চাকরির দাবিতে মানবশৃঙ্খল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের। সোমবার ধর্মতলা চত্বরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগে সোমবার সকালে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন কমিশনের সহ-সচিব অমিতেশ বিশ্বাস। সন্ধ্যায় জানা গেল, তাঁর উপরে নেমে এসেছে বদলির খাঁড়া।
কমিশনের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্যই ওই সহ-সচিবকে বদলি করা হল কি না, উঠছে সেই প্রশ্ন। কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি ঠিকই। তবে তিনি বলেন, “অমিতেশবাবু কমিশনের নিয়ম ভেঙেছেন। চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়াই সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন। ওঁকে রিলিজ করে দিয়েছি।”
২০১২ সালে এসএসসি-র নেওয়া পরীক্ষার মেধা-তালিকায় দুর্নীতি নিয়ে বেশ কিছু প্রার্থী অনেক দিন আগেই অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদেরও নালিশ, যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। তালিকা মেনে নিয়োগের দাবিতে তাঁরা লাগাতার ধর্না দিয়েছেন। অনশন করেছেন। এমনকী ভিক্ষাপাত্র নিয়ে পথেও নেমেছেন। এ বার খাস কমিশনের এক বড় কর্তা বিষয়টি নিয়ে সরব হলেন। সহ-সচিব অমিতেশবাবু এ দিনই দুর্নীতির অভিযোগ জানান। তাঁর অভিযোগ, তুলনায় বেশি নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের টপকে মেধা-তালিকায় পিছনে থাকা অনেক প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এখানেই থামেননি সহ-সচিব। তিনি বলেন, “১৫-২০ হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যতের কথা না-ভেবে কেউ কেউ নিজেদের চেয়ার বাঁচাতে চাইছেন। তাই অনিয়মের কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হয় না।”
ওই আধিকারিকের ক্ষোভ, “আমি তো শিক্ষামন্ত্রী কিংবা মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাতে পারব না। তবে আমার বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রী এই দুর্নীতির কথা জানতে পারলে ঠিকই ব্যবস্থা নেওয়া হতো।”
কিন্তু সরকারি চাকরি করে তিনি কি আদৌ এ ভাবে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে পারেন? তাঁর চাকরির উপরে এর প্রভাব পড়বে না?
“আমাকে সংসার চালাতে হয় না। আমার স্ত্রী চাকরি করেন। সংসারের দায়িত্ব নিতে তিনি সক্ষম। আমি সরকারি চাকুরে হিসেবে আইন রক্ষা করতে বাধ্য। তা যখন করা যাচ্ছে না, তখন আমি জনস্বার্থের মামলা করব,” পরিষ্কার জবাব অমিতেশবাবুর।
কমিশন অবশ্য অমিতেশবাবুর এই আচরণকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না। এসএসসি-প্রধান সুবীরেশবাবু জানান, কমিশনের তরফে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে পারেন শুধু চেয়ারম্যান। অন্য কাউকে তা করতে হলে চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে হয়। তার তোয়াক্কা না-করেই অমিতেশবাবু কী ভাবে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। চেয়ারম্যান বলেন, “সরকারি নোটিস জারি করে অমিতেশবাবুকে কর্মিবর্গ দফতরে বদলি করা হয়েছে। ওঁকে রিলিজও করে দেওয়া হয়েছে।” সুবীরেশবাবুর দাবি, আজ, মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি প্রমাণ করে দেবেন, এসএসসি-র পরীক্ষা কিংবা চাকরির সুপারিশের পদ্ধতিতে কোনও রকম দুর্নীতিই হয়নি।
এসএসসি-র যে-পরীক্ষা নিয়ে অভিযোগ, সেটি হয়েছিল কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের আমলে। তার ফল প্রকাশিত হয় তাঁর জমানাতেই। তিনি অবশ্য জানান, পরীক্ষা এবং তার ফলাফলে কোনও দুর্নীতি করা হয়নি। নিয়ম ভেঙে একটিও চাকরির সুপারিশ করা হয়নি। প্রয়োজনে তিনি তা প্রমাণ করে দিতে পারেন বলেও দাবি চিত্তরঞ্জনবাবুর।
এসএসসি-র অভ্যন্তরীণ কাজিয়ার বিষয়টিকে লুফে নিতে দেরি করেনি বিরোধী রাজনৈতিক শিবির। পরীক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে অমিতেশবাবুর অভিযোগকে হাতিয়ার করে এ দিনই সরব হয়েছে সিপিএম। ওই দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু কমিশনের কর্তাদের অপসারণ এবং ওই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য বিস্তারিত ভাবে না-জেনে এই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
ওই পরীক্ষার মেধা-তালিকায় নাম থাকা যে-সব প্রার্থী চাকরি পাননি, তাঁরা বঞ্চনার অভিযোগ জানিয়ে এ দিন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের দ্বারস্থ হন। তাঁদের দাবি, রাজ্যপাল এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ দিনই আবার চালু হওয়ার আগেই সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির শিক্ষকদের সাধারণ বদলির প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছে এসএসসি। কমিশন-কর্তৃপক্ষের দাবি, আরও বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বদলির সুযোগ দিতেই আপাতত বিষয়টি স্থগিত রাখার এই সিদ্ধান্ত। সোমবার ওয়েবসাইটে নোটিস দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে এসএসসি।
কোন স্কুলে কোন বিষয়ের কত পদ শূন্য আছে, তালিকা প্রকাশ করে গত ২৯ মার্চ তা জানায় এসএসসি। ছ’দিনের মাথায় একটি নতুন তালিকা প্রকাশ করে কমিশন এবং সেখানে শূন্য পদের সংখ্যা অনেক কমে যায়। এ বার এসএসসি প্রক্রিয়াটিই স্থগিত করে দেওয়ায় শিক্ষকদের অনেকেই বিভ্রান্ত। তবে সুবীরেশবাবুর আশ্বাস, “আরও বেশি শূন্য পদ তালিকায় যুক্ত করার জন্যই আপাতত প্রক্রিয়াটি স্থগিত রাখা হচ্ছে। এতে অনেক বেশি শিক্ষক বদলির সুযোগ পাবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy