নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনায় সিবিআইয়ের আর্জি মেনে ছয় পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরুর অনুমতি দেয়নি রাজ্য সরকার। পরিবর্তে তাঁদের বিরুদ্ধে নিজেরাই বিভাগীয় তদন্ত করবে বলে জানিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু নবান্ন সূত্রের খবর, সেই তদন্ত এখনও শুরু হয়নি। আপাতত শুরু হওয়ার মতো ইঙ্গিতও নেই।
২০০৭-এর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনার পরদিনই হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই মামলায় সিবিআই যে খসড়া চার্জশিট দিয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সূত্রের বক্তব্য, সেখানে ১৫৩ জন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়ে থাকার অভিযোগ আনা হলেও তৎকালীন শাসক দলের কোনও নেতা সম্পর্কে কোনও তথ্যই দেয়নি সিবিআই। পরবর্তী সময়ে ওই গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশও করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারেরা হুকুম তামিল করেছিলেন মাত্র। তখন যাঁরা সরকার চালাতেন, সেই নেতাদের ছাড় দিয়ে শুধু পুলিশকে অভিযুক্ত করার বিষয়টি অযৌক্তিক বলেই মনে করছে বর্তমান প্রশাসন। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী নন বলে মত নবান্নের। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের দোষ কী, তা সিবিআইয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ওরা জানায়নি। ফলে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়নি।”
নবান্ন সূত্রের খবর, যে ছয় পুলিশকর্তার নামে রিপোর্ট দিয়েছিল সিবিআই, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হবে না, তার ব্যাখ্যা (শো-কজ) চেয়েছিল স্বরাষ্ট্র দফতর। জবাবে পুলিশকর্তাদের অনেকেই পাল্টা চিঠি দিয়ে সিবিআইয়ের আনা অভিযোগের খুঁটিনাটি জানতে চান সরকারের কাছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “অভিযুক্তদের দাবি সিবিআইকে জানানো হয়। কিন্তু তারা বলেছে, ওই সব গোপনীয় তথ্য কোনও মতেই অভিযুক্তদের জানানো যাবে না।” সিবিআইয়ের বক্তব্য, তারা চার্জ গঠনের অনুমতি পেলে তা সরাসরি আদালতে পেশ করা হবে। অভিযুক্তদের আলাদা করে কোনও তথ্য জানানো যাবে না।
এর পরেই বিভাগীয় তদন্ত শুরুর ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “বিভাগীয় তদন্তে অভিযুক্তকে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ জানাতে হয়। তার পরেই তদন্ত শুরু হয়। সিবিআই যে হেতু গোপনীয়তার কথা বলে কোনও তথ্য অভিযুক্তদের জানাতে রাজি নয়, তাই আমরাও এগোতে পারছি না।” সিবিআইয়ের পাল্টা বক্তব্য, রাজ্যের কাছে খসড়া চার্জশিট পাঠানো হয়েছে। তারা চাইলে সেখান থেকেই পুলিশকর্তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলির গুরুত্ব বিচার করে ব্যবস্থা নিতে পারে। সিবিআই কখনও কোনও রাজ্যের বিভাগীয় তদন্তের জন্য অভিযুক্তদের আগাম তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে দিতে পারে না। তা ছাড়া নন্দীগ্রামের তদন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে চলছে। ফলে সিবিআই কেবল আদালতের কাছেই দায়বদ্ধ।
নবান্ন সূত্রের খবর: নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের দু’টি মামলায় চার্জশিট পেশ করতে চেয়ে বছর খানেক আগে সরকারের কাছে খসড়া চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। তাতে ছয় পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে নিয়ম না মেনে গুলি চালানোর অভিযোগ আনা হয়। কারও বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগও পেয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এবং তার ভিত্তিতেই অরুণ গুপ্ত, গঞ্জি অনিল শ্রীনিবাসন, সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবাশিস বড়াল নামে চার আইপিএস এবং নন্দীগ্রাম ও খেজুরি থানার তৎকালীন ওসি শেখর রায় ও অমিত হাতির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরুর অনুমতি চেয়েছিল সিবিআই।
সিবিআইয়ের আর্জি মেনে সরকার সেই অনুমতি তো দেয়ইনি, উল্টে নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভূমিকা খতিয়ে দেখে নতুন চার্জশিট পেশের অনুরোধ করে প্রশাসন। জবাবে সিবিআই জানায়, গুলি চালানোর ঘটনায় বুদ্ধবাবুর জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ তারা পায়নি। এর পরেই রাজ্য চিঠি লিখে সিবিআইকে জানিয়ে দেয়, ছয় পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরুর অনুমতি দেবে না সরকার। স্বরাষ্ট্র দফতরই বিভাগীয় তদন্ত করবে। কিন্তু তা-ও শুরু হয়নি এখনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy