আমলার অভাবে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন যাতে না-আটকায়, সে জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে এই কেন্দ্রীয় অনুপ্রবেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেনে নেবেন কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।
নবান্ন সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা জন-অভিযোগ ও পেনশন মন্ত্রকের অধীন কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রকের সচিব সঞ্জয় কোঠারি এ মাসের মাঝামাঝি একটি চিঠি লিখেছেন এ রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে। তাতে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে আইএএস অফিসারদের ঘাটতির কথা কেন্দ্রের অজানা নয়। রাজ্য চাইলে সেই ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্রের সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস (সিএসএস)-এর অফিসারদের ডেপুটেশনে নিয়োগ করতে পারে কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতর। তাতে প্রশাসনে যেমন অফিসারের ঘাটতি মিটবে, তেমনই উন্নয়নেও গতি আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কোঠারি।
কেন্দ্রের ওই প্রস্তাবে রাজ্য আদৌ সাড়া দেবে কি না, তা চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রশাসনে ‘কেন্দ্রীয় অনুপ্রবেশ’ মুখ্যমন্ত্রী মেনে নেবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় অফিসার মহলেই। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “সবে চিঠি পেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বাইরে ও জেলায় সফরে ব্যস্ত থাকায় এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।” কেন্দ্রের এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক বার্তা হিসেবেই দেখছেন প্রশাসনের একাংশ। একাধিক অবসরপ্রাপ্ত আইএএস বলেছেন, রাজ্যের সমস্যা কাটাতে কেন্দ্রের এ ভাবে এগিয়ে আসাটা বেনজির। কিন্তু রাজ্য সুযোগ নেবে কি না, তা নিয়ে তাঁরা দ্বিধায়। এঁদের কথায় আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর তো মতিগতি বোঝা ভার!
কিন্তু কেন সিএসএস-কে বাছল কেন্দ্রীয় মন্ত্রক? কোঠারি লিখেছেন, কেন্দ্রীয় প্রশাসনে ওই ক্যাডারের অফিসারেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওই অফিসারদের ডেপুটেশনে নিয়োগ করলে রাজ্য উপকৃতই হবে। কোঠারি বলেছেন, সিএসএস ক্যাডারের ২২০০ অফিসার কেন্দ্রের নানা মন্ত্রকে কর্মরত। বর্তমানে তাঁদের বেতন কেমন, চিঠিতে তা-ও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এই প্রস্তাবের পিছনে কেন্দ্রেরও যে স্বার্থ রয়েছে, চিঠিতে তা-ও কবুল করেছেন কোঠারি। তাঁর বক্তব্য, এই ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রের অফিসারেরাও মাঠে-ময়দানে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। রাজ্যের নীতি সমাজের নিচুতলায় পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তা সম্ভব বলে মনে করেন ওই কেন্দ্রীয় সচিব। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, দিল্লি প্রশাসনের অনেকেই বলে থাকেন সিএসএসের অফিসারেরা ফাইলে নোট দেওয়াটা ভাল করেন, প্রকল্প রূপায়ণে তাঁদের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। সেই ঘাটতি মেটাতেই মোদী সরকার নিজের অফিসারদের রাজ্যে পাঠাতে চাইছেন বলে নবান্নের একাংশের মত।
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিব এন রবিশঙ্করকেও একই চিঠি পাঠিয়েছেন কোঠারি। সব রাজ্যেই যখন আইএএস অফিসারদের ঘাটতি রয়েছে, তখন কেন ওই দুই রাজ্যকেই এমন প্রস্তাব দিল কেন্দ্রের মন্ত্রক? ওই দফতরের এক প্রাক্তন সচিব বলেন, “কেন্দ্রের তৎকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে ১৯৯২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আইএএস ক্যাডারে কম অফিসার নেওয়া হয়েছিল। এতে সব রাজ্যেই প্রশাসনের মধ্য স্তরে একটা ফাঁক তৈরি হয়। দু-একটি ছাড়া অন্য রাজ্যগুলি নিজেদের অফিসারদের দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে ও বেতন কাঠামো সংশোধন করে ঘাটতি পূরণ করলেও পশ্চিমবঙ্গ তা পারেনি।” ২০০০ সালে উত্তরপ্রদেশ কেটে নয়া রাজ্য তৈরি হলেও গোড়া থেকেই আইএএস অফিসার কম ছিল উত্তরাখণ্ডে। সেই ঘাটতি তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
আমলার অভাবে এ রাজ্যে উন্নয়নের গতি ব্যাহত হচ্ছে প্রায়ই অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ রাজ্যে আইএএসদের ছবিটা কেমন? রাজ্য প্রশাসনের অফিসারদের নিয়ন্ত্রণ (বেতন কাঠামো সংশোধন, পদোন্নতি ও বদলি সংক্রান্ত কাজ) করে যারা, সেই কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের হিসেবে, যেখানে ৩১৬ জন আইএএস থাকার কথা, সেখানে রয়েছেন ১৯৮ জন। অর্থাৎ ঘাটতি ১০০-রও বেশি। এর ফলে সচিব স্তরের ২০-২২ জন অফিসারের হাতে একাধিক দফতরের দায়িত্ব তুলে দিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ক্যাডারের অফিসারদের এ রাজ্যে ডেপুটেশনে কাজ করার ঘটনা নতুন নয়। যদিও নেহাতই বিক্ষিপ্ত ভাবে এবং ব্যক্তিগত আবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের নিয়েছে রাজ্য। যেমন বর্তমানে ইন্ডিয়ান ইকনমিক সার্ভিস, টেলিকম ও পোস্টাল সার্ভিসের চার জন অফিসার রাজ্য প্রশাসনে সচিব স্তরে কর্মরত। মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ও তাঁর অফিসের এক অফিসারও এসেছেন সিএসএস ক্যাডার থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy