মাত্র এক দিনের জন্য জরুরি অধিবেশন ডেকেও ল্যাজেগোবরে হচ্ছে সরকার পক্ষ!
কৃষি বিপণনের বাজার খুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তাবিত বিল সিলেক্ট কমিটি থেকে ফিরিয়ে এনে বিধানসভায় পাশ করানোই এ বারের ঝটিতি অধিবেশনের মুখ্য উদ্দেশ্য। সিলেক্ট কমিটিতে গেলেও বিলের উপরে বিরোধীদের দেওয়া সংশোধনী গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেই পরিষদীয় সূত্রের খবর। অথচ সরকার পক্ষ নিজেই গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী দিচ্ছে! বিরোধীদের কোনও প্রস্তাব বা দাবি না মেনে যে বিল সরকার প্রায় আগের চেহারাতেই পাশ করাতে চায়, তাকে আর সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দরকার ছিল কি প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। তাদের আরও প্রশ্ন, নির্দিষ্ট পদ্ধতি না মেনে বিল পাশ করানোর এত তাড়াই বা কীসের?
বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন শেষ হয়েছে মাত্র এক পক্ষ কাল আগে। অধিবেশনের শেষ দিন বিধানসভায় পেশ করেও সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল কৃষিপণ্য বিপণন (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধনী বিল। যে বিলের মূল কথা, জেলায় জেলায় বেসরকারি উদ্যোগে কৃষি বাজার গড়া হবে। সেখানে চাষিদের কাছ থেকে পণ্য কেনা ও তার বিপণনে সরকারের কোনও ভূমিকা থাকবে না। বাজার তৈরির জমি কোথা থেকে আসবে বা রাজ্যের সামগ্রিক ভাবমূর্তির প্রেক্ষিতে বেসরকারি সংস্থাগুলি লগ্নি করতে রাজি হবে কি না, এই সব প্রশ্ন থাকলেও কৃষি সংস্কারের লক্ষ্য এই বিলের মধ্যে ছিল। তবু ১৪ ঘণ্টা আগে বিধায়কদের মধ্যে বিলি হওয়ায় বিল নিয়ে যথেষ্ট চর্চার সময় পাওয়া যায়নি, এই যুক্তিতে বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠায় সরকার। অথচ সিলেক্ট কমিটিতে সেই সরকার পক্ষই ভিন্ন মত শুনতে চায়নি, অভিযোগ বিরোধীদের।
গত সপ্তাহে দুর্গাপুরে তৃণমূলের কর্মী সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বলেছিলেন, সিলেক্ট কমিটি কৃষি বিপণনের বিলটি ছেড়ে দিলেই কাজ শুরু করা যাবে। সোমবার শহিদ মিনারে যুব তৃণমূলের সভা শেষেই তড়িঘড়ি বিধানসভায় বৈঠক করে শাসক দলের পরিষদীয় নেতৃত্ব ঠিক করেন, জরুরি অধিবেশন ডাকা হবে। এই সিদ্ধান্তের পরেই তাড়াহুড়ো শুরু হয় সিলেক্ট কমিটিতেও। বুধবারের মধ্যে কমিটির সদস্যদের সংশোধনী দিতে বলা হয়েছিল। বৃহস্পতিবারও কমিটির এক প্রস্ত বৈঠক হয়েছে। ঠিক হয়েছে, আজ, শুক্রবার কমিটি শেষ বারের মতো বসবে রিপোর্ট চূড়ান্ত করতে। এখনও পর্যন্ত যা আলোচনা হয়েছে, তাতে কংগ্রেস ও এসইউসি-র দেওয়া কোনও সংশোধনী গৃহীত হয়নি। তৃণমূলের দেওয়া তিনটি সংশোধনী মেনে নেওয়া হয়েছে। প্রধান বিরোধী পক্ষ ফ্রন্ট ঠিক করেছে, আজ তারা কমিটির রিপোর্টের উপরে নোট অব ডিসেন্ট দেবে। সোমবার যে হেতু অধিবেশন, তাই তার কার্যসূচি ঠিক করতে আজ বৈঠক ডাকা হয়েছে কার্য উপদেষ্টা কমিটিরও। কৃষি বিপণনের উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ একেবারে শিথিল করে বেসরকারি হাতে সব ছাড়ায় নীতিগত আপত্তি আছে বামেদের। কিন্তু তাদের আরও অভিযোগ, বিলটি প্রকৃতপক্ষে বেআইনি। কেন্দ্রীয় যে মডেল আইনের অনুসরণে এই বিল করার কথা ‘রিজন্স অ্যান্ড অবজেক্টিভ্স’ অংশে বলা হয়েছে, তা সংসদে পাশ হওয়া কোনও আইন নয়। কাজেই তার অনুসরণে কোনও বিলের ঘোষণার আইনত ভিত্তি নেই। বিলের ওই ‘রিজন্স অ্যান্ড অবজেক্টিভ্স’ অংশে কোনও সংশোধনী আনা যায় না বলেই বামেদের দাবি। অথচ বিপদ বুঝে সরকার পক্ষ সংশোধনী এনে ওই ২০০৩ সালের মডেল আইন প্রসঙ্গটিই বদলে ফেলতে চেয়েছে! এর আইনগত স্বীকৃতি থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সিলেক্ট কমিটির অন্দরে।
কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার আগে মন্তব্য করতে চাননি পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু। তবে সরকারের এক নেতার মন্তব্য, “বিরোধীদের নোট অব ডিসেন্ট পাওয়ার পরে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেওয়া যাবে।” এক বাম বিধায়কের বক্তব্য, “বেআইনি একটা বিল এনে কৃষিপণ্যের বাজারটা বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চাইছে সরকার!” আবার এসইউসি-র প্রশ্ন, ২০০৯ লোকসভা ও ২০১১-র বিধানসভা ভোটের আগে দলীয় ইস্তাহারে যা ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব, কী এমন হল যে, তার উল্টো দিকে হাঁটতে হচ্ছে তাঁদের? গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতেই কংগ্রেসের বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার প্রশ্ন, “বিলটি পাশ করানোর জন্য কি কোনও চাপ কাজ করছে? এই রকম তাড়াহুড়ো না করে শীতকালীন অধিবেশনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া যেত। আবার অধিবেশন যখন ডাকাই হল, ৭ দিন রেখে রাজ্যের আরও সমস্যা নিয়ে আলোচনার সুযোগ দেওয়া যেত!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy