কেন্দ্রের জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে কেনা বাসের ঋণের ভারে ডুবতে বসেছে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম (ডব্লিউবিটিআইডিসি)। সরকারের থেকে ওই বাস পাওয়ার পরে মালিকেরা মাসিক কিস্তির টাকা ঠিকমতো না দেওয়ায় ব্যাঙ্কঋণ শোধ করতে গিয়ে এই হাল নিগমের। এই অবস্থায় সরকারি ওই সংস্থাকে চাঙ্গা করতে নিজেরাই ওই সব বাস আটক করে চালানোর সিদ্ধান্ত নিল পরিবহণ দফতর। পাশাপাশি, ওই সব বাসমালিকদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার। পাল্টা বাসমালিকেরাও জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বেআইনি। এর বিরুদ্ধে তাঁরা শীঘ্রই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ঋণ শোধ করা হয়নি এমন ১২টি বাসকে দিন পনেরো আগে আটক করেছে সরকার। ঠিক হয়েছে, বাসগুলি সিএসটিসি-কে দিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হবে। এই প্রক্রিয়া সফল হলে ঋণ পরিশোধ হয়নি, জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের এমন সব বাসই আটক করা হবে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। এক কর্তার কথায়, “বেসরকারি মালিকের হাতে বাস। কিন্তু বাসের রেজিস্ট্রেশন সরকারের নামে। ওই সব বাস কোথাও দুর্ঘটনা ঘটালে তার জরিমানাও ভরতে হয় সরকারকে। এটা বেশি দিন ধরে চলতে পারে না। সে কারণেই সরকার নিজেই ওই বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
কী ভাবে জেএনএনইউআরএম বাসের ঋণে ডুবল নিগম?
পরিবহণ কর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৯ সালে ১৫ বছরের পুরনো বাস বসে যায়। শহর জুড়ে বাসের আকাল শুরু হলে সঙ্কটে পড়েন যাত্রীরা। সমস্যা মেটাতে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আওতায় ৫১২টি বাস কিনেছিল পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম। এই বাসগুলি কিনতে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিল সরকারই। এর মধ্যে ৪৯৬টি বাস বিভিন্ন বেসরকারি মালিকের মধ্যে বিলি করে রাজ্য পরিবহণ দফতর। বাকি ১৬টি বাস দেওয়া হয় দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমকে। ৪৯৬টি বাসই রেজিস্ট্রেশন করা হয় ডব্লিউবিটিআইডিসি-র অধীনে। যার মধ্যে ৬৯টি বাসের পারমিটও রয়েছে নিগমের নামে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১০ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাসগুলি বিলি করেছিল রাজ্য সরকার। ওই প্রকল্পের আওতায় কেনা বাসগুলির দাম ছিল ২০ লক্ষ টাকার মতো। যার মধ্যে ১০ লক্ষের মতো টাকা মাসিক ২২ হাজার টাকা কিস্তিতে শোধ করার কথা ছিল বেসরকারি মালিকদের।
বছর দেড়েক ঠিকঠাক ঋণ শোধ করার পর থেকেই বাসমালিকেরা ক্রমশ মাসিক কিস্তির টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিতে শুরু করেন। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে ঋণের পরিমাণ। গত বছরের ২১ অক্টোবর পর্যন্ত ওই ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ কোটি ৮ লক্ষ ৩৪ হাজার ১৮৯ টাকা। কিন্তু বেসরকারি মালিকেরা ঋণ শোধ না-করায় নিগমও নিরুপায়। গত আর্থিক বছরের শেষে সিএজি-ও বিষয়টির তীব্র সমালোচনা করে অবিলম্বে রাজ্য সরকারকে এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলে।
সিএজি-র সমালোচনার পরেই নড়েচড়ে বসে সরকার। দশ মাস আগে ১৯টি বাস আটক করা হয়। কিন্তু বেসরকারি মালিকেরা আবেদন জানান, মাসিক ২২ হাজার টাকার বদলে ১০ হাজার টাকা করে তাঁরা মাসে কিস্তি দেবেন। তাতে সরকার রাজি হয়ে ১৯টি বাস ছেড়ে দেয়। কিন্তু এক মাস কিস্তির টাকা দেওয়ার পর ফের তা বন্ধ করে দেন বাসমালিকেরা। এ বার তাই বাস আটক করে চালানোরই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, বাসমালিকদের ঋণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে।
সরকারি এই সিদ্ধান্তকে বাসমালিকেরা অবশ্য অগণতান্ত্রিক বলে ব্যাখ্যা করেছেন। বাসমালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাসের যা দাম, তার থেকে মাসিক কিস্তি কী করে বেশি, আমরা তার ব্যাখ্যা চেয়েছি সরকারের কাছে। কিন্তু সরকার তার সদুত্তর দিতে পারছে না। আমরা ঋণ শোধ করব না, এক বারও বলিনি। কিন্তু সরকার যা করছে, তা রীতিমতো অগণতান্ত্রিক। আমরা এর প্রতিবাদে পরিবহণ দফতরকে চিঠি দিয়েছি। এর পরেও কিছু না হলে আমরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy