দলের নির্দেশ উপেক্ষা করেই বহিষ্কৃত নেতার পাশে থাকার কথা জানিয়েছিলেন রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ সদস্য। কিন্তু সোমবার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচনে যে সদস্যেরা আনসার আলি নামে ওই নেতাকে সমর্থন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু’জন মঙ্গলবার বিডিওকে চিঠি দিয়ে ‘ভুল’ হয়েছে বলে জানালেন।
বর্ধমান পূর্বের সাংসদ তথা দলের রায়নার পর্যবেক্ষক সুনীল মণ্ডল এ দিন বলেন, “দলবিরোধী কাজের জন্য ইতিমধ্যে রায়না ২ ব্লক সভাপতি আনসারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার মাধ্যমে দলের অন্য সদস্যদেরও বার্তা দেওয়া হয়েছে। এখন ভুল বুঝতে পেরে ওই সব সদস্যেরা ফিরে আসছেন।” তিনি দাবি করেন, আনসার আলির সঙ্গে দলের কোনও সদস্য, কর্মী বা সমর্থকেরা নেই। কিন্তু সুনীলবাবুর দাবির সঙ্গে একমত নন পঞ্চায়েত সমিতির অনেক সদস্যই। এ দিনও তাঁদের সাফ বক্তব্য, “দলের সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট সময় জানানো হলে তা মানতে নিশ্চয় বাধ্য ছিলাম। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষের পরে দলের সিদ্ধান্ত জানান সুনীলবাবু। তাই আমরা কোনও অন্যায় করিনি। আমাদের অবস্থান একই রয়েছে।”
সোমবার রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচন ছিল। জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ ছিল, নিহত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আব্দুল আলিমের স্ত্রী রুনা লায়লাকে সেই পদে বসাতে হবে। সেই নির্দেশ নিয়ে সাংসদ সুনীলবাবু পঞ্চায়েত সমিতির দফতরে যান। কিন্তু দলীয় নির্দেশ না মেনে নিজের অনুগামীদের ভোটে জিতে ওই পদে বসে পড়েন আনসার। এর পরেই সুনীলবাবুকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান রুনার অনুগামীরা। ওই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে ব্লক অফিসের সামনে চার বছরের ছেলেকে নিয়ে ধর্নাতেও বসেন তিনি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, কলকাতায় এই খবর পৌঁছানোর পরেই আনসারকে বহিষ্কারের জন্য সুব্রত বক্সীকে নির্দেশ দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ সেই নির্দেশ বহিষ্কৃত নেতাকে জানিয়ে দেন। সোমবার রাত পর্যন্ত আনসার দাবি করেছিলেন, তিনি দলের তরফে এই রকম কোনও নির্দেশ পাননি। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাঁর ফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনও দলের তরফে বহিষ্কারের কোনও চিঠি আনসারকে দেওয়া হয়নি।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পরে দলের জেলা দফতরে (তখন ঘোড়দৌড় চটিতে দফতর ছিল) রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন স্বপন দেবনাথ। সেই বৈঠকে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত আনসার আলিকে সভাপতি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময় দেখা যায়, আনসারের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন আব্দুল আলিম। তিনি ১৮-৪ ভোটে জিতে যান। গত ১০ মে তিনি খুন হন তিনি। উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ভোটে জেতেন নিহত আব্দুল আলিমের স্ত্রী রুনা। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের পক্ষ থেকে তাঁকে আগে থেকেই সভাপতি করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। দলের এক জেলা নেতার কথায়, “সেই সিদ্ধান্ত ঠিক সময়ে বলে দিলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিত না। সুনীলবাবু নির্দেশ নিয়ে যখন পৌঁছন, ততক্ষণে সদস্যেরা নিজেদের মধ্যে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন।”
সভাপতি নির্বাচনে আনসারের নাম যিনি প্রস্তাব করেছিলেন সেই বৈদ্যনাথ শীল বলেন, “সিদ্ধান্ত বদলানোর কোনও ব্যাপার নেই। দলের উঁচুতলার নেতারাই গোষ্ঠী তৈরি করে আমাদের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলছেন। তাতে দল বহিষ্কার করে দিলে কী করা যাবে!” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “আমরা কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যদের একাংশ দু’বছর ধরে পঞ্চায়েত সমিতিতে ঢুকতে পারিনি। দলকে বারবার জানিয়েছিলাম। তখন দল কী ব্যবস্থা নিয়েছিল?” আর এক সদস্য রঞ্জিত ঘোষ বলেন, “সভাপতি নির্বাচন নিয়ে দলের কোনও সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি। আনসারকে নির্বাচন করে আমরা কোনও অন্যায় করিনি। তাতে দল যদি আমাদের বহিষ্কার করতে চায়, করবে।” একই বক্তব্য আরও কয়েক জন সদস্যের। গোটা বিষয়টি নিয়ে দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ শুধু বলেন, “একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হবে। তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।”
এ দিন দুপুরে অবশ্য সভাপতি নির্বাচনে আনসারকে সমর্থন করা ‘ভুল’ হয়েছে জানিয়ে ব্লক অফিসে চিঠি দিয়েছেন দু’জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। শ্যামল মণ্ডল ও সুব্রত সাহা নামে ওই দুই সদস্য বলেন, “দলের নির্দেশ না জানার ফলে আমরা ভোটাভুটিতে যোগ দিয়ে ভুল করে ফেলেছি। তা সংশোধন করার সুযোগ দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।” রুনা এ দিন অভিযোগ করেন, “ভয় ও টাকার লোভ দেখিয়ে ভোট কেনা হয়েছে। পরিবারের সুরক্ষার জন্য ওই নেতাকে ভোট দিতে বাধ্য হয়েছেন সদস্যদের একাংশ। আস্তে-আস্তে তা প্রমাণ হয়ে যাবে।”
পঞ্চায়েত আইনে অবশ্য নতুন করে আর ‘সংশোধন’ করার সুযোগ নেই বলে জানাচ্ছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জেলা পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিক সুশান্ত ভট্টাচার্য বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে পদ থেকে সরানোর জন্য আড়াই বছর আগে অনাস্থা আনার কোনও উপায় নেই।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “২০১৪ সালের পঞ্চায়েতের সংশোধনী আইন অনুযায়ী প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি কিংবা জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতির বিরুদ্ধে আড়াই বছর আগে অনাস্থা আনা যাবে না। তবে কর্মাধ্যক্ষদের বিরুদ্ধে এক বছর পরে অনাস্থা আনা যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy