প্রতীকী ছবি
প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মেও বিবাহিত মহিলারা শাঁখা-পলা ব্যবহার করেন স্বামীর মঙ্গল কামনায়। শাঁখা-পলা এক জন মহিলার বৈবাহিক জীবনের চিহ্ন। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, শাঁখা-পলা ছাড়া বিয়ে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু এই রীতি এল কোথা থেকে? এর প্রেক্ষাপটে রয়েছে বিচিত্র কিছু গল্প।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের মতে, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মহাভারতের সময়কাল থেকে শাঁখার ব্যবহার শুরু হয়। সেই সময়ে শঙ্খাসুর নামে এক অসুরের তাণ্ডবে ত্রিভুবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে। স্বর্গের দেবতারা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শরণাপন্ন হন বিষ্ণুর। বিষ্ণুদেব তখন এই অসুরকে বধ করে দেবতাদের রক্ষা করেন। এর পর তার ধর্মপরায়ণ স্ত্রী তুলসী নারায়ণের কাছে স্বামীকে ফেরত পাওয়ার জন্য ধ্যান শুরু করেন। তুলসীর প্রার্থনায় নারায়ণ সারা দিলেও শঙ্খাসুরকে ফিরিয়ে দেওয়ার মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে পারেন না। তখন নারায়ণ শঙ্খাসুরের প্রতীক হিসাবে তারই হাড় দিয়ে এই শাঁখা তৈরি করেন এবং তুলসীকে দেন। সেই থেকেই বিবাহিত মহিলারা স্বামীর মঙ্গল কামনায় এটি পরা শুরু করেন।
আবার অন্য একটি মত অনুসারে, হিন্দু বিয়ে মোট আটটি মতে হয়। ব্রাক্ষ্ম, দৈব, অর্শ, প্রজাপাত্য, অসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস আর পৈশাচ। এর মধ্যে রাক্ষস বিবাহ রীতিতেই শাঁখা এবং পলা পরার উৎপত্তি বলে মনে করেন অনেকে। এই পদ্ধতিতে বলপূর্বক কন্যাকে অন্য রাজ্যে এনে বিয়ে করা হত। যেহেতু তাঁকে বন্দিদশায় আনা হত, তাই তাঁর হাতে ও পায়ে লোহার শিকল বেঁধে দেওয়া হত। সেই লোহার শিকলই পরবর্তিতে শাঁখা-পলার রূপ ধারণ করেছে বলে মনে করা হয়।
শাঁখার মতো পলাকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই পলা হল লাল রঙের প্রবাল। প্রবাল প্রাণীর জীবাশ্ম থেকেই পলা তৈরি হয়ে থাকে। শাঁখার মতো পলাও দু’হাতে পরা হয়। পলা পরার কোনও পৌরাণিক ব্যখ্যা যুক্তিগত ভাবে না থাকলেও পলার বেশ কিছু দ্রব্যগুণ আছে। মনে করা হয়, শরীরে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা রুখতে বা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পলার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। সেই কারণেই পলা পরা হয়। এমনকি এই ক্ষেত্রে পলা ভেজানো জলও বেশ উপকারী। আবার এও বলা হয় যে, পলা ধারণ করলে মহিলাদের রজঃস্রাবজনিত সমস্যার নিরাবণ হয়।
তা হলে অবিবাহিত মেয়েদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কেন পলা ব্যবহার করা হয় না কেন, এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রাচীনকালে একটি মেয়ে রজঃস্বলা হওয়ার পরেই তাঁর বিয়ে দিয়ে দেওয়া হত। তাই বয়সের সেই হিসাব অনুযায়ী তাঁকে পলা পরানো হত এবং সেই থেকেই এটি একটি বৈবাহিক চিহ্নে রূপান্তরিত হয়েছে। যদিও বর্তমানে অধিকাংশ বিবাহিত মহিলা শাঁখা-পলা গয়না হিসাবেই ব্যবহার করে থাকেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy