জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসছেন যুব তৃণমূল নেতা সৈকত চট্টোপাধ্যায়। জলপাইগুড়ির আদালত চত্বরে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
দুই মামলাতেই পুলিশকর্মীরা আক্রান্ত। দু’টিতেই জামিন হয়েছে অভিযুক্তদের। বুধবার দক্ষিণবঙ্গের বীরভূম এবং উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির এই দুই মামলায় পুলিশের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ৭ নভেম্বর সিউড়িতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কাছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছিলেন মীর নজরুল আলি নামে এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর। সেই সময় তিন যুবক তাঁকে হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। জাভেদ আনসারি নামে তাদের এক জনকে ওই দিনই ধরে পুলিশ। ওই যুবক পরদিনই জামিন পান। এ দিন সেই জামিনের বিরোধিতা করে জেলা জজের কাছে আবেদন জানান সরকারি কৌঁসুলি রণজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “প্রকাশ্যে এক কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে হেনস্থা করার পরে যদি সহজে কেউ ছাড়া পায়, তা হলে সমাজের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছয়। সেই অবস্থান থেকেই পুলিশ সুপারের নির্দেশ মতো এই আবেদন করা হয়েছে।” ওই আবেদনের শুনানি হবে ৩ ডিসেম্বর।
যে বীরভূমে থানায় ঢুকে পুলিশ পেটানোয় অভিযুক্ত যুব তৃণমূল নেতা সুদীপ্ত ঘোষ বা পুলিশকে ‘বোম’ মারতে বলা জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এখনও গ্রেফতার হননি, সেখানে পুলিশ সুপারের এ বারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, “পুলিশ সুপার যদি এ বার ভুল বার্তা নিয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন, তা হলে অনুব্রত বা সুদীপ্তরা কি শাসক দলের নেতা বলে ছাড় পেয়ে গেলেন? ওঁদের ক্ষেত্রে কী বার্তা গিয়েছে সমাজের কাছে?”
বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার কাছে এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি। তিনি ফোন ধরেননি, জবাব দেননি এসএমএসের। তবে জেলার এক পুলিশ-কর্তা বলেন, “পুলিশ যদি চাইত, সুদীপ্ত ঘোষের ক্ষেত্রে লঘু ধারায় মামলা করতে পারত। তিনি জামিনও পেতেন। পুলিশ তা করেনি। তাই উনি জামিনও পাননি। তবে তাঁকে ধরা যায়নি, সেটা দুর্ভাগ্যজনক।”
গত ১৭ জুলাই জলপাইগুড়ি শহরে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করানো নিয়ে গোলমালের সময়ে ট্রাফিক কনস্টেবল নৃপেন পালচৌধুরীকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে যুব তৃণমূল নেতা সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। জলপাইগুড়ি আদালতে এ দিনই আত্মসমর্পণ করে জামিন পান তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৈকত। গত দু’দিন ধরে তিনি দাবি করছিলেন, কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। তাঁর দলের নেতা তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেছিলেন, ‘সৈকত জামিন পেয়েছেন’। তা হলে এ দিন আত্মসমর্পণ করে জামিন কেন? সৈকত ১৮০ ডিগ্রি অবস্থান বদলে দাবি করেন, “আমি বলেছিলাম, জামিনের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি।” শিলিগুড়িতে অভিষেককে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে বিমানবন্দরের দিকে রওনা হন।
তবে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী বিদ্যুত্ ঘোষের বক্তব্য, সৈকতের বিরুদ্ধে প্রথমে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করেছিল পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়। বিধি অনুযায়ী, জামিন যোগ্য ধারায় মামলা শুরু করার পরে জামিন অযোগ্য ধারা যুক্ত করা হলে অভিযুক্তকে তা লিখিত জানানোর কথা পুলিশের। বিদ্যুত্বাবু বলেন, “আমার মক্কেলকে পুলিশ তেমন কিছু জানায়নি। আমরা জেনেছি, পুলিশ এ দিনই আদালতে মামলার চার্জশিট জমা দিয়েছে। তাই সৈকত এ দিন আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন।” সরকারি আইনজীবী শান্তা চট্টোপাধ্যায় জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করলেও জলপাইগুড়ির মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক শান্তনু দত্ত এক হাজার টাকার ‘বন্ড’-এ জামিনের আর্জি মঞ্জুর করেন।
পুলিশ কেন সৈকতকে জামিন অযোগ্য ধারার বিষয়টি জানায়নি প্রশ্ন করা হলে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “আমরা চার্জশিট দিয়ে দিয়েছি। এখন এ সব প্রশ্ন তোলার মানে হয় না।” পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন জমা দেওয়া চার্জশিটে সৈকতের বিরুদ্ধে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী নৃপেন পালচৌধুরীকে চড় মারার অভিযোগ আনা হয়েছে। সে জন্য সাক্ষ্যপ্রমাণও রয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তার পরেও সৈকত জামিন পাওয়ায় পুলিশের নিচুতলার একাংশে হতাশা দেখা দিয়েছে। অভিযোগকারী পুলিশকর্মীকে আদালতে কোনও বিচারকের সামনে হাজির করিয়ে গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়নি কেন সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁদের অনেকে। তাড়হুড়ো করে চার্জশিট পেশ করতে গিয়ে মামলা লঘু করে দেওয়া হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। তবে পুলিশ সুপারের দাবি, “চার্জশিট দিতে তাড়াহুড়ো বা মামলা লঘু করার প্রশ্ন ওঠে না।”
সৈকত এ দিন জামিন পাওয়ায় হতাশ অভিযোগকারী নৃপেনবাবু। তিনি মন্তব্য না করলেও তাঁর স্ত্রী বলেন, “আগে ভাবতাম, পুলিশের চাকরি করলে বোধ হয় কোনও ভয় নেই। এখন তো দেখছি, পুলিশেরই নিরাপত্তা নেই! বেআইনি কাজ করে যদি কেউ ছাড় পান, তা হলে পুলিশ আইন রক্ষার কাজের মনোবল পাবে বলে মনে হয় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy