ভয়ঙ্কর সুন্দর: ওঁত পেতে শিকারের লক্ষ্যে গুটি গুটি পায়ে
এক মুহূর্ত সময় না নিয়ে শাটার টিপলাম... পাঁচ মাসের প্রতীক্ষা সাঙ্গ হল। কেউ যদি ভাবেন, জঙ্গলে একবার বেড়াতে গিয়েই সব দেখে ফেলবেন, তা হলে ভুল। আমাদের মতো ওয়াইল্ড লাইফ-নেচার ফোটোগ্রাফারদের ধৈর্যই সম্পদ। কাবিনি আমাকে পাঁচ মাস ধরে ফেরাচ্ছে। যে দিন দিল, সে দিন যাকে বলে একেবারে ছপ্পড় ফাড়কে!
বান্ধবগড়, কানহা, জিম করবেটের কথা সকলেই জানেন। কিন্তু কাবিনির মতো বৈচিত্র আর কোথাও নেই। কর্নাটকের এই অরণ্য ক্রমশই জনপ্রিয় হচ্ছে। টাইগার আর লেপার্ড এই দুই প্রজাতির একসঙ্গে দেখা মেলে এখানে। বোনাস পাওনা ব্ল্যাক প্যান্থার, সম্বর, চিতল, হাতি, ঢোল (ওয়াইল্ড ডগ)...
পেশা না হলেও ফোটোগ্রাফি আমার প্যাশন। বেঙ্গালুরুতে থাকার সুবাদে বেশ কয়েক বার কাবিনিতে সাফারি করেছি। বাঘ দেখলেও লেপার্ডের দর্শন মিলছিল না। মনের মতো ছবি না পেলে কেমন একটা অস্বস্তি তাড়া করে। পঞ্চম সাফারিতে প্রতীক্ষার অবসান হল। তার দর্শন মিলল। সে এক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা। অন্যান্য বারের মতোই আয়োজন করে সাফারিতে বেরিয়েছিলাম। সে দিন আমরা জ়োন বি-তে ছিলাম। আমাদের আগে দু’-তিনটি গাড়ি ছিল। তাদের কাছ থেকে শুনলাম, সামনে নাকি লেপার্ড দেখেছে। একটু এগোতেই দেখলাম, একটি চিতল দাঁড়িয়ে। তখনই আর একটি চিতল এসে ওই চিতলটিকে যেন খবর দিয়ে পালাল। আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে, আজ দর্শন মিলতে পারে। আর একটু এগোতেই দেখলাম, গাছের উপরে তিনি বিরাজমান। শাটার থেকে হাত সরাইনি। তখনও আসল চমক বাকি। লেন্সে চোখ রাখা অবস্থাতেই দেখি, আরও একটি লেপার্ড ওই গাছে ওঠার চেষ্টা করছে। গাছের লেপার্ডটি তাকে জোর ধমকে দিতেই দ্বিতীয় লেপার্ডটি একদম বাধ্য ছেলের মতো সুড়সুড় করে নেমে গেল। গাইড জানালেন, উপরেরটি ছেলে, নীচেরটি বাবা।
সঙ্কেত: এক ক্লিকে দুই শিকার
একটা সময়ে কাবিনি ছিল রাজা-মহারাজাদের শিকারক্ষেত্র। ৫৫ একর এলাকা জুড়ে তৈরি এই রিজ়ার্ভ এখন নাগরহোল ন্যাশনাল পার্কের একটি অংশ। কাবিনি নদীর ধার ঘিরে একাধিক ওয়াইল্ড লাইফ রিজ়ার্ভ রয়েছে। পুরোটাই নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজ়ার্ভের অন্তর্গত। বেঙ্গালুরু বা মাইসুরু থেকে গাড়িতেই কাবিনিতে যাওয়া যায়। থাকার জায়গাও রয়েছে। দু’রকম সময়ে জঙ্গল সাফারি করা যায়— সকাল ও সন্ধে। কিন্তু জীবজন্তু দেখতে হলে সকালের সময়টাই আদর্শ। আমার অভিজ্ঞতা বলে, গরমকাল জঙ্গল দেখার ভাল সময়। ওয়াটারবডি শুকিয়ে যায়। বিগ ক্যাটস জলের সন্ধানে বাইরে বেরিয়ে আসে। তবে এক-একটা ঋতুতে জঙ্গলের রূপ এক-এক রকমের। বর্ষার সময়ে জঙ্গল সবুজ সুন্দর। লেপার্ডরা তখন গাছের উপরে উঠে থাকে। পুরোদস্তুর ফোটোজেনিক মোমেন্ট। আমি শীতকালেও জঙ্গলে ছবি তুলতে গিয়েছি। ওই সময়ের কুয়াশা আবার আলাদা এফেক্ট দেয়।
রাজকীয়: ব্ল্যাক প্যান্থার
কাবিনি নদীর ধারে গেলে হাতির দেখা মেলে। দল বেঁধে তারা আসে জল খেতে। বার্ড ওয়াচারদের জন্যও কাবিনি আদর্শ। সাড়ে তিনশোর বেশি প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এখানে।
বান্ধবগড় যদি বাঘের জন্য প্রসিদ্ধ হয়, কাবিনি তা হলে লেপার্ডের জন্য। লেপার্ড ছাড়া কাবিনির আর এক ইউএসপি ব্ল্যাক প্যান্থার। অন্যান্য জঙ্গলে এই প্রাণী দেখা গেলেও এখানে বিরল প্রজাতির প্যান্থারের দেখা মেলে। এদের দর্শনও সহজ নয়। এক বারের সাফারিতে খবর পেলাম, সামনেই নাকি ব্ল্যাক প্যান্থার রয়েছে। কয়েকটা গাড়ি একসঙ্গে ছিল। আমরা সব সরে গেলাম। ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে প্যান্থার। দেখে মনে হবে গায়ে কালো ভেলভেটের কোট। আমাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে রাজকীয় চালে তিনি এগিয়ে গেলেন!
এরাও টুরিস্ট দেখে অভ্যস্ত। তবে সব প্রাণী সমান নয়। টুরিজ়ম জ়োনের বাইরের অংশে যে সব প্রাণী থাকে, তারা অতিথিবৎসল না-ও হতে পারে। মাথায় রাখবেন জঙ্গল সাফারির ক্ষেত্রে গাইডের কথাই শেষ।
অভিরূপ ঘোষ দস্তিদার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy