Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
উত্তরবঙ্গ পরিবহণ

ছাঁটাই অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী পদে চাকরি দেওয়ার নির্দেশ

কাজ থেকে ছাঁটাই হওয়ার সময় তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন অস্থায়ী কর্মী। রাজ্য শ্রম ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দিয়েছে, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম বা এনবিএসটিসি-র ওই ৩৫ জনকে চাকরিতে ফিরিয়ে নিতে হবে। এবং শুধু ফিরিয়ে নিলেই হবে না।

অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৮
Share: Save:

কাজ থেকে ছাঁটাই হওয়ার সময় তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন অস্থায়ী কর্মী। রাজ্য শ্রম ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দিয়েছে, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম বা এনবিএসটিসি-র ওই ৩৫ জনকে চাকরিতে ফিরিয়ে নিতে হবে। এবং শুধু ফিরিয়ে নিলেই হবে না। তাঁদের নিয়োগ করতে হবে স্থায়ী কর্মী হিসেবে। পরিবহণ দফতর অবশ্য ওই নির্দেশ মানবে না বলে সরকারি সূত্রের খবর। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীঘ্রই উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য তারা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।

এনবিএসটিসি-কর্তৃপক্ষ ১৯৮৯ সাল থেকে দফায় দফায় অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করেছেন। বাম আমলের শেষ দিকে সেই অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ৯০০-র কাছাকাছি পৌঁছে যায়। রাজ্যে পালাবদলের পরে নতুন সরকার ২০১২ সালের জানুয়ারিতে সব অস্থায়ী কর্মীকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবাদে ছাঁটাই কর্মীরা ‘সংগ্রামী শ্রমিক ঐক্য’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করে আন্দোলন শুরু করে। সেই সঙ্গেই সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শ্রম ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হন ৩৫ জন কর্মী। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি ওই রায় ঘোষণা করেছে।

শ্রম ট্রাইব্যুনালের বিচারক মধুসূদন দত্তের পর্যবেক্ষণ, ওই কর্মীরা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমে কাজ করেছেন। তাঁরা হাজিরা খাতায় সই করতেন, স্থায়ী কর্মীদের মতো তাঁদের কাছেও নিগমের দেওয়া পরিচয়পত্র ছিল। তার পরেই বিচারক নির্দেশ দেন, “যত শীঘ্র সম্ভব ৩৫ জনকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করতে হবে এনবিএসটিসি-কে।”

কিন্তু ছাঁটাই তো হয়েছেন ৯০০ জন। মাত্র ৩৫ জন কর্মী শ্রম ট্রাইব্যুনালে আবেদন করলেন কেন?

সংগ্রামী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের এক নেতার ব্যাখ্যা, কয়েক জনকে দিয়ে মামলা করিয়ে তাঁরা ট্রাইব্যুনালের রায় দেখে নিতে চেয়েছিলেন। সেটা ইতিবাচক হওয়ায় তাঁরা আশা করছেন, সরকার ছাঁটাই হওয়া ৯০০ জনকেই স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করবে। নইলে অন্য কর্মীরাও মামলার পথে যাবেন বলে জানান ওই নেতা। সংগঠনের নেত্রী বর্ণালী মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই সব কর্মী আদতে এনবিএসটিসি-র স্থায়ী কর্মীর মতোই ছিলেন। তাই সরকারের উচিত ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মেনে নেওয়া।”

পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করার কথা ভাবছেন। তাঁর দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, এনবিএসটিসি-তে এমনিতেই নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা। ট্রাইব্যুনাল ৩৫ জনের ক্ষেত্রে রায় দিলেও তাদের নির্দেশ মানতে গেলে ৯০০ জনকেই স্থায়ী চাকরি দিতে হবে। তাঁদের বেতন খাতে মাসে অন্তত এক কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। “কোথা থেকে এই টাকা আসবে,” প্রশ্ন ওই কর্তার।

নিগম সূত্রের খবর, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রথম দু’বছর সংস্থার স্থায়ী কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ)-এর টাকা কার্যত জমাই পড়েনি। সুদ-সহ এর পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে গত বছর থেকে পিএফের টাকা জমা পড়ছে। তাই কর্মীরা মোট বেতনের ৭৫ শতাংশ হাতে পাচ্ছেন। তাঁদের বকেয়া বেতনের পরিমাণও ৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই অবস্থায় ৯০০ ছাঁটাই কর্মীকে স্থায়ী চাকরি দিতে গেলে নিগম ঋণের বোঝায় ডুবে যাবে বলেই মনে করছেন পরিবহণকর্তারা। সেই জন্যই উচ্চ আদালতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান নিগমের এক কর্তা।

অন্য বিষয়গুলি:

nbstc casual workers labour tribunal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE