Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Difference between past & present wedding Menu

সনাতনী বাঙালি খাবার, না কি চলতি সময়ের চটকদারি! কী ভাবে বদলেছে বিয়ের ভোজ?

সে কালের বিয়ে এবং এ কালের বিয়ের খাবারের মধ্যে বিস্তর ফারাক

সে কালের বিয়ে এবং এ কালের বিয়ের খাবারের মধ্যে বিস্তর ফারাক

এবিপি ডিজিটাল কনটেন্ট স্টুডিয়ো
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৩ ২২:১২
Share: Save:

বাঙালি বাড়ির বিয়ে মানেই তিন-চার দিন ধরে কব্জি ডুবিয়ে পেট পুজা করা এক পুরনো ও ঐতিহ্যশালী প্রথা। তবে সেকালের বিয়ে এবং একালের বিয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সেকালের বিয়েতে প্রাক বিবাহ পর্বে বিয়েবাড়িতে ভিয়েন বসতো। পান্তুয়া, জিভে গজা, চিত্রকূট, বোঁদে, নিমকি, সন্দেশ নিপুণ হাতে তৈরি করতো হালুইকরেরা। বিয়ের আগের দিন থেকে বড় বড় রুই মাছ ও গলদা চিংড়ি এনে বরফ দিয়ে বাক্সে প্যাক করে রাখা হত। হাঁড়ি হাঁড়ি দই এবং রাবড়িও থাকত। উঠোনের এক ধারে বড় বড় উনুন তৈরি করা হত। তাতেই সমস্ত রান্না করতেন রাঁধুনিরা।

স্বচ্ছল পরিবারের পাশাপাশি সেকালে মধ্যবিত্ত গৃহস্থ পরিবারেও বিয়ে, বৌভাতের ভোজের ব্যবস্থা ভালই ছিল। চমকদারি না থাকলেও সে ভোজে আন্তরিকতার স্পর্শ থাকত। আর আসন, চাটাই পেতে খাওয়া-দাওয়া হত বাড়ির দালান বা ছাদে। খাওয়া হত কলাপাতায় আর জল দেওয়া হত মাটির গ্লাসে। লুচি বা কড়াইশুঁটির কচুরি, কুমড়োর ছক্কা, ডাঁটি সমেত বেগুনভাজা,মাছের মাথা দিয়ে ডাল, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস। নিতান্ত অভাবের সংসারেও মেয়ের বিয়েতে ভাত, ডাল, ভাজা, শুক্তো, ডালনা, মাছের ঝোল খাওয়ানো হত গ্রামের বাড়ির অতিথিদের।

সেকালের বিয়ের ভোজ

সেকালের বিয়ের ভোজ

একালের বিয়ের ভোজ

একালের বিয়ের ভোজ

কিন্তু সময়ের সঙ্গে মানুষের জীবনেও পরিবর্তন এসেছে। বাঙালি জীবনও তার ব্যতিক্রমি নয়। তাই একালের বিয়ে-বৌভাতের ভোজেও তার ছায়া পড়েছে। এখন বাঙালির বিয়েতে ভাড়া বাড়িই ভরসা। আর খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব পড়ে বিভিন্ন কেটারিং সংস্থার উপর। অর্থ-ক্ষমতার প্রভাব সেকালের মতো একালেও আছে। নামি কেটারিং সংস্থার বিরিয়ানি, মোগলাই, চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল খানা পরিবেশন করে তাক লাগিয়ে দেওয়া হয় অতিথিদের।

সনাতন বাঙালি খাবার যেমন লুচি, কড়াইশুঁটির কচুরি, মাছের মাথা দেওয়া মুগের ডাল, রুই মাছের ভুনা ভোজ্য তালিকা থেকে এখন প্রায় অদৃশ্য। অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে কলাপাতা, মাটির থালা ও মাটির গ্লাস। দেখা যায় না লুচি, লম্বা ডাঁটি সমেত বেগুনভাজা আর কুমড়োর ছক্কা। আসনের বদলে জায়গা করে নিয়েছে চেয়ার টেবিল অথবা বুফে। যেখানে নিজের পছন্দমতো খাবার তুলে গল্প করতে করতে দাঁড়িয়ে অনায়াসেই খাওয়া যায়। ক্ষীর, দই, রাবড়ির জায়গা নিয়েছে নানা রকমের আইসক্রিম বা কুলফি।

আমিষ পদে এখন বড় জায়গা জুড়ে আছে চিকেন বা মাটন। যা পঞ্চাশ বছর আগেও বাঙালি ঘরে এতটা প্রচলিত ছিল না । চিরাচরিত পদ লুচি, কচুরির জায়গা কেড়ে নিয়েছে নান বা লাচ্ছা পরোটা। পুরনো দিনের কাজু কিশমিশ, ঘি-মেশানো ভাতের জায়গা কেড়ে নিয়েছে বিরিয়ানি, জিরা রাইস বা নিম্বু রাইস। একালের বিয়ে বাড়ির বুফেতে সাজানো থাকে হরেক রকমের রং বেরঙের স্যালাড।

তবে এখন আর দেখা যায় না সেই সব ‘খাইয়ে মানুষদের’। যারা গোটা বিশেক মাছের টুকরো বা খান পঞ্চাশ রসগোল্লা অনায়াসে খেয়ে নিতেন বিনা ক্লান্তিতে। তাঁরাও হারিয়ে গিয়েছেন সেকালের বিয়ের ভোজের মতো। আজও পরিবারে কারও বিয়ে হলে এখানকার মানুষ আনন্দের সঙ্গে কিছুটা স্মৃতি বিজরিত হয়ে পড়েন। তাঁদের মনের স্মৃতির কুঠুরিতে আজও উঁকি দেয় বাঙালি বিয়ের সেকাল ও একাল।

এই প্রতিবেদনটি ‘সাত পাকে বাঁধা’ ফিচারের অংশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Wedding Wedding Special 2023 Food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy