সারদা থেকে ট্যাক্সি, নানা প্রশ্নে বিধানসভার বাইরে আন্দোলনের এক মঞ্চে আসছে বাম ও কংগ্রেস। বিধানসভার ভিতরে এ বার বিরোধ বাধল সেই দুই বিরোধী পক্ষেরই! উপলক্ষ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব।
বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস, দু’পক্ষই সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল রাজ্য সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রুলিং’ দিয়ে প্রধান বিরোধী পক্ষ বামফ্রন্টের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকেই গ্রহণ করেছেন। এতে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস। স্পিকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলার পাশাপাশিই তৃণমূল-বাম ‘আঁতাঁত’ নিয়েও সরব হয়েছে তারা! তাদের আরও অভিযোগ, দলত্যাগী পাঁচ বিধায়ককে আড়াল করতেই কংগ্রেসের অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। কারণ, খাতায়-কলমে কংগ্রেসের বিধায়ক থাকা ওই পাঁচ জন দলীয় হুইপ অমান্য করলে শাস্তির মুখে পড়তেন।
বিধানসভার এই শীতকালীন অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে বলে অনেক আগে থেকেই ঘোষণা করেছিল কংগ্রেস। কাল, মঙ্গলবার অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু বামফ্রন্টের পরিষদীয় দল হইচই না করেই শুক্রবার শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনের কাজ শেষে স্পিকারের সচিবালয়ে নিয়ম মেনে এক লাইনের অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়ে দেয়। বামেরা তাদের আগেই অনাস্থা এনে ফেলছে দেখে তৎপর হয় কংগ্রেস। এবং সেইমতো এ দিন অধিবেশন শুরুর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় তাদের প্রস্তাবের খসড়া জমা দেয়। এক অধিবেশনে দু’টি অনাস্থা প্রস্তাব এমনিতেই গৃহীত হতো না। স্পিকার বিমানবাবু বামেদের প্রস্তাবটিই গ্রহণ করেছেন। আপাতত ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে কংগ্রেসের প্রস্তাব। বামেদের অনাস্থা নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা কবে হবে, তা অবশ্য এখনও ঘোষণা হয়নি।
সাম্প্রতিক কালে একের পর এক ঘটনায় সরকার যখন বিব্রত, সেই সময়ে অনাস্থা প্রস্তাবকে হাতিয়ার করে বিধানসভায় তীক্ষ্ম আক্রমণেরই পরিকল্পনা ছিল বিরোধীদের। কিন্তু স্পিকারের সিদ্ধান্তের জেরে বিভাজন তৈরি হয়ে গিয়েছে বিরোধী শিবিরেই! ক্ষুব্ধ কংগ্রেস বিধায়কেরা সভা থেকে ওয়াক আউট করার আগে বিধানসভার ওয়েলে নেমে স্লোগান দিয়েছেন, এমনকী, স্পিকারের ন্যায়দণ্ড নিয়ে টানাটানি করেছেন মনোজ চক্রবর্তী। মন্ত্রী জাভেদ খান, অরূপ বিশ্বাসেরা তাঁদের নিরস্ত করার চেষ্টা করেছেন। কংগ্রেস বিধায়কেরা সভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের ওই আচরণের প্রতিবাদে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করিয়েছে শাসক পক্ষ। যাদের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ‘আঁতাঁতে’র অভিযোগ তুলছে, সেই বামফ্রন্ট কিন্তু সরকারি নিন্দা প্রস্তাব সমর্থন করেনি!
কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের দাবি, স্পিকারের ডাকা সর্বদল বৈঠকেই তাঁরা জানান বিধানসভার কার্য পরিচালন বিধির ১৯৯ ধারা মেনে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা। সেই ধারা মেনেই তাঁরা এ দিন প্রস্তাব জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু স্পিকারের ব্যাখ্যা, ৩১১ নম্বর ধারা অনুযায়ী বামেদের প্রস্তাবটিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কারণ বাম বিধায়কেরা গত ৭ নভেম্বর (শুক্রবার) তাঁদের প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। যদিও কংগ্রেসের পাল্টা যুক্তি, ৩১১ নম্বর ধারায় সাধারণ নোটিস দেওয়ার পদ্ধতি বলা আছে। আর অনাস্থা আনার নিয়মটি রয়েছে ১৯৯ নম্বর ধারায়। তাই তাঁদের প্রস্তাব জমা দেওয়ার পদ্ধতিটিই ঠিক। এর জের টেনেই কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেছেন, “স্পিকার বিতর্কের ঊর্ধ্বে। কিন্তু বাম-তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রেম-পর্ব আজ প্রমাণিত হয়ে গেল!”
সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য মানসবাবুদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “আমরা নির্দিষ্ট বিধি খুঁটিয়ে দেখেই প্রস্তাব জমা দিয়েছিলাম। আর এই সে দিন পর্যন্ত কেন্দ্রে এবং রাজ্যে কারা গলা জড়াজড়ি করে সরকারে ছিল, বাংলার মানুষ দেখেছেন! তাই এ সব কথার উত্তর দেওয়ার মানে হয় না।” পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও মন্তব্য, “মানুষের উপরে যাদের আস্থা নেই, তারা অনাস্থা আনতে চাইছে! সংবিধান মেনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস তো আগে বিরোধী দলনেতার পদও দাবি করেছিল!”
এ সবের মাঝে বিজেপি-র অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে গিয়েছে বিধিগত কারণেই। কংগ্রেসকে এড়িয়ে বামেদের প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সমালোচনা করেও বিজেপি-র একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তিনি অনাস্থা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন। কংগ্রেস বিধায়কেরা সেটাও করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy