প্রত্যয়ী। বুধবার কালীঘাটে বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
বর্তমান সাংসদদের অধিকাংশকেই বহাল রাখার পাশাপাশি লোকসভার প্রার্থী তালিকায় মুনমুন সেন, দেবের মতো বেশ কিছু তারকা মুখ নিয়ে এলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত দু’বার লোকসভা ভোটে জোট করে লড়েছিল তৃণমূল। এ বার তারা রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রেই প্রার্থী দিল। রাজনৈতিক মুখ আর তারকা-চমকের মিশেল অধিকাংশ আসনেই জয় এনে দেবে বলে আত্মবিশ্বাসী মমতা।
নির্বাচন কমিশন বুধবার লোকসভা ভোটের দিন-ক্ষণ ঘোষণা করার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই এ রাজ্য এবং প্রতিবেশী ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড ও মণিপুরের কয়েকটি কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। গত বার কংগ্রেসকে ১৪টি এবং এসইউসি-কে একটি আসন ছেড়ে ২৮টি আসনে লড়েছিল তৃণমূল। জিতেছিল ১৯টিতে। এ বার সেই ১৯ জনের মধ্যে চার জন বাদে বাকি পনেরো জনই রয়েছেন প্রার্থী তালিকায়।
স্বাস্থ্যের কারণে বাদ পড়েছেন বনগাঁর সাংসদ গোবিন্দ নস্কর এবং রানাঘাটের সুচারু হালদার। তবে গোবিন্দবাবুর কন্যা প্রতিমা নস্করকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে প্রার্থী করা হয়েছে। সুচারুবাবুর জায়গায় প্রার্থী হচ্ছেন সৌগত বর্মন। বসিরহাটের সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামকে পাঠানো হয়েছে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে। প্রত্যাশিত ভাবেই বাদ পড়েছেন যাদবপুরের বিক্ষুব্ধ সাংসদ কবীর সুমন। আর ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ সোমেন মিত্র তো পদত্যাগ করে কংগ্রেস চলে গিয়েছেন। সেখানে প্রার্থী তৃণমূল ‘যুবা’র সর্বভারতীয় সভাপতি তথা তৃণমূল নেত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল নেতৃত্বের লক্ষ্য, এ বার রাজ্য থেকে যথাসম্ভব বেশি আসন জিতে কেন্দ্রে পরবর্তী সরকার গড়ার ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা নেওয়া। সেই লক্ষ্যেই প্রথম ধাপ ছিল প্রার্থী ঘোষণা। এর পরে গোটা রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরেও তিনি প্রচারে বেরোবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। দিল্লিতে ১২ মার্চ অণ্ণা হজারের সঙ্গে যৌথ সমাবেশ। তার পরে প্রচার-সূচিতে আছে গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং বিহার। সেই সঙ্গেই মমতা জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটের ইস্তাহার তৈরির জন্যও অণ্ণার সঙ্গে আলোচনা চলছে।
টিকিট পাওয়ার আনন্দ। তৃণমূলের তিন তারকা প্রার্থী সৌমিত্র রায়,
সন্ধ্যা রায় ও ইন্দ্রনীল সেন। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
চলচ্চিত্র জগতের প্রতিনিধি হিসেবে ২০০৬-এর বিধানসভা ভোটেই তাপস পালকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। তিনি জিতেওছিলেন। গত লোকসভা ভোটে তাপসবাবুর সঙ্গে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন শতাব্দী রায়ও। সেই পথ ধরে গত বিধানসভা ভোটে বিধায়ক হয়েছেন চিরঞ্জিৎ, দেবশ্রী রায়। এ বার আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে বাংলা ছবির জগতে খ্যাতির মধ্যগগনে থাকা দেবকে প্রার্থী করেছেন মমতা। চমক ও গ্ল্যামার-অঙ্ক বাড়াতে মুনমুন, সন্ধ্যা রায়ের মতো চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি মমতা অর্ন্তভুক্ত করেছেন নাট্য-ব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ, গায়ক ইন্দ্রনীল সেন ও সৌমিত্র রায়, ফুটবল তারকা ভাইচুং ভুটিয়াকেও।
মুনমুনকে বাঁকুড়ায় এবং সন্ধ্যাদেবীকে মেদিনীপুরে প্রার্থী করা হয়েছে। দেবকে (যাঁর পোশাকি নাম দীপক অধিকারী) ঘাটালে। মমতার কথায়, “দেব স্থানীয় ছেলে। ওর বাড়ি ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত কেশপুরে। ও ভালই করবে!” দার্জিলিঙে ভাইচুংকে প্রার্থী ঘোষণা করে মমতার মন্তব্য, “পাহাড়ে খুবই জনপ্রিয় ভাইচুং। ভালই ফল করবে ভাইচুং।” বস্তুত, ভাইচুংকে প্রার্থী করে এ বার দার্জিলিং আসনেও একা লড়াইয়ের পথে যাচ্ছে তৃণমূল।
‘নাটকের শহর’ বলে পরিচিত বালুরঘাটে প্রার্থী হয়েছেন অর্পিতা। গায়ক ইন্দ্রনীলকে প্রার্থী করা হয়েছে অধীর চৌধুরীর খাস তালুক বহরমপুরে। ‘ভূমি’ ব্যান্ড-খ্যাত সৌমিত্র প্রার্থী হয়েছেন মালদহ উত্তরে। সৌমিত্রের মা প্রয়াত মঞ্জুলা রায় ছিলেন মহিলা কংগ্রেস নেত্রী। মমতার সঙ্গে তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁর নেতৃত্বে মমতা রাজনীতিও করেছেন এক সময়ে।
মুনমুন, ভাইচুংদের প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করে তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, “এ বারের ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ভোট দিল্লিতে সরকার বদলাবে। গতানুগতিক রাজনৈতিক দলের সরকার এ বার হবে না। তাই আমরাও চেয়েছি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাংস্কৃতিক জগতের ব্যক্তিত্বদের নিয়ে মেলবন্ধন ঘটাতে।”
সবিস্তারে দেখতে উপরে ক্লিক করুন
সবিস্তারে দেখতে উপরে ক্লিক করুন
গত বার গায়ক কবীর সুমনকে যাদবপুরে প্রার্থী করেছিলেন মমতা। তৃণমূলে তাঁর ইনিংস সুখকর হয়নি। তার পরেও গায়ক-সহ রাজনীতি জগতের বাইরের ব্যক্তিত্বদের আনা হল কেন? তৃণমূল নেত্রীর জবাব, “এক জন খারাপ হলেই বাকিরা খারাপ হবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই! আগে যিনি সাংসদ (যাদবপুর) হয়েছেন, তিনি কোনও দিন পার্টি করেননি। মানুষের কাজও করেননি। তাই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।”
এ বার যাদবপুরে তৃণমূল প্রার্থী শিক্ষাবিদ সুগত বসু। এই কেন্দ্রে আগে তৃণমূলের টিকিটেই সাংসদ হয়েছিলেন সুগতবাবুর মা কৃষ্ণা বসু। সুগতবাবু এ দিন বলেছেন, “এই সিদ্ধান্তে আমি গর্বিত বোধ করছি। তৃণমূল নেত্রী এই যাদবপুর থেকেই জিতে তাঁর সংসদীয় জীবন শুরু করেছিলেন।”
সোমেনবাবুকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মমতা এ দিন বলেন, “আমরা কাউকে তাড়াইনি। নিজেই চলে গিয়েছেন। আসলে রাজনীতিতে তো অনেক রকম মানুষই থাকেন!’’
গ্ল্যামারের পাশাপাশি মমতার তালিকায় ‘রাজনৈতিক চমক’ও আছে। রায়গঞ্জে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির ছোট ভাই সত্যরঞ্জন দাশমুন্সি। এখানে কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি তাঁর বৌদি। ফলে এ বার রায়গঞ্জে দেওর-বৌদির লড়াই দেখার সম্ভাবনা! একদা কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী সত্যবাবু কয়েক মাস আগেই তৃণমূলে যোগ দেন। রাজ্যসভার ভোটের সময় বাম শিবির-ত্যাগী দুই প্রাক্তন বিধায়ক সুনীল মণ্ডল এবং দশরথ তিরকে এ বার লোকসভা ভোটে লড়বেন তৃণমূলের হয়ে। দশরথবাবু আলিপুরদুয়ারে এবং সুনীলবাবু বর্ধমান-পূর্ব আসনে। কংগ্রেস ছেড়ে আসা কোতুলপুরের প্রাক্তন বিধায়ক সৌমিত্র খানও বিষ্ণপুরে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “কেউ দলত্যাগ করে আমাদের দলে যোগ দিলে তাঁকে যে সম্মান দেওয়া হয়, সৌমিত্রদের প্রার্থী করে দলনেত্রী সেই বার্তাই দিয়েছেন।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বনগাঁ থেকে প্রার্থী করা হয়েছে মতুয়া ‘বড়মা’ বীনাপাণি দেবীর ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে। তাঁর ছোট ছেলে তথা রাজ্যের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণের ছেলে সুব্রতকে প্রার্থী করার আর্জি জানিয়ে তৃণমূল নেত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন বড়মা। দিনকয়েক পরেই মত বদলে বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণকে প্রার্থী করার আর্জি জানান তিনি। শেষ পর্যন্ত টিকিট পেয়েছেন কপিলই। আসানসোল থেকে প্রার্থী করা হয়েছে শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেনকে।
প্রার্থী বাছাইয়ের সময় স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে দাবি করে মমতা বলেন, “এ বার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় এমন সুন্দর ভারসাম্য রয়েছে, যা অন্য কোনও দলের নেই।” মমতা জানিয়েছেন, এ বার তাঁরা ১১ জন মহিলা প্রার্থী দিয়েছেন। গত বার তাঁদের প্রার্থী তালিকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। এ বার তা বাড়িয়ে ৭ জন করা হয়েছে। তফসিলি জাতি, উপজাতি প্রার্থীর সংখ্যা ১২।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy