চোখ বুজে শুয়ে ছিলেন শীর্ণ চেহারার মেয়েটি। হাতে স্যালাইনের চ্যানেল। চোখের কোলে কালি পড়ে গিয়েছে। শুকিয়ে ফেটে গিয়েছে ঠোঁট দুটো। কেমন আছেন জানতে চাওয়ায়, কোনও মতে বললেন, “খুব ব্যথা। বমিও হচ্ছে।”
মঙ্গলবার সকাল ১১টা। মধ্য কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের কেবিনে খিদিরপুরে নিগৃহীতা তরুণীর কণ্ঠ খুবই ক্ষীণ শোনাচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছিল, কথা বলতে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছে তাঁর।
রবিবার রাতে কখন বেরিয়েছিলেন শপিং মল থেকে? থেমে থেমে উত্তর আসে, “ন’টা-সাড়ে ন’টা নাগাদ।” যে যুবক গ্রেফতার হয়েছে তাকে চেনেন? তরুণী জানান, রাজা (পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম রাজ) নামে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় রয়েছে। রবিবার তার সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছিল। ঘটনার আগে তাঁরা একসঙ্গে খানিকটা সময় কাটিয়েছিলেন। এই অবস্থার জন্য কি ওই যুবকই দায়ী? এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব পাওয়া যায়নি মেয়েটির কাছে। থেমে থেমে তিনি বলেন, “অনেকে ছিল। ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমার উপরে। ক্ষতবিক্ষত করেছে।” কথা বলতে বলতে পাশ ফেরার চেষ্টা করলেন তরুণী। পারলেন না। পা নাড়াতে গিয়ে যন্ত্রণায় কাতরে উঠলেন। এর পরে আর কথা বলতে চাননি তিনি।
তরুণী এটুকু বললেও তাঁর মা এ দিন অভিযোগ করেন, “এখন পরিস্থিতি হালকা করে দেওয়ার জন্য অনেক কিছু রটানো হচ্ছে। আমি জোর দিয়ে বলছি, এর মধ্যে প্রেম-ভালবাসা বা পূর্ব পরিচয়ের কোনও গল্প নেই।” সোমবার রাতে জ্ঞান ফেরার পরে মায়ের কাছে কী বলেছিলেন ওই তরুণী? মায়ের দাবি, মেয়ে বলেছিলেন এক দল অপরিচিত যুবক হামলা চালিয়েছে তাঁর উপরে। “বলা হচ্ছে মেয়ে নাকি স্বেচ্ছায় কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এ কথা জানার পর থেকে মেয়েটা আরও ভেঙে পড়েছে। শুধু বলছে, ‘মা, আমাকে আর কেউ বিশ্বাস করবে না। আমার উপরে এত অত্যাচারের কোনও বিচারই কি তা হলে হবে না?”
এ দিন দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে পুলিশ কর্তারা মেয়েটিকে আর এক প্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেই সময়ে মেয়েটির মাকেও সেখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। মায়ের অভিযোগ, দুপুরে পুলিশ এসে কারও সঙ্গে তাঁদের কথা বলতে নিষেধ করে গিয়েছে। এমনকী তাঁকে কেবিন ছেড়ে বাইরে বেরোতেও বারণ করা হয়েছে।
এ দিন সকালে ঘরের বাইরে পুলিশ চোখে পড়েনি। কিন্তু বিকেলের পর ফের ওই হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, মেয়েটির কেবিনের বাইরে দুই পুলিশ কর্মীকে মোতায়েন রাখা হয়েছে। কেবিনের ধারেকাছে যাতে কেউ ঘেঁষতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষত সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রতিনিধি যাতে ভিতরে না ঢুকতে পারেন, সে ব্যাপারে
কড়া নির্দেশ রয়েছে হাসপাতালের কর্মীদের উপরে।
কেন এই নিষেধাজ্ঞা? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ অবশ্য সরাসরি নিষেধাজ্ঞার কথা মানছেন না। তাঁর কথায়, “তদন্তের স্বার্থেই মেয়েটির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওঁরা যাঁর সঙ্গে খুশি কথা বলতে পারেন।”
এ দিন সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, তরুণী ভাল আছেন। দ্রুত তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু বিকেলে চিকিৎসকেরা জানান, এখনই তাঁকে ছাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। দুপুরে তাঁর স্যালাইন বন্ধ করা হয়েছে। সকাল থেকে রক্তপাত আর হয়নি। তবে ব্যথা এখনও রয়েছে। তাই তাঁকে কড়া ডোজের ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। রাতে দু’বার বমি করেছিলেন তরুণী। তার জন্যও ওষুধ দেওয়া হয়েছে। যে চিকিৎসক দল তাঁকে পরীক্ষা করছেন, সেই দলের এক সদস্য বলেন, “মেয়েটি কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। ‘ট্রমা’র মধ্যে রয়েছেন। রাতে ঘুমের মধ্যেও কেঁপে উঠেছেন বারবার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy