পুজোয় ট্রেনের টিকিট পাননি? গাড়িতেই ঘুরে নিন কামাখ্যা। ছবি: সংগৃহীত।
কামাখ্যা দর্শনের ইচ্ছা বহু দিনের? পুজোর সময় হাতে কি লম্বা ছুটি থাকছে? তা হলে বরং কলকাতা থেকে চারচাকায় বেরিয়ে পড়তে পারেন গুয়াহাটির উদ্দেশে। লম্বা পথও উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে, যদি আগাম একটু পরিকল্পনা করে নেন। বইতে পড়া ইতিহাস-ভূগোলের নিদর্শন দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাবেন সেখানে।
‘পীঠনির্ণয় তন্ত্র’ অনুযায়ী, ৫১ শক্তিপীঠের একটি হল কামাখ্যা। অসমের গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়ের কোলে তার অবস্থান। অম্বুবাচীতে এখানে বিশেষ উৎসব হয়। তবে দুর্গাপুজোয় এলেও নিরাশ হতে হবে না। কৃষ্ণা নবমীতে কামাখ্যায় দুর্গাপুজো শুরু হয়। চলে দশমী পর্যন্ত।
তবে কামাখ্যা দর্শন করেই ভ্রমণ শেষ হয় না। গুয়াহাটিতে দর্শন পাবেন ছোটবেলায় ভূগোল বইতে পড়া ব্রহ্মপুত্র নদের। তারই মধ্যে একটি ছোট্ট দ্বীপে রয়েছে উমানন্দ মন্দির। সেখান যেতে হয় জলপথে।
এখন অবশ্য এর সঙ্গে জুড়ে নিতে পারেন রোপওয়ে চড়ার অভিজ্ঞতা। মাত্র কয়েক বছর আগে এই রোপওয়ে চলাচল শুরু হয়েছে। সূর্যাস্ত দেখতে ব্রহ্মুপুত্রের বুকে ভেসে পড়া যায় ক্রুজ়ে। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৩ দফায় ক্রুজ চলে। পুজোর সময় টিকিট পেতে অসুবিধা হতে পারে। তাই আগাম অনলাইনেও বুকিং সেরে নিতে পারেন।
রোপওয়ে যাত্রাও ভাল লাগবে বিকালের দিকে। গুয়াহাটি ভ্রমণে দু’দিন যথেষ্ট। এই দু’দিনে ঘুরে নিতে পারেন কামাখ্যা মন্দির, বশিষ্ঠ মন্দির, ওয়ার মেমোরিয়াল-সহ আশপাশের ছোটখাটো দ্রষ্টব্য।
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান
অসমে রয়েছে একাধিক জাতীয় উদ্যান। তারই মধ্যে একটি কাজিরাঙা। গোলাঘাট ও নগাঁও জেলা জুড়ে বিস্তৃত এই জঙ্গলে একশৃঙ্গ গন্ডারদের বাস। হাতি থেকে বাইসন, হরিণ, অসংখ্য বণ্যপ্রাণের ঠিকানা কাজিরাঙা। গুয়াহাটি থেকে দূরত্ব ২০৩ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগবে ৫-৬ ঘণ্টা।
মানস জাতীয় উদ্যান
গুয়াহাটি থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মানস জাতীয় উদ্যান। বন্যপ্রাণ দেখার জন্য এখানেও ছুটে আসেন পর্যটকরা। হাতি এবং বাঘের ডেরা মানস। রয়েছে অসংখ্য পাখিও। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছ মানস। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ পিগমি হগস।
যেতে কত ক্ষণ সময় লাগবে?
কলকাতা থেকে কামাখ্যার দূরত্ব প্রায় হাজার কিলোমিটার। এতটা পথ টানা গাড়ি চালালেও ২ দিন সময় লেগেই যাবে।
কী ভাবে যাবেন?
১০০০ কিলোমিটার যাত্রাপথ উপভোগ্য হয়ে উঠবে, যদি ভেঙে ভেঙে যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে প্রথম দিন চলুন বহরমপুর। কল্যাণী-কৃষ্ণনগরের উপর দিয়ে যেতে হবে। মুর্শিদাবাদ একটি ঐতিহাসিক স্থান। বহরমপুরে রাত্রিবাসের পাশাপাশি হাতে সময় নিয়ে গেলে আশপাশের কয়েকটি স্থান ঘুরে নিতে পারেন। সেই তালিকায় রাখতে পারেন হাজারদুয়ারি, মোতিঝিল।
দ্বিতীয় দিনে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরেই বহরমপুর থেকে ফরাক্কা ব্যারেজ পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকে গঙ্গা পার করে মালদহ গিয়ে রাত্রিবাস করতে পারেন। গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল ইচ্ছমতো যে কোনও স্থানে দাঁড়ানো ও ঘোরা যায়। মালদহও ঘোরার জন্য বেশ সুন্দর জায়গা। বারোদুয়ারি, দাখিল দরওয়াজা, ফিরোজ় মিনার-সহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে নিতে পারেন।
তৃতীয় দিনে মালদহ থেকে কিষাণগঞ্জ হয়ে শিলিগুড়ি অথবা জলপাইগুড়ি পৌঁছন। শিলিগুড়িতে রাত্রিবাসের পাশাপাশি পরদিন সকালে ঘুরে নিতে পারেন ইয়াম ইন্ডিয়া বুদ্ধিস্ট মনাস্টারি, বেঙ্গল সাফারি পার্ক। চাইলে শিলিগুড়ির বদলে আলিপুরদুয়ারেও রাত্রিবাস করতে পারেন।
চতুর্থ দিনে চলুন বঙ্গাইগাঁও হয়ে কামাখ্যা। চাইলে এক দিনে আরও বেশি রাস্তা পাড়ি দিয়ে যাত্রার সময় কমিয়ে নিতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
কামাখ্যা এবং গুয়াহাটিতে থাকার জন্য ছোট-বড় বিভিন্ন হোটেল রয়েছে। গুয়াহাটিতে অসম পর্যটন দফতরের থাকার জায়গাও রয়েছে। কাজিরাঙা এবং মানস ভ্রমণের সময় থাকার জন্য হোটেল, হোম স্টে, রিসর্ট রয়েছে।
কী দেখবেন?
গুয়াহাটি হয়ে চলে যেতে পারেন মেঘালয়, শিলংয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy