পথের পাঁচালি: কার্শিয়াং থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার পথে রোহিণীর রাস্তা
পুজোর ছুটির সঙ্গে আরও কয়েক দিন জুড়ে নিয়ে একটা অ্যানুয়াল রাইডের পরিকল্পনা প্রায় প্রতি বছরই থাকে আমাদের বাইকার্স ক্লাবের। এ বছরের প্ল্যানিং যখন শুরু হয়েছিল, তখনও খোলা ছিল না সিকিম। ঠিক করেছিলাম, কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে এ বারের সাক্ষাৎটা সেরে আসব লেপচাজগৎ, দার্জিলিং, আর লামাহাটা থেকেই। পুজোর আগে-আগে সিকিমের দরজাও খুলে গিয়েছিল। তবে তত দিনে আমাদের সব বুকিং-প্ল্যানিং শেষ, সঙ্গী দু’চাকাও সার্ভিস সেন্টার থেকে ফিরে বেরিয়ে পড়ার অপেক্ষায়।
আমাদের ১০ জনের টিম যাত্রা শুরু করেছিল সপ্তমীর ভোররাতে। শুরু থেকেই সঙ্গ নিল ঝিরঝিরে বৃষ্টি। ন্যাশনাল হাইওয়ে টু ধরে হু-হু করে এগিয়ে দুপুর গড়িয়ে গেল মালদা পৌঁছতে। প্রথম বড় স্টপ ওটাই। খেয়েদেয়ে খানিক জিরিয়ে আবার যাত্রা। লক্ষ্য রাতের মধ্যে শিলিগুড়িতে পৌঁছনো। তবে সে লক্ষ্যভেদে বাধা বৃষ্টি আর রাস্তার দুরবস্থা! শিলিগুড়ি যখন পৌঁছলাম, ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছুঁই-ছুঁই। ক্লান্ত রাত কোথা দিয়ে কেটে গেল, বুঝতেই পারলাম না!
পরের দিন থেকেই আসল বেড়ানো শুরু। সেই পাকদণ্ডী পথ বেয়ে উপরে ওঠা, বাঁকে বাঁকে চেনা বিস্ময়, কুয়াশার চাদর ঢাকা পাইন বন চেরা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলা। কখনও ইলশেগুঁড়ি, কখনও অঝোরে— বৃষ্টি আমাদের পিছু ছাড়েনি তখনও। চলেছি লেপচাজগতের দিকে। পথে মিরিকে একটু বিরতি, চট করে দেখে নেওয়া মিরিক লেক। কুয়াশা থাকায় দিনের আলো যেন তাড়াতাড়িই নিভে আসছিল। নুডলস খেয়ে ফের রওনা। আপাদমস্তক ভিজে যখন লেপচাজগৎ পৌঁছলাম, তখন সন্ধে ঢলেছে পাহাড়ের কোলে।
পরদিন ভোর-ভোর উঠে পড়লাম, পাহাড়ের রানির সঙ্গে মোলাকাতের আশায়। হোমস্টে থেকে বেরিয়ে হাঁটাপথে খানিক উপরে উঠলাম। আকাশের মুখ তখনও ঈষৎ ভার, দূরে রেঞ্জ দেখা গেলেও তেমন পরিষ্কার নয়। কয়েক জন মিলে ঠিক করলাম, দার্জিলিঙে রওনা দেওয়ার আগে সীমানা ভিউ পয়েন্ট ঘুরে আসব। সেখান থেকে ফিরেই লাঞ্চ সেরে এক ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম দার্জিলিং। জিমখানা সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত চার্চে বাইক পার্ক করলাম। আমাদের হোটেলটা ছিল ম্যাল পেরিয়ে। বহু দিন পরে দার্জিলিং ম্যালের চেনা ছবি, তবে পর্যটকদের সেই ভিড় ততটা চোখে পড়ল না। ম্যালের একপাশে দুর্গাপুজো হচ্ছে, অন্য দিকে মহাকাল মন্দির থেকে ভেসে আসছে ঘণ্টাধ্বনি। গ্লেনারিজ়ের বারান্দায় বসে বার্গার আর হট চকলেট খাওয়াটা তো কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। তবে সেটা তুলে রাখলাম পরের দিনের ব্রেকফাস্টের জন্য।
আগামী গন্তব্য লামাহাটা। যত এগোচ্ছি, পাইনের জঙ্গল ক্রমশ ঘন হচ্ছে। পার্কের ঠিক আগেই আমাদের হোমস্টে। লামাহাটায় পৌঁছে বুঝলাম, মেঘ মাখানো পাহাড় আমাদের প্রতি একটু একটু করে প্রসন্ন হচ্ছে। রাতে বারান্দা থেকে তারাভরা আকাশ ইঙ্গিত দিল, এত দিন বৃষ্টিতে ভেজার কষ্টটা বৃথা যাবে না। এই ট্রিপে স্লিপিং বুদ্ধর সঙ্গে আমাদের প্রথম ঝলমলে সাক্ষাৎ লামাহাটার হোমস্টে-র বারান্দা থেকে, পরদিন ভোরে। ঝকঝকে বরফে সিঁদুরে রং-মাখা সে দৃশ্য এত চেনা, তবু শিহরিত করে প্রতিবার। লামাহাটা থেকে তিনচুলেও ছুঁয়ে এলাম সে দিনই, চা-বাগানের পাশ ধরে। সে দিন আবার বিজয়া দশমী। তিস্তা-ত্রিবেণী সঙ্গমে দেখলাম প্রতিমা নিরঞ্জন। আমাদেরও ফেরার রাস্তা ধরতে হবে ভেবে মন খারাপ হয়ে গেল।
ফেরার সময়ে কার্শিয়াংয়ের পথ ধরলাম। রোহিণীর রাস্তা ধরে নেমে এসে মাটিগাড়া পৌঁছনোর জার্নিটা বেশ উপভোগ্য। ফরাক্কায় এক রাতের হল্ট দিয়ে ডেস্টিনেশন কলকাতা। লক্ষ্মীপুজোর আগের দিনই ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরে এলাম। আর আমাদের বিজয়া সারার শুরুও সে দিন থেকেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy