ডাবের জল ভাল না আখের রস ? ছবি: সংগৃহীত।
বাজার সেরে ফেরার পথে রোজ এক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। রাস্তার একপাশে বসে মাসুদ ডাবওয়ালা। ঠিক তার উল্টো দিকে ঠেলাগাড়ি করে আখের রস বিক্রি করে পিন্টু। ঠা-ঠা রোদ মাথায় নিয়ে বাজার করে ক্লান্ত লাগলে, প্রায় দিনই মাসুদের থেকে ডাব কিনে স্ট্র দিয়ে সেই জল খেয়ে তবেই বাড়ি ফেরেন। ফেরার পথে আবার শিষ কাটা দুটো ডাব হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে আসেন। উল্টো দিকে ছোট একটি কাঠের টুলের উপর বসে থাকা পিন্টু খানিকটা হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকে। টাটকা আখ থেকে চোখের সামনে মেশিনে পিষে রস বার করে দেয়। তবু তাঁর গাড়ির দিকে সকলেই কেমন যেন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। টাটকা আখের রস নিয়ে এই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মনে হাজারটা প্রশ্ন! আখ মিষ্টি। রোজ খেলে রক্তে শর্করা বেড়ে যেতে পারে। তার উপর যে মেশিনে আখ পেষা হয়, সেটির পরিচ্ছন্নতা নিয়েও সকলের প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। পিন্টু তো এক দিন বেশ রেগেই বলে বসল, “আখের রস খেলে নাকি সুগার হবে! আর ডাবের জল খেলে হবেনি? যত্ত বাজে কথা!”
পিন্টুর মতো এই একই প্রশ্ন যে সাধারণ মানুষের মনে উদয় হয়নি, তা নয়। কিন্তু প্রচলিত ধারণার সত্যিই বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি আছে কিনা তা খুঁটিয়ে দেখা হয়নি। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, আখের রসে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ়, পটাশিয়াম, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং সহজপাচ্য ফাইবার। এই পানীয়ের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা। যা ক্লান্ত শরীরে তৎক্ষণাৎ চনমনে ভাব এনে দিতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা শরীরচর্চা করেন, তাঁদের জন্য আখের রস বিশেষ প্রয়োজন। ২৫০ মিলিমিটার আখের রসে ক্যালোরির পরিমাণ ১৮৩। শর্করার পরিমাণ প্রায় ৫০ গ্রাম।
এত গুণ থাকা সত্ত্বেও রোজ আখের রস খাওয়া যায় না। যাঁদের রক্তে শর্করা বাড়তির দিকে তাঁরা তো বটেই, সঙ্গে যাঁদের স্থূলত্ব সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে বা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে, তাঁদেরও নিয়মিত আখের রস খেতে বারণ করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আখের রস না খাওয়াই ভাল। তা ছাড়া, যে মেশিনে আখ পেষা হয়, তার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
অন্য দিকে, শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হলে কিংবা শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দিলে চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ, সকলেই ডাবের জল খাওয়ার পরামর্শ দেন। ডায়েরিয়া, হিট স্ট্রোক, অতিরিক্ত ক্লান্তি কিংবা দুর্বলতা কাটাতে এই পানীয়ের জুড়ি মেলা ভার। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ২৫০ মিলিলিটার ডাবের জলে ক্যালোরির পরিমাণ মাত্র ৪৬। প্রাকৃতিক শর্করা রয়েছে ১০ গ্রামের মতো। তাই শক্তির জোগান বা এনার্জি দেওয়ার ক্ষেত্রে ডাবের জলের চেয়ে আখের রস ভাল।
তবে ডাবের জলে যে হেতু পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি, তাই যাঁদের রক্তচাপ এমনিতেই কম, তাঁদের এই পানীয় বেশি না খাওয়াই ভাল। কিডনির সমস্যা থাকলেও ডাবের জল বেশি খাওয়া যায় না। ডায়াবেটিকরাও যে রোজ নিশ্চিন্তে এই পানীয় খেতে পারেন, তেমন আশ্বাস পুষ্টিবিদেরাও দেন না। পাশাপাশি, এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, ডাবের জল বা আখের রস কিন্তু সাধারণ জলের বিকল্প হতে পারে না। সারা দিনে অন্তত পক্ষে ৭ থেকে ১০ গ্লাস জল খাওয়ার পর, শারীরিক অবস্থা বুঝে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে পানীয় খেতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy