Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Slovenia

জলরঙে আঁকা মাস্টারপিস...

স্লোভিনিয়ার রাজধানী লুবয়ানার সফর রঙিন এবং রোমাঞ্চকর লুবয়ানা হিলের উপরে তৈরি কাসলে পৌঁছনোর জন্য আছে ফানিকিউলার (এক ধরনের যান)। নদীর পাড় ঘেঁষে অগুনতি কাফেতে মানুষের আড্ডা, ছোট ছোট স্টলে বিক্রি হচ্ছে ধোঁয়া ওঠা সেঁকা চেস্টনাট, স্লোভিনিয়ার সুভেনির-সন্ধে কাটল ভালই। পর দিন যাব লেক ব্লেড। 

সিটিস্কেপ: সুন্দরী লুবয়ানা

সিটিস্কেপ: সুন্দরী লুবয়ানা

সমীরন সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:১০
Share: Save:

ফ্লিক্সবাসের অন্দরের ওম ছেড়ে পড়ন্ত দুপুরে বাইরে পা রাখতেই মিহি বৃষ্টির দানা উড়ে এল চোখেমুখে। হুডটা মাথায় টেনে লাগেজ নিয়ে এসে দাঁড়ালাম বৃষ্টিস্নাত লুবয়ানার বাস স্ট্যান্ডে। চওড়া বুলেভার্ড, অল্পসল্প পথচলতি মানুষ...

এসেছি ইউরোপের মাত্র কুড়ি লক্ষের এক দেশ, স্লোভিনিয়ার রাজধানী লুবয়ানায়—তিনটি রাতের জন্য। এক কামরার অ্যাপার্টমেন্টে সেল্ফ চেক-ইন সেরে, রওনা হলাম ওল্ড টাউনের দিকে। সমুদ্রতল থেকে হাজারখানেক ফুট উঁচুতে বলে একটু চড়াই-উতরাই রাস্তা। ফল সিজ়নে দু’পাশ জুড়ে সার দেওয়া গাছে যেন লাল-হলুদের আগুন লেগেছে। প্রেসারেন স্কোয়্যারকে ঘিরেই শহরের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রগুলি। আর আমাদের ছোট নদী, লুবয়ানিসা এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে শহরের মাঝখান দিয়ে। দেখে নিলাম গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে থাকা লুবয়ানা ক্যাথিড্রাল, ক্যাসল, ট্রিপল ব্রিজ আর অবশই ড্রাগন ব্রিজ, যা শহরের আইকনিক স্থাপত্য।

লুবয়ানা হিলের উপরে তৈরি কাসলে পৌঁছনোর জন্য আছে ফানিকিউলার (এক ধরনের যান)। নদীর পাড় ঘেঁষে অগুনতি কাফেতে মানুষের আড্ডা, ছোট ছোট স্টলে বিক্রি হচ্ছে ধোঁয়া ওঠা সেঁকা চেস্টনাট, স্লোভিনিয়ার সুভেনির-সন্ধে কাটল ভালই। পর দিন যাব লেক ব্লেড।

দুর্গরহস্য: প্রেডয়ামা কাসল

শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে জুলিয়ান আল্পসে অবস্থিত, দু’কিলোমিটার লম্বা আর দেড় কিমি চওড়া, ফিরোজা নীল রঙের টলটলে জলের লেক ব্লেড। চার ধারে অনুচ্চ পাহাড়ের সারি আর লাল-হলুদ রং ধরা গাছ। লেককে ঘিরেই ছোট্ট শহর ব্লেড। রোয়িং বোট, কায়াক বা গন্ডোলায় দু’ঘণ্টায় ঘুরে আসা যায় লেক। মাঝে ছোট্ট দ্বীপ। সেখানে রয়েছে সতেরোশো সালে তৈরি চার্চ, যার টাওয়ার ৫২ মিটার উঁচু। কফি নিয়ে বসে পড়লাম জলের ধারের কাফেতে। ফেরার আগে কিনলাম লেক ব্লেডের ডেলিকেসি ডিজ়ার্ট ক্রিমস্‌নিটা।

তৃতীয় দিন সকালে রওনা হলাম টুরের সবচেয়ে চমকপ্রদ দ্রষ্টব্য, পোস্তনা কেভের উদ্দেশে। ২৪ কিমি লম্বা পোস্তনা, ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ কেভ সিস্টেম। কেভের সঙ্গেই দেখে নেওয়া যায় প্রেডয়ামা কাসল। কেভ ও ভিভারিয়ামের টিকিটের প্যাকেজ বেছে নিলাম। ভিভারিয়াম হল ওম (গিরগিটি জাতীয় প্রাণী), বেবি ড্রাগন ও অন্যান্য কেভ অ্যানিম্যালদের নিয়ে একটা গবেষণাধর্মী প্রদর্শনী। গুহামুখ থেকেই ছাড়ছে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন। গুহার ভিতরের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে! তাই ভারী জ্যাকেট ও টুপি মাস্ট। ট্রেন চলা শুরু হল। অন্ধকার গুহার ভিতর দিয়ে মৃদু আলোর ঝলক। স্যাঁতসেঁতে মেঝে, কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। গুহার নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে পিভকা নদী। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে গুহাভ্যন্তরে জলবিন্দু জমে জমে প্রকৃতির আপন খেয়ালে তৈরি হয়েছে বিচিত্র সব আকার। স্ট্যালাগমাইট ও স্ট্যালাকটাইটের আকারগুলি যেন নিপুণ হাতে খোদাই করা ভাস্কর্য! প্রায় দু’কিমি ট্রেন চলার পর শুরু হল পায়ে হাঁটা পথ। এক জায়গায় গাইড দৃষ্টি আকর্ষণ করালেন। দেখি একটা বিশাল অন্ধকার কাচের বক্সে বেবি ড্রাগন!

অবশেষে এলাম দ্য গ্রেট কনসার্ট হলে। গুহার মাঝে বড় একটা চত্বর। প্রকৃতির আপন খেয়ালে কী অপূর্ব শব্দ প্রক্ষেপণ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে! দেড় ঘণ্টা পোস্তনা গুহার রহস্যময়তায় কাটিয়ে অবশেষে বেরিয়ে এলাম শব্দ ও আলোর জগতে। ফেরার সময়ে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। কালই ছেড়ে যাব স্লোভিনিয়া। ঈশ্বর নিজের হাতে সাজিয়েছেন ছোট্ট এই দেশটিকে। ঠিক যেন জলরঙে আঁকা কোনও মাস্টারপিস!

অন্য বিষয়গুলি:

Slovenia Ljubljana travel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy