Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বছরভর অন্ধকারে হোঁচট খেল বাঙালি

আছে শুধু অন্ধকার। রাত পোহালে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়। কিন্তু আঁধার কাটার কোনও আশ্বাসবাণী শোনাতে পারল না ২০১৪। ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা নিয়েই বাঙালির বছর ফুরোল। এটা খুব অপ্রত্যাশিত নয়। আশার আলো যে ক্রমে স্তিমিত হচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহু দিন ধরে মিলছিল। তমসা থেকে জ্যোতিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পাঠ ভুলে বঙ্গের বাঙালি জ্যোতি বসুর জমানা থেকেই ধীরে ধীরে অন্ধকারকে আপন করে নিচ্ছে।

দেবাশিস ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৮
Share: Save:

আছে শুধু অন্ধকার।

রাত পোহালে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়। কিন্তু আঁধার কাটার কোনও আশ্বাসবাণী শোনাতে পারল না ২০১৪। ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা নিয়েই বাঙালির বছর ফুরোল।

এটা খুব অপ্রত্যাশিত নয়। আশার আলো যে ক্রমে স্তিমিত হচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহু দিন ধরে মিলছিল। তমসা থেকে জ্যোতিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পাঠ ভুলে বঙ্গের বাঙালি জ্যোতি বসুর জমানা থেকেই ধীরে ধীরে অন্ধকারকে আপন করে নিচ্ছে। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে সেই কালো ছায়া এখন প্রায় সর্বগ্রাসী। শিল্প-বাণিজ্য থেকে শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতির অঙ্গন থেকে শাসনযন্ত্রের অন্দর সর্বত্র তার ছায়াপাত।

পরিস্থিতি এতই সঙ্গীন যে, রাজ্যের নানা জায়গায় এখন আন্তর্জাতিক জঙ্গিচক্রের ঘাঁটি গেড়ে থাকার নির্দিষ্ট তথ্য পর্যন্ত সামনে আসছে। তিন মাস আগে ঘটে যাওয়া খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে নেমে সেই সব প্রমাণ হাতে পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। কত দূর বিস্তৃত এই জাল, এখনও শেষ উত্তর মেলেনি। তবে পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে এ এক নিদারুণ পরিস্থিতি।

গত কয়েক মাসে সারদা-তদন্তের অগ্রগতিও শাসকদের ভাবমূর্তিতে কালি ঢালার পক্ষে যথেষ্ট। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী-সাংসদ-নেতারা একের পর এক জেলে ঢুকছেন, এমন দৃশ্য তো এর আগে দেখা যায়নি। ২০১৪ সেই দিক থেকেও ব্যতিক্রমী বই কি!

এমন ক্রান্তিকালে তাই আশার ছবি দেখতে পাওয়াই দুরাশা।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

শিল্পে খরা তীব্রতর। রাজ্য সরকারের জমি-নীতি বদলায়নি। আদি গোদরেজের মতো শিল্পপতি তো সরাসরিই সেই নীতির দিকে আঙুল তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গাপুর ঘুরে এলেও এখন পর্যন্ত বড় বিনিয়োগের রুপোলি রেখা নেই। এবিজি ফিরছে না, জিন্দলও গেল। এ ভাবেই একে একে নিভিছে দেউটি। ছোট-মাঝারি কারখানাগুলিতে চলছে রাজনৈতিক জুলুম। সিন্ডিকেট-রাজ যথারীতি কায়েম। বছর শেষে কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য: পশ্চিমবঙ্গ বিনিয়োগের উপযুক্ত নয়।

শিক্ষাক্ষেত্রেও দলবাজির শিকড় আরও পোক্ত। সাহিত্য-সংস্কৃতিতে প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্যপ্রায়। খেলাও তথৈবচ। শুধু রাজনীতি ও দুর্নীতির ‘সৌজন্যে’ বাঙালির কলঙ্কের বোঝাকে এই বছর আরও ভারী করে তুলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ।

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ের পরে অবশ্য ‘অন্য’ মমতাকে দেখা গিয়েছিল। আশার আলো আঁচ করে অনেকে বলেছিলেন, ‘মমতা ২’। সেই মমতা ছিলেন সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছুটা সাহসী, প্রশাসক হিসেবে আগের চেয়ে দৃঢ়। চেষ্টা করেছিলেন নতুন কিছু করার বার্তা দিতে। কিন্তু এক বছর না যেতেই আবার তিনি অন্য রকম!

২০১৪-র মমতা ফের অসহিষ্ণু। এক দিকে সারদা-তদন্ত, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মতো বিভিন্ন ঘটনার তদন্ত-প্রক্রিয়া তাঁর বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাজধর্ম প্রশ্নের মুখে। অন্য দিকে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিপুল আসনপ্রাপ্তির পরেও জাতীয় রাজনীতিতে দাগ কাটতে না-পারার চাপ। ফেলে আসা এক বছরের মমতাকে ফিরে দেখলে বিবিধ কার্যকলাপে তাঁর সেই অস্থিরতা স্পষ্ট।

এই রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগে কোনও মন্ত্রীর জেলে যাওয়ার ঘটনা সম্ভবত এ বছরই প্রথম। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের বিরুদ্ধে সারদা-কেলেঙ্কারির সূত্রে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে সিবিআই। কিন্তু তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে মদনের সমর্থনে সরকার ও শাসক দলের ঝাঁপিয়ে পড়া। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মন্ত্রীকে পদচ্যুত করা তো দূরস্থান, তাঁর পক্ষ নিয়ে পথে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। সবাই এক বাক্যে বলছেন, ‘স্বচ্ছ’ বঙ্গে এ এক অভিনব প্রাপ্তি!

চিট ফান্ডের জল ঘোলা শুরু হয়েছিল গত বছর। কিন্তু নানা ঘাটে পাক খেতে খেতে এই প্রথম সেই ঘোলা জল মুখ্যমন্ত্রীর গায়ে উছলে পড়েছে। মমতার ব্যক্তিগত সততা নিয়ে বারবার প্রকাশ্যে প্রশ্ন উঠতে শোনা গেল এই বছরেই। রাজ্য রাজনীতির ঘরানায় যা এত দিন ভাবাই যেত না।

অশালীন বক্তব্য এবং অপরাধযোগ্য হুমকিতে এ বছর রীতিমতো প্রসিদ্ধ হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ, তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল, বিজেপির দুধকুমার মন্ডল, শ্যামাপদ মন্ডল-সহ অনেকেই। এখনও শাস্তি হয়নি তাঁদের কারও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবশ্য বক্তৃতার তোড়ে তাঁর প্রতিপক্ষ সর্বভারতীয় এক নেতার উদ্দেশে আপত্তিকর শব্দ বলে তৎক্ষণাৎ ক্ষমা চাইতে ভোলেননি। তবে ‘বাম্বু’ এখনও স্বস্থানেই আছে।

রাজ্যে ক্ষমতার অলিন্দে পরিবারতন্ত্রের উত্থান এক রকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে এই বছর। কোনও মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার থেকে উত্তরসূরি তুলে আনার নজির পশ্চিমবঙ্গে ছিল না। এ বার হল। মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার লোকসভা নির্বাচনে জিতে শুধু সাংসদই হলেন না, শাসক দলে ‘যুবরাজ’ হিসেবে দ্রুত নিজের অবস্থান মজবুত করার পথে মসৃণ ভাবে এগিয়ে গেলেন। সেই ভারসাম্যের খেলা থেকে ২০১৪ বুঝেছে, মমতার দলে এত দিনকার অবিসংবাদী ‘নম্বর ২’ মুকুল রায় ক্রমশ মাঠের বাইরে চলে যাচ্ছেন।

বঙ্গ-রাজনীতির ময়দানে সঙ্গীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয় এ বার নতুন অবতার। রাজনীতিতে পা রেখে লোকসভায় জয় এবং ছ’মাস যেতে না যেতেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারে একমাত্র বাঙালি মন্ত্রী। নবান্নের দেওয়া বিশেষণে তিনি ‘হাফ মন্ত্রী’ হলেও বাবুলকে নিয়ে রাজ্যের শাসকদের মাথাব্যথা শুরু। আর আছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। নিজে লোকসভা ভোটে জিততে পারেননি ঠিকই, কিন্তু দেশে মোদী-হাওয়া ওঠার পরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে চাঙ্গা করার কাজে তাঁর ক্লান্তিহীন ছুটোছুটি তাঁকে অন্য ভাবে চেনাল। জন্মসূত্রে বাঙালি না হলেও বাংলার রাজনীতিতে এখন তৃণমূল বিরোধিতার অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন বিজেপি-র সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। বারবার মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক আক্রমণের লক্ষ্যও হচ্ছেন তিনি।

সারদা-তদন্তের মই বেয়ে একটু দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করছে সিপিএম। তবে তা নেহাৎ হামাগুড়ি। রাজ্য কংগ্রেসের শোচনীয় হালে কোনও বদল নেই। শুধু ‘মালিক’ বদলেছে তাদের। পুরনো শাসক সিপিএমের জায়গায় নতুন শাসক তৃণমূলের ‘বি-টিম’ হয়ে মাঠে ঘুরছে তারা।

খেলার মাঠেও বাঙালির সাফল্য নেহাৎ হাতে গোনা। দুই প্রধান খেলা ফুটবল ও ক্রিকেট। আই পি এল ক্রিকেটে কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং আই এস এল ফুটবলে ‘আটলেটিকো দে কলকাতা’ দুজনেই এ বছর চ্যাম্পিয়ন। ফুটবলে জয়সূচক গোল করে সোদপুরের মহম্মদ রফিক বাঙালির মুখ রেখেছেন ঠিকই, তবে কলকাতার নামমাহাত্ম্যটুকু বাদ দিলে নাইট রাইডার্সে বাঙালির দিন গিয়েছে।

বাঙালির ঐতিহ্য দুই ফুটবল ক্লাব মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল। সারদা কেলেঙ্কারির কালি দু’জনেরই গায়ে। বাঙালির গর্বে এও এক আঘাত।

গ্লাসগোয় কমনওয়েলথ গেমসে ভারোত্তোলনে সোনা জিতে ফিরেছেন বঙ্গসন্তান সুখেন দে। কমনওয়েলথ দাবায় চ্যাম্পিয়ন দীপ সেনগুপ্ত। এশীয় গল্ফের অর্ডার অব মেরিট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থেকে এ বারের মরসুম শেষ করলেন অনির্বাণ লাহিড়ি। উল্লেখ থাক তিন কন্যা মাম্পি দাস, ঋতুপর্ণা দাস ও আশা রায়ের। মাম্পি এয়ার পিস্তলে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। ঋতুপর্ণা ব্যাডমিন্টনে জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন। আশা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মেয়েদের ২০০ মিটার দৌড়ে।

বছর শেষে প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠে কিছুটা আলো কেড়ে নিলেন আর এক কন্যা গীতশ্রী সরকার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রী তিনি। শিক্ষাক্ষেত্রে ‘কলরব’-এর এই বছরে সমাবর্তনের মঞ্চে উঠে আচার্য-রাজ্যপালকে গীতশ্রী জানিয়ে দেন, পদক ও শংসাপত্র তিনি নেবেন না। এই কাজ উচিত হয়েছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলুক। কিন্তু কন্যার প্রতিবাদের সাহসকে স্বীকৃতি দিতেই হয়।

শিক্ষামন্ত্রী বদলের (ব্রাত্য বসুর জায়গায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষায় দলতন্ত্রের রাশ যে আরও এঁটে বসছে, তা আজ ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। নয়া শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুকে স্বাগত জানাতে শিক্ষা দফতরে গিয়ে আরাবুল ইসলাম তো বলেই দিয়েছেন, “গুরু এলে শিষ্য আসবেই”!

কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অন-লাইন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না দিয়ে সরকার ও শাসক দল এ বারেও অধ্যক্ষদের মার খাওয়ার রাস্তা খোলা রেখেছিলেন। ফলে শঙ্কুদেবের পান্ডাগিরি একই ভাবে বহাল ছিল শিক্ষাঙ্গনে। অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকেরা নিগৃহীত হয়েছেন কখনও জয়পুরিয়া, কখনও মণীন্দ্রচন্দ্র, কখনও বা নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, রায়গঞ্জের কোনও না কোনও কলেজে। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে শাসক দলের ছাত্র-বাহিনীর তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হতে হয়েছে শারীরবিদ্যার শিক্ষক রোশেনারা মিশ্রকে, ঘটনাক্রমে যিনি সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মেয়ে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার শাসকদের ‘প্রশ্রয়পুষ্ট’ উপাচার্য ছাত্র-বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ। প্রতিবাদী কলরব দমন করতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশ ঢুকিয়ে পড়ুয়াদের লাঠি পেটানোর নজির গড়েছেন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। শাসককুল তাঁকে ‘সাবাস’ দিলেও ‘অনুগত’ উপাচার্যের নিয়োগ কেন্দ্র করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও যে অশান্তির আগুন জ্বলছে, তার দায় সরকার এড়ায় কী করে!

শিক্ষার মতো সংস্কৃতিতেও দলের দাপট ক্রমবর্ধমান। সিনেমাপাড়ায়, নাটকের মঞ্চে ছড়ি ঘোরানোর অধিকার এবং বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা তাঁরাই পাচ্ছেন, যাঁরা ‘ক্ষমতার’ কাছাকাছি। বাম আমলেও যে এর থেকে খুব আলাদা কিছু হতো, তা নয়। তবে লক্ষণীয় হল, তখন বামেদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা অনেক মুখই এখন রাতারাতি রং বদলে হাতে মাথা কাটছেন। ২০১৪ সাল তাঁদের ‘কৃতিত্বের’ বছর। এঁঁদের দাপাদাপিতে সংস্কৃতি তটস্থ।

বাংলা ছবির হাল সাধারণ ভাবেই খারাপ। উল্লেখযোগ্য কোনও সৃষ্টিও নেই এই বছর। উঠে আসেনি সম্ভাবনাময় কোনও নতুন মুখ। এমনকী রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে সাংসদ হতে পারলেও নায়ক দেবের ঔজ্জ্বল্যে কিছুটা ভাটার টান। বক্স অফিসে হেরে গিয়েছে তাঁর ‘যোদ্ধা’। নেতা ও অভিনেতা দুই সত্তার নিরন্তর টানাপড়েন তাঁকে গিলে খাচ্ছে। আপাতত যেটুকু যা আলোচনা, তা আবিরকে নিয়ে। একই অঙ্গে সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ ও প্রাইভেট গোয়েন্দা ফেলুদা সেজে বছর শেষে দর্শকদের কিছুটা আগ্রহ জাগালেন তিনি। আগ্রহের বাড়তি কারণ, দুটি ছবি মুক্তি পেল একই সময়ে। ভাল লাগে, যখন মুম্বইয়ের বাঙালি পরিচালক সুজিত সরকারের ছবির জন্য অমিতাভ বচ্চন একমাস কলকাতার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে, সাইকেল চালিয়ে শু্যটিং করে যান। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘জাতিস্মর’-এ সুরকার হিসেবে কবীর সুমন, গায়ক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার জিতে নেন রূপঙ্কর। ভেনিসে পুরস্কৃত হয় আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তের ছবি ‘আসা যাওয়ার মাঝে’।

সাহিত্যে খরা এ বারেও কাটেনি। মনে রাখার মতো কোনও বই লেখা হয়নি এই বছর। তবে একটি বিশেষ ক্ষেত্রে বাঙালি-মনীষা হঠাৎ অনেক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। বাঙালির রসবোধে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার টইটম্বুর। বিশেষ করে সারদা-কাণ্ড যত এগোচ্ছে, নেতা-মন্ত্রীরা যত পাকে জড়াচ্ছেন, বাঙালির কাব্য-উৎকর্ষ ও সৃষ্টিশীলতা ততই যেন উপচিয়ে পড়ছে বিবিধ সোশ্যাল নেটওয়ার্কের দেওয়ালে। বাঙালির ঘরে ঘরে, মগজে মগজে এত প্রতিভা লুকিয়ে ছিল, ২০১৪-র আগে তা এমন করে কে জানত! কালজয়ী সাহিত্যে না হোক, সময়-ছোঁওয়া রসসৃষ্টিতে বাঙালির এই অবদান এ বছরের ‘পাওনা’।

পদার্থবিদ্যায় এ বছরেই ‘ডিরাক’ পদক পেয়েছেন ইলাহাবাদে হরিশ্চন্দ্র রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষক-অধ্যাপক অশোক সেন। পদার্থবিজ্ঞান, অঙ্কের তাত্ত্বিক গবেষণায় যার মূল্য অনেক।

আশাবাদী অনেকে বলছেন, আগামী দিনের জন্য আরও এক গবেষণার ক্ষেত্র নাকি তৈরি হচ্ছে এই বাংলায়। বাঙালির হারানো মেরুদণ্ড খুঁজে পাওয়ার গবেষণা। তাঁদের ধারণা, অচিরেই তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু এবং দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সাধন পাণ্ডের উপর সেই নিরীক্ষা শুরু হতে পারে। কারণ যাদবপুরের সমাবর্তনে ছাত্রীর নীরব প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে ওই তিন জনের বক্তব্যে কোথায় যেন একটা মেরুদণ্ডের আভাস!

মেরুদণ্ড! তা-ও কি হয়? সংশয়ীরা দীনবন্ধু মিত্র আউড়ে বলছেন, “কি বোল বলিলে বাবা, বল আর বার। মৃতদেহে হল মম জীবনসঞ্চার...।”

উত্তর তোলা থাক ২০১৫-র জন্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy