Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

আসিফের নিশানায় খোদ মমতা

ঠারেঠোরে বলেছেন আগে। দাবি করেছিলেন, সারদার টাকা নেননি এমন নেতা বা নেত্রী খুঁজে পাওয়া যাবে না। একাধিক বার তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় এবং তাঁর বিধায়ক-পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের নামও। এ বার কিন্তু প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খানের নিশানায় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীই। সোমবার এবিপি-আনন্দের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছেন আসিফ। বলেছেন, “কেউ যদি বলেন যে, পয়লা বৈশাখের আগে কিছু জানতেন না তা হলে বাংলায় তাঁর চেয়ে বড় মিথ্যেবাদী আর নেই।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০১
Share: Save:

ঠারেঠোরে বলেছেন আগে। দাবি করেছিলেন, সারদার টাকা নেননি এমন নেতা বা নেত্রী খুঁজে পাওয়া যাবে না।

একাধিক বার তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় এবং তাঁর বিধায়ক-পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের নামও।

এ বার কিন্তু প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খানের নিশানায় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীই।

সোমবার এবিপি-আনন্দের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছেন আসিফ। বলেছেন, “কেউ যদি বলেন যে, পয়লা বৈশাখের আগে কিছু জানতেন না তা হলে বাংলায় তাঁর চেয়ে বড় মিথ্যেবাদী আর নেই।”

গত বছর ১৫ এপ্রিল, পয়লা বৈশাখের দিনই প্রকাশ্যে এসেছিল সারদা সাম্রাজ্যের পতন। ওই দিন সকালবেলায় সারদার একটি চ্যানেলের প্রভাতী অনুষ্ঠানে বিষয়টি সামনে আসে। তার পরে ক্রমশ ওই বৃহৎ কেলেঙ্কারি একটু একটু করে স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরে দাবি করেছিলেন, ২০১৩-র ১৫ এপ্রিলের আগে তিনি সারদা কেলেঙ্কারি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তাঁর সেই মন্তব্যকে নস্যাৎ করেই এ দিন বোমা ফাটিয়েছেন আসিফ।

কীসের ভিত্তিতে এ সব বলছেন আসিফ? আসিফের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী যদি পয়লা বৈশাখ সকালের আগে কিছু না-ই জানতেন, তা হলে সেদিনই দুপুরে মুকুল রায়ের নেতৃত্বে সারদার সংবাদমাধ্যম বাঁচানোর জন্য নির্দেশ দিলেন কেন? আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখলেন না কেন? আসিফের কথায়, “পয়লা বৈশাখ মমতা খবর পেলেন আর সঙ্গে সঙ্গে মুকুল রায়কে বললেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে? ওই দিনই মুকুল রায় টাকা নিয়ে হাজির হয়ে গেলেন, কলম-এর দখল নিলেন? এমন কখনও হয়? লিগাল ব্যাপার কিছু দেখলেন না?” আসিফের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “অপরাধী যেই হোক, আমি বা মুখ্যমন্ত্রী, সে ধরা পড়ুক।”

ওই ১৫ এপ্রিলের দুপুরেই সুদীপ্তর মালিকানাধীন ‘কলম’ পত্রিকার দফতরে মুকুল, শুভ্রাংশু, রাজ্যসভার দুই সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান ও নাদিমুল হক বৈঠক করেছিলেন। সেখানে আসিফও উপস্থিত ছিলেন। এ তথ্য আসিফ আগেই সিবিআইকে দিয়েছেন। ওই বৈঠকের ছবি সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।

সিবিআই সূত্রের খবর, গত বছর ৯ এপ্রিল সুদীপ্ত গা-ঢাকা দেওয়ার পরেই সারদার সংবাদমাধ্যমগুলি বাঁচানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন মুকুল রায় ও তাঁর পুত্র শুভ্রাংশু। পয়লা বৈশাখের বৈঠকেই ঠিক হয়েছিল, সুদীপ্ত না থাকলেও তাঁর সব ক’টি সংবাদমাধ্যমকে সচল রাখতে হবে।

আগের দিনই এই বৈঠক প্রসঙ্গে আসিফ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, সারদার সংবাদমাধ্যমগুলি বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পরে বোঝা যায়, ওই সংবাদমাধ্যমগুলি নিজেদের প্রচারের জন্য দখল করা হচ্ছে। তাই মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশুকে মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।”

এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে আসিফ দাবি করেছেন, “সময়ের হিসেব করলেই তো সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। কলম পত্রিকা দখল নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ওই পয়লা বৈশাখের দু’মাস আগে।” সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ‘কলম’ পত্রিকা অফিসের বৈঠকের ছবিতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁরা ছাড়াও সে দিন আরও কুড়িটা চেয়ার ছিল বলে দাবি আসিফের। তাঁর প্রশ্ন, “কারা ছিল ওই সব চেয়ারে? খোঁজ নেওয়া হোক। এত লোক কেন? ওটা ছিল পত্রিকার দখল নেওয়ার দিন।” এ ব্যাপারে মুকুল রায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ দিনও মন্তব্য করতে চাননি।

গত কিছু দিন যাবৎ বারবারই সিবিআইয়ের কাছে এবং সংবাদমাধ্যমের কাছে সারদা নিয়ে মুখ খুলে চলেছেন আসিফ। তার জন্য রাজ্য পুলিশ যে তাঁকে নানা ভাবে শাসাচ্ছে, সে অভিযোগ আগেই এনেছিলেন তিনি। এ দিন খোলাখুলি দাবি করেন, আরও অনেক হুমকির সঙ্গে শুভ্রাংশুর নাম করা নিয়েও তাঁকে আলাদা করে চোখ রাঙানো হচ্ছে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট একটি প্রতারণার মামলার সূত্রে তাঁকে বারবার ডেকে পাঠাচ্ছে, দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখছে আর তার পর ওই মামলা নিয়ে কোনও কথা না বলে সারদা নিয়ে শাসাচ্ছে এমনটাই অভিযোগ আসিফের।

আসিফ এ দিন দাবি করেন, পুলিশ তাঁকে বলেছে, “আপনি ওনার (মুকুল রায়) ছেলের নাম বলতে গেলেন কেন? আপনি বেইমান!” তৃণমূলে একদা মুকুলের বিশ্বস্ত অনুচর বলে পরিচিত আসিফের পাল্টা যুক্তি “যিনি ছিলেন তাঁর নামই বলেছি। আমি তো বলছি না বক্সীদা-র (সুব্রত বক্সী) ছেলে ছিলেন, ববিদা-র (ববি হাকিমের) কেউ ছিলেন!”

বিধাননগর কমিশনারেট তাঁকে কী ভাবে হেনস্থা করছে তার বিবরণ দিয়ে আসিফের অভিযোগ, “সিবিআই-কে যাতে তদন্তে সাহায্য করতে না পারি, সেই কারণে বিধাননগর পুলিশ আমাকে প্রতারণার মামলায় জেলে পোরার চেষ্টা করছে।” শুধু তাই নয়, সিবিআই-কে তিনি সারদা সম্পর্কে কী কী তথ্য দিয়েছেন তা-ও কমিশনারেট তাঁর কাছ থেকে জানতে চেয়েছে বলে দাবি করেছেন আসিফ। তাঁর কথায়, “পুলিশ আমাকে বলছে, আপনাকে গ্রেফতার করে ৩০০ মামলায় ফাঁসিয়ে দেব। এ রকম অনেককে ফাঁসিয়েছি। আপনি কোথায় গিয়েছিলেন আমরা জানি।”

বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা অবশ্য আসিফের এই অভিযোগের ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কমিশনারেটের এক অফিসার বলেন, “জমি সংক্রান্ত প্রতারণা মামলায় আসিফ অভিযুক্ত। সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তাঁকে ডাকা হয়েছিল।” আজ, মঙ্গলবারও আসিফ কমিশনারেটে হাজিরা দেবেন। সেখানে ফের হেনস্থার সম্মুখীন হলে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন বলে জানিয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy