এসপি-র ঘরে ঢুকছেন জরিনা বিবি। সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা এবং কথার পরেও বদলাল না পরিস্থিতি!
সরাসরি বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াকে অভিযোগ জানাতে পেরে মঙ্গলবার অনেকটাই মনোবল পেয়েছিলেন লাভপুরের তিন নিহত সিপিএম সমর্থকের মা জরিনা বিবি। তাঁর দাবি, তাঁর কথা শুনে সরাসরি লাভপুর থানায় ফোন করে এসপি তাঁর পরিবারকে সাহায্য করতেও নির্দেশ দেন। কিন্তু পরিবারটির অভিযোগ, এসপি-র নির্দেশ থাকলেও ‘মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন’ জানিয়ে সাহায্য করেননি সংশ্লিষ্ট থানার ওসি। মঙ্গলবার দিনের শেষে তাই ক্ষুব্ধ জরিনা।
লাভপুরের নবগ্রামের আদি বাসিন্দা জরিনার পরিবারের দাবি, খুনের মামলায় আদালতে চার্জশিট পেশ হয়ে যাওয়ার পরেও অভিযুক্তদের অনেককেই পুলিশ এখনও ধরেনি। তারাই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শনিবার লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের অনুগামী বলে পরিচিত যাদব শেখ (জরিনার তিন ছেলের হত্যাকাণ্ডেও অভিযুক্ত) দলবল নিয়ে এসে হুমকি দিয়ে যায়। ওই হুমকির পরে অভিযোগ জানাতে রবিবারই জরিনারা এসপি-র সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু সে দিন দফতরে এসপি ছিলেন না। এ দিন সিপিএমের স্থানীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ জরিনা বিবি পুলিশ সুপারের দফতরে পৌঁছন। সঙ্গে পরিবারের অন্যরাও ছিলেন। এসপি প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে জরিনাদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে জরিনা সাংবাদিকদের বলেন, “এসপি সাহেবকে জানিয়েছি, তিন ছেলেকে হারিয়েছি। যদি এখনও অভিযুক্তদের ধরার ব্যবস্থা না করেন, তা হলে আমার বাকি ছেলেদেরও ওরা মেরে ফেলবে।” জরিনার ছেলে আনারুল শেখ জানান, সব শুনে এসপি লাভপুর থানায় ফোন করেন। জরিনারা যখন থানায় যাবেন, তখন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরিবারটির নিরাপত্তায় ঘাটতি থাকলে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন পুলিশ সুপার। এসপি নিজেও বলেন, “জরিনাবিবিরা আমার কাছে কিছু অভিযোগ করেছেন। অসুবিধা হলে আমি তাঁদের লাভপুর থানায় যোগাযোগ করতে বলেছি।”
যদিও আনারুলের অভিযোগ, “মাকে বাড়িতে ফিরিয়েই এসপি-র কথামতো আমরা কয়েকজন লাভপুর থানায় যাই। কিন্তু ওসি জানিয়ে দেন, যেহেতু হাইকোর্টে মামলাটি বিচারাধীন, তাই এখনই অভিযুক্তদের ব্যাপারে কিছু করা যাবে না।”
ঘটনা হল, জরিনার তিন ছেলেকে খুনের মূল মামলায় বোলপুর আদালতে চার্জশিট জমা পড়েছে। সেই মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন নয়। হাইকোর্টে যেটি বিচারাধীন, সেটি ঘটনার সিবিআই-তদন্ত চেয়ে জরিনাবিবিদেরই করা একটি মামলা। প্রশ্ন উঠছে, সে ক্ষেত্রে খুনের মামলার চার্জশিটে নাম থাকা অভিযুক্তদের ধরতে বাধা কোথায়? লাভপুর থানার ওসি দেবাশিস ঘোষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সরাসরি জবাব না দিয়ে এসপি-র মন্তব্য, “পরে থানায় কী হয়েছে আমার জানা নেই। তবে, আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনায় ক্ষুব্ধ জরিনা বলছেন, “দরকার হলে ফের এসপি সাহেবের কাছে দরবার করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy