রাজ্য জুড়ে বাসের অভাব, অটোর দৌরাত্ম্য, ট্যাক্সির যাত্রী প্রত্যাখ্যান প্রতিদিন বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে পরিবহণের সার্বিক চিত্র জানতে পরিবহণমন্ত্রী, পরিবহণ সচিব ও পরিবহণের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের আগামী জুন মাসে হলফনামা দিতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি এ দিন আরও জানিয়েছেন, নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা উপলব্ধি করেছেন, হাইকোর্ট বলা সত্ত্বেও রাজ্য পরিবহণ দফতর অটোর ভাড়া, তার চালকদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করতে উদাসীন।
প্রত্যাশিত ভাবেই হাইকোর্টের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন বাসমালিক সংগঠনগুলির নেতারা। ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস’-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আদালত সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। এতে মানুষ এবং পরিবহণ শিল্প উভয়েরই সুবিধে হবে।” সরকারের পক্ষে পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “আদালতের নির্দেশ আমরা এখনও হাতে পাইনি। তবে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে অবশ্যই আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হলফনামা দেব।”
সম্প্রতি এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা দায়ের করে বলে, কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে প্রতিদিনই বাসের সংখ্যা কমছে। অটোর দৌরাত্ম্য বাড়ছে। প্রায়ই অটো চালকদের হাতে নানা ভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন যাত্রীরা। অটোর ভাড়া নিয়েও ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার। রুট ভেঙে যেমন খুশি অটো চালানো হচ্ছে। যাত্রী প্রত্যাখ্যান করা ট্যাক্সি চালকদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। সাধারণ যাত্রীদের প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এর আগেও নির্দেশ দিয়েছিল, বাস ও ট্যাক্সির ভাড়া যেমন রাজ্য সরকার স্থির করে, তেমনই রাজ্য সরকারকে অটোর ভাড়াও স্থির করতে হবে। অন্য রাজ্যে অটো যেমন মিটারে চলে, এই রাজ্যেও তেমনই ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার যদি অটোর ভাড়া স্থির করে না দেয় এবং চালকদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা না করে, তা হলে অটোর দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যাবে না।
ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশের উত্তরে রাজ্য পরিবহণ দফতর জানিয়েছিল, একটু সময় লাগলেও তারা অটোর ভাড়া স্থির করে দেবে। কলকাতা ও হাওড়ার অটোর ভাড়া স্থির করা সহজ হলেও অন্য জেলায় অটোর নির্দিষ্ট রুট নেই। তাই কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু তার পরে বছর পেরিয়ে গেলেও রাজ্য সরকার অটোর ভাড়া স্থির করা এবং চালকদের দৌরাত্ম্য বন্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
এ দিন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দায়ের করা মামলায় এই প্রসঙ্গগুলি ফের ওঠে। সংস্থার পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, বর্তমানে রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে। সাধারণ মানুষ বাস ও অটোর উপরে বেশি নির্ভরশীল। প্রতিদিন যে ভাবে অটো চালকেরা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে, তাতে যাত্রীদের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অটো চালকদের কাজকর্মের প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের কপালে জুটছে নিগ্রহ।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ আবেদনকারীর বক্তব্য শোনার পরে পরিবহণমন্ত্রী, পরিবহণ সচিব এবং পরিবহণের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের পৃথক ভাবে হলফনামা দিয়ে তাঁদের বক্তব্য জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মামলাটির পুনরায় শুনানি হবে।
তৃণমূল কংগ্রেসের অটো ইউনিয়নের নেতা মেঘনাথ পোদ্দার বলেন, “অটোর বিষয়টি বাস্তবায়িত করা খুবই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। সেটা মাথায় রেখেই সরকারকে এগোতে হচ্ছে। হাইকোর্টকে আমরা বিষয়টি জানাব।” সিপিএমের অটো ইউনিয়নের নেতা বাবুন ঘোষ অবশ্য বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শুধু বলেন, “কলকাতা হাইকোর্ট হলফনামা দিতে বললে নিশ্চয়ই দেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy