হ্যাপি-খুনে অভিযুক্ত নিজামুদ্দিন। —নিজস্ব চিত্র।
প্রেসিডেন্সি জেলে হ্যাপি সিংহের হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত শেখ নিজামুদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে ভুগছে বলে অভিযোগ। মানসিক বিকারগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও তার যথাযথ চিকিৎসা হয়নি বলে অভিযোগ তুললেন তার বাড়ির লোকজন। চাইলেন তদন্তও। তাঁদের প্রশ্ন, জেলে নিজামকে আলাদা রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি কেন?
ওই অভিযুক্তের পরিবারের অভিযোগ, ২৪ বছরের নিজাম চার বছর ধরে জেলে আছে। জেলেই তার মানসিক অসুস্থতা ধরা পড়ে। কিন্তু জেলে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তার চিকিৎসা করা হয়নি। এমনকী তাকে ঠিকমতো পানীয় জল এবং খাবার পর্যন্ত দেওয়া হতো না। কেন তাকে মানসিক হাসপাতালে না-রেখে জেলের মধ্যে অন্য বন্দিদের সঙ্গে রাখা হয়েছিল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন নিজামের বাবা ও ভাইয়েরা।
২০০৫ সালের ৮ জানুয়ারি গোলাবাড়ি থানার পিলখানা এলাকার কারবালা মাঠে খুন হন হাসিবুল কায়ুম নামে এলাকার এক যুবক। ক্ষুর দিয়ে গলা কেটে তাঁকে খুন করার অভিযোগে নিজামুদ্দিন-সহ তিন যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তিন মাস পরে তিন জনেই জামিনে মুক্তি পেয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ওই খুনের মামলায় নিজামুদ্দিন ছাড়া বাকি দু’জন বেকসুর খালাস পান। নিজামের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তার পর থেকেই ওই যুবকের ঠাঁই হয় প্রেসিডেন্সি জেলে।
১৬ পিলখানা লেনের ঘিঞ্জি গলির ভিতরে একটা চারতলা বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকেন নিজামুদ্দিনের বাবা আব্দুল কাদির। ছোট ছেলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পর থেকে তিনি এতটাই অসুস্থ যে, চলাফেরা করার শক্তিও নেই। মঙ্গলবার তিনি জানান, টিভি-র খবরে হ্যাপি-হত্যার কথা জানতে পারেন তাঁরা। তার পর থেকেই কার্যত নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে পরিবারের সকলের।
কাদিরের দাবি, “আমার ছেলেকে ঝুটমুট খুনের মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। ও তখন নাবালক ছিল। কিন্তু আমরা ওর বয়সের প্রমাণ জোগাড় করতে পারিনি। তাই জুভেনাইল কোর্টে ওর বিচার হয়নি।” কাদির জানান, টাকার অভাবে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করতে পারেননি তাঁরা। “এই অভিমানেই ছেলে আমাদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। জেলে দেখা করতে যেতাম। কিন্তু ও দেখা করত না। এর পরে ধীরে ধীরে ওর মাথাটাই গোলমাল হয়ে যায়,” বললেন বাবা।
কাদির আগে এলাকার একটি কারখানায় চাকরি করতেন। কিন্তু গত ৩০ বছর ধরে তিনি সম্পূর্ণ বেকার। স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বছর দশেক আগে। সাত মেয়ে ও তিন ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তার উপরে বাড়ির ছোট ছেলে সরাসরি খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়ায় গোটা সংসারে কার্যত অন্ধকার নেমে এসেছিল। কাদির বলেন, “২০০৯ সালের ২৯ মে হাওড়ার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট ছেলেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু টাকার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করতে পারিনি। ছেলের জামিনের জন্য ধার করে এক জনকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। সে-ও বেইমানি করেছে। কিছুই করেনি।”
ছেলের কথা ভেবে ভেবে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন গৃহকর্তা। হাঁটাচলাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জেলে যাতায়াত করছিলেন নিজামের দাদা-দিদিরাই। কী ভাবে ছোট ভাইকে মুক্ত করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়, নিজেরা উপার্জন করে সেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যে এই ঘটনা ঘটে যাওয়ায় সব আশা শেষ বলে মনে করছেন তাঁরা। এখন কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই।
নিজামুদ্দিনের এক দিদি বলেন, “জানি না, ভাইকে আর কোনও দিন জেলের বাইরে আনতে পারব কি না। কিন্তু কেন ভাইয়ের যথাযথ চিকিৎসা করা হল না, তার তদন্তের দাবি জানিয়ে সব জায়গায় চিঠি দেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy