বেশি উচ্চতায় কী ভাবে দ্রুত খাপ খাওয়াবেন শরীর? ছবি: সংগৃহীত।
লাদাখ। নামটা শুনলেই মনে ভেসে ওঠে এক অপূর্ব ক্যানভাস। দেশের বিভিন্ন পাহাড়ি রাজ্যের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। সবুজের আধিক্য নেই, বরং যে দিকে চোখে যায় শুধু ধূসর-ঊষর প্রান্তর। তারই মধ্যে ঘন নীল জলের বিশাল হ্রদ। মনাস্ট্রি। ফুল। পাহাড়ের বুক চিরে যাওয়া সর্পিল পথ।
ভ্রমণপিপাসুদের কাছে পছন্দের তালিকায় লাদাখ থাকবে না, হতে পারে না। কিন্তু লাদাখের উচ্চতা বয়স্ক পর্যটকদের কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে লাদাখের উচ্চতা ১০ হাজার ফুটেরও বেশি। লাদাখে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলির উচ্চতা ১৮ হাজার ফুটেরও বেশি। শুধু বয়স্ক কেন, একেবারেই সুস্থ কম বয়সি মানুষজনও বেশি উচ্চতায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। একে বলা হয় ‘অ্যাকিউট মাউন্টেন সিকনেস’।
বেশি উচ্চতাজনিত অসুস্থতা কখন হয়?
খুব কম সময়ের মধ্যে অনেকটা উঁচু স্থানে যদি কেউ ভ্রমণ করেন, তা হলে হতে পারে। কারণ, আচমকা অতিরিক্ত উচ্চতার পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত শরীর মানিয়ে নিতে পারে না। যার ফলাফল অসুস্থতা। এর কারণ হল, আচমকা অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া, বায়ুর চাপের তারতম্য ও অত্যধিক উচ্চতা। বেশি উচ্চতাজনিত অসুস্থতা অনেক সময়েই ভয়াবহ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কোন বয়সের মানুষের উপর তা কী ভাবে প্রভাব ফেলবে, তা আগে থেকে বোঝা খুবই শক্ত।
তাই লাদাখ বা বেশি উচ্চতার জায়গায় ভ্রমণের আগে মাথায় রাখতে হবে কয়েকটি কথা—
ধীরে চলো: ৩ হাজার ফুট থেকে আচমকা ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় গেলে শরীরকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সময় দিতে হবে। তাই লাদাখ ভ্রমণে তাড়াহুড়ো নয়, বরং সময় দিতে হবে বিভিন্ন উচ্চতার সঙ্গে শরীরকে মানিয়ে নেওয়ার। সরাসরি ৭ হাজার ফুট একবারে উড়ান বা গাড়িতে না উঠে যদি ধাপে ধাপে সময় নিয়ে আসা যায়, সেটাই ভাল। আচমকা এ রকম জায়গা হঠাৎ চলে এলে প্রথমেই দু’দিন থেকে উচ্চতার সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। যেমন দিল্লি হয়ে উড়ানে লেহ্ চলে গেলে সেখানে দু’দিন বিশ্রাম নেওয়াটা জরুরি। প্রতিদিন একবারে ৩ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় না যাওয়াই ভাল।
কম ঘুম: যত বেশি উচ্চতায় উঠবেন, ঘুম তত কমাতে হবে। এই পদ্ধতি উচ্চতাজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি কমাবে। যত উচ্চতা বাড়ে বাতাসের ঘনত্ব কম হতে শুরু করে ও অক্সিজেনের মাত্রাও কমতে থাকে। এ দিকে পাহাড়ে ঘোরাঘুরি, হাঁটাহাটি সব কিছুর জন্যই অক্সিজেন দরকার। অক্সিজেনের জোগান ঠিক রাখতে শরীর তখন বাড়তি লোহিত রক্তকণিকা তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু সেটাও খুব দ্রুত হয় না। তাই কম ঘুমিয়ে বেশি উচ্চতায় শরীরের অভ্যন্তরীণ কাজকর্ম সক্রিয় রাখাটা দরকার।
সঠিক প্রশিক্ষণ: বেশি উচ্চতায় ঘোরাফেরা বা ট্রেকিংয়ের জন্য আগাম শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি থাকলে ভাল। যদি কেউ নিয়মিত শরীরচর্চা, শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম, অ্যারোবিক্স করেন, তাঁদের হার্ট, ফুসফুস ভাল থাকে। বেশি উচ্চতার জায়গায় ভ্রমণের আগে নিয়মিত শরীরচর্চা করলে সেটাই অবশ্যই বাড়তি সুবিধা দেবে।
প্রচুর জল খান: জলের ঘাটতি যেন না হয়, দেখতে হবে। প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না, খেয়াল রাখা দরকার। জল বা জলীয় কিছু পান করলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক থাকে সাধারণত।
খাবার: বেশি উচ্চতায় সহজপাচ্য খাবার খাওয়াটাই ভাল। একসঙ্গেই লক্ষ রাখতে হবে, যাতে খাওয়া বেশি না হয়ে যায়। কারণ, হজমে সমস্যা হলে তা বিপদ আরও বাড়াতে পারে। চেষ্টা করতে হবে শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার ও নুন কম খাওয়ার।
বর্জন করুন: বেশি উচ্চতায় সিগারেট, অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে। এ ছাড়া, ঘুমের ওষুধ, অবসাদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ না খাওয়াই ভাল। লাদাখ যাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy