নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের কাজ। সেটা তো তাদের করতেই হবে। সেই সঙ্গে এ বারের লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নতুন একটি বিশেষ কাজ দেওয়া হচ্ছে। নীরব রিগিং প্রতিরোধ। আপাত-শান্ত বুথের ভিতরে যদি নীরবে রিগিং চলে, সেটা ঠেকানোও এ বার ওই আধাসেনাদের দায়িত্ব।
নির্বাচন কমিশন ওই জওয়ানদের এই দায়িত্ব দিয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের নির্দেশ, রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কোনও অবস্থাতেই বসিয়ে রাখা যাবে না। সব জওয়ানকেই ভোটের কাজে লাগাতে হবে।
নীরব রিগিংয়ে আধাসেনারা নজর রাখবেন কী ভাবে?
কমিশন সূত্রের খবর, বুথের মুখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকে এমন ভাবে মোতায়েন করতে হবে, তিনি যেন বুথের ভিতরটা পরিষ্কার দেখতে পান। ভোটারদের সাহস জোগাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বিভিন্ন এলাকায় টহলদারির কাজে তো লাগাতেই হবে। তবে ভোটের দু’দিন আগে থেকে তাদের সরাসরি ব্যবহার করতে হবে ভোটকেন্দ্রে। বুথে ঢোকার মুখে এক জন আধাসেনা থাকবেন। অবাঞ্ছিত লোকজন যাতে বুথের ভিতরে ঢুকতে না-পারে, সেটা দেখাই হবে তাঁর প্রধান কাজ। বুথে কোনও ভোটার না-থাকলে কোনও নির্বাচনকর্মী বা পোলিং এজেন্ট কারও ভোট দিয়ে দিচ্ছেন কি না, সে-দিকেও নজর রাখবেন ওই জওয়ান।
বুথের ভিতরে যদি নীরবে রিগিং চলে বা তার চেষ্টা হয়, সেটা ঠেকানোও সেখানে মোতায়েন আধাসেনার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব বলে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। কোনও নির্বাচনকর্মী বা পোলিং এজেন্ট অঙ্গভঙ্গি করেও যাতে কাউকে ভয় দেখাতে না-পারেন, তা-ও দেখবেন ওই জওয়ান। তবে বুথের ভিতরে যে-ঘটনাই ঘটুক, ওই জওয়ান ভোটগ্রহণে বাধা দেবেন না। তিনি তাঁর কম্যান্ডারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষক ও রিটার্নিং অফিসারকে সব জানাবেন। যদি প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান দেওয়া সম্ভব না-হয়, সে-ক্ষেত্রে এক ভোটকেন্দ্রে থাকা জওয়ান পাশের অন্যান্য বুথে গিয়ে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখবেন।
এই প্রসঙ্গেই সব আধাসেনাকে কাজ দেওয়ার কথা তুলেছে কমিশন। তারা জানিয়েছে, লোকসভা ও বিধানসভার বিভিন্ন ভোটে দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর যে-সব জওয়ানকে নানা রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল, অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের বসিয়ে রাখা হয়েছে (রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে)। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও যে পশ্চিমবঙ্গে এমনটাই করা হয়েছিল, তা-ও জেনেছে কমিশন।
কিন্তু ভোটারদের আরও বেশি করে বুথমুখী করাটাই কমিশনের লক্ষ্য। অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাবে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে চান না। সেই জন্যই আধাসেনা নামিয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রাখলে সেই কাজটা হয় না। মানুষকে বুথে টেনে আনতে কমিশন এ বার খুবই তৎপর। বিভিন্ন ভাবে প্রচার চালাচ্ছে তারা। নিরাপত্তার উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই যে অনেক বেশি ভোটার বুথমুখী হবেন, সেই ব্যাপারে কমিশন আশাবাদী। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নির্বাচনী নিরাপত্তায় মোতায়েন দেখলে ভোটারদের আস্থা বাড়বে বলে মনে করছে তারা। সেই জন্যই আধাসেনার সদ্ব্যবহার চাইছে। কমিশন এ বার আগেভাগেই জানিয়ে দিল, সব জওয়ানকেই নির্বাচনের কাজে লাগাতে হবে। কোনও কারণে যদি তাদের কোনও অংশকে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রাখতেই হয়, সে-ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমতি লাগবে।
লোকসভা ভোটে অনেক বেশি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করার জন্য নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে বিধিনিয়মে একটু রদবদল করার অনুমতি চেয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সন্ত্রাস-কবলিত অঞ্চলের কোনও এলাকায় এক সেকশন (সাত জন)-এর কম কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করা যায় না। আর যদি এলাকাটি সন্ত্রাস-কবলিত না-হয়, সেখানে আধ সেকশন বাহিনী মোতায়েন করা যায়। আধাসেনাকে অনেক বেশি এলাকায় কাজে লাগানোর জন্য কমিশন এ বার শান্তিপূর্ণ এলাকায় আধ সেকশনেরও কম জওয়ান মোতায়েনের অনুমতি চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy