিবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।
রাজ্যের পুর দফতরের সব অফিসারই ‘ব্যস্ত’। তাই কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র ডাকা বৈঠকে কেউই হাজির হতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আসানসোল শহরের প্রকল্পগুলির কাজ সরেজমিনে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও পুরসভার হাতে অনেক ‘জরুরি’ কাজ। কোনও অফিসারই মন্ত্রীর সঙ্গী হতে পারবেন না।
পুর দফতরের তরফে মৌখিক ভাবে নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে এ কথা জানানোর পরই এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে বাবুলের প্রথম সফরের কর্মসূচি ভেস্তে গেল। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় চলা বিভিন্ন পুর-প্রকল্প পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করতে আগামী ১৭-১৮ নভেম্বর বৈঠক ডাকা হয়েছিল।
তাঁর প্রথম সফরে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা না পেলেও হাল ছাড়ছেন না আসানসোলের বিজেপি সাংসদ। শনিবার নিজাম প্যালেসে অস্থায়ী অফিসে বসে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, রাজনৈতিক বিরোধ যেন উন্নয়নে প্রভাব না ফেলে। সেই মতো আমি শুক্রবার রাজ্যের পুরমন্ত্রীকে অন্তত চার বার ফোন করেছি, এসএমএস পাঠিয়েছি। তিনি উত্তর দেননি।”
এর পরেও কি আপনি রাজ্যের মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন? বাবুলের জবাব, “নিশ্চয়ই, আমি আবার টেলিফোন করব। কেন্দ্র তো রাজ্যের শত্রু নয়। আলাপ-আলোচনা করে রাজ্যে যদি আরও কয়েকটা ফ্লাইওভার হয়, জলপ্রকল্প হয়, ভলভো বাসের ব্যবস্থা হয় তাতে তো আপত্তি থাকার কথা নয়। রাজ্য সরকার কেন আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না, বুঝতে পারছি না।”
সূত্রের খবর, নিজের রাজ্যে সরকারের থেকে সাড়া না পেলেও মহারাষ্ট্র সরকার ইতিমধ্যেই বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সেখানকার নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বাবুলের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিয়েছেন কোন সময়ে তিনি মুম্বই যাবেন। বিমানবন্দর থেকেই তিনি সরাসরি নগরোন্নয়ন দফতরে গিয়ে বৈঠকে বসবেন। মহারাষ্ট্র সরকার কেন্দ্রের কাছ থেকে কী কী সাহায্য চায়, তার তালিকাও নাকি তৈরি হয়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাবুলের প্রতিক্রিয়া, “মন্ত্রী হয়ে আমি প্রথম নিজের কেন্দ্র এবং রাজ্যে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম উন্নয়ন নিয়ে সকলেই একমত হবেন। মহারাষ্ট্রে যা হচ্ছে, তা সেখানে বিজেপি সরকার রয়েছে বলে নয়, অন্য কোনও দলের সরকার থাকলেও একই রকম হতো। সেই কারণেই মহারাষ্ট্র এক বছরে ৫৭টি ফ্লাইওভার বানাতে পারে, আর এ রাজ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো, পরমা ফ্লাইওভার, বাগুইআটি কিংবা বিবেকানন্দ রোড ফ্লাইওভার নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেও শেষ হয় না।”
কেন বাবুলের সরকারি অনুষ্ঠান নিয়ে রাজ্য সহযোগিতা করল না? পুরমন্ত্রী ফিরাদ হাকিম এর সঙ্গে টেলিফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব মেলেনি। তবে পুর দফতরের অফিসারদের একাংশ জানান, মুখ্যমন্ত্রী বাবুলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাই পুরমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী নন। তিনি মনে করেন, ওঁর কোনও ক্ষমতা নেই। বৈঠক করতে হলে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গেই করা হবে। হাফ-মন্ত্রী বাবুলের সঙ্গে নয়।
হাফ-মন্ত্রীর প্রসঙ্গ শুনে বাবুল হেসেছেন। তাঁর কথায়, “বিধানসভায় মোট আসনের ‘হাফ’ জেতাটাই আমাদের লক্ষ্য। তাই ওঁদের মাথায় এই শব্দটা গেঁথে গিয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমি ‘হাফ’ হয়েও ‘ফুল’ কাজ করতে চাই।”
বাবুলের কোন কোন প্রকল্প ঘুরে দেখার কথা ছিল? সরকারি সূত্রের খবর, ১৭ নভেম্বর আসানসোলে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের টাকায় তৈরি হওয়া বস্তি এবং আবাসন প্রকল্প, জল প্রকল্প এবং নতুন ৬০টি বাস শহরে নামানোর যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা ঘুরে দেখার কথা ছিল মন্ত্রীর। পরের দিন কলকাতায় রাজ্য সরকারের অফিসারদের নিয়ে বৈঠকে বসার কথা ছিল তাঁর। সে দিন দিল্লি থেকে আসার কথা ছিল নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আমলাদের। কিন্তু রাজ্য সরকার মৌখিক ভাবে এই বৈঠকে থাকতে না পারার কথা জানানোয় সবটাই বানচাল হয়ে গিয়েছে। যদিও বাবুল আজ, রবিবারই আসানসোলে গিয়ে নিজের মতো করে প্রকল্পগুলি নিয়ে খোঁজ নেবেন।
তা হলে কি আর রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন না? কেন্দ্রীর নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর জবাব, “রাজ্যের পুর দফতরের সব অফিসার জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকছেন আশা করি, এমন পরিস্থিতি অনন্ত কাল চলবে না। তাই মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে বলেছি, আপনারাই একটা দিন নির্দিষ্ট করুন। আমি সে দিনই এসে রাজ্যের সমস্যার কথা শুনতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy