Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
দীপ্যমান এক শহর

চিনের সাংহাইয়ে হাত মিলিয়েছে সাবেকিয়ানা আর আধুনিকতা

গগনচুম্বী হাইরাইজ় থেকে ব্যস্ত রাস্তাঘাট... উড়ানে আমার মতো নিঃসঙ্গ যাত্রীর দিকে তাকিয়ে যে ছেলেমেয়ের দল চোখ কপালে তুলেছিল, তাদের সঙ্গেই ফের দেখা সাংহাই টাওয়ারে। একলা পথে হাঁটতে হাঁটতে একাত্ম হয়ে গেলাম ওদের সঙ্গেই।

আকাশছোঁয়া: হুয়াংপু নদীর ধারে বান্ড এলাকা থেকে সাংহাই টাওয়ারের ভিউ

আকাশছোঁয়া: হুয়াংপু নদীর ধারে বান্ড এলাকা থেকে সাংহাই টাওয়ারের ভিউ

ঈপ্সিতা বসু
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

মাত্র কয়েক সেকেন্ডে এলিভেটর পৌঁছে দিল সাংহাই টাওয়ারের ১১৮তম ফ্লোরে। কী আশ্চর্য! কোনও কোলাহল নেই। বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম অবজ়ারভেটরি ডেকের ও পারে ৩৬০ ডিগ্রি সাংহাই, আর আমরা দেশি-বিদেশি মিলে শ’দুয়েক পর্যটক। দূরে দাঁড়িয়ে শহরও যেন আমাদের দেখছে। সূর্য যখন টাওয়ারকে স্পর্শ করে, তখন তার আর এক রূপ। আর রাতের রঙিন আলোয় সে হয়ে ওঠে আরও মায়াবী।

উড়ানে আমার মতো নিঃসঙ্গ যাত্রীর দিকে তাকিয়ে যে ছেলেমেয়ের দল চোখ কপালে তুলেছিল, তাদের সঙ্গেই ফের দেখা সাংহাই টাওয়ারে। একলা পথে হাঁটতে হাঁটতে একাত্ম হয়ে গেলাম ওদের সঙ্গেই। ওরা কথা বলছে ম্যান্ডারিনে, আমি ইংরেজিতে। কিন্তু ভাব-ভঙ্গিতে মনের আদান-প্রদানে অসুবিধেই হল না। সফরের শুরু এমনই সুন্দর। অনেকটা সময় ছিলাম ওখানে। সূর্য তখন অস্তাচলে, এক দিকে দিনের আলো কমে আসছে, আবার অন্য দিকে একটি একটি করে জ্বলে উঠছে কৃত্রিম আলো। এই সন্ধিক্ষণই টাওয়ারের ইউএসপি। নেমে আসার পরে মনে হচ্ছিল, এ যেন সারা জীবনের সঞ্চয়।

সফর শুরু বেজিং থেকে। হাইস্পিড ট্রেনে। সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। বেজিং থেকে ঘণ্টায় ৩৪০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলছে ট্রেন। ঝড়ের মতো মিলিয়ে যাচ্ছে গ্রাম, বাড়ি, পাহাড়, টানেল, ঝর্না। ১২০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পেরোতে সময় লাগল পাঁচ ঘণ্টা! এখানকার রেলস্টেশন আমাদের দেশের যে কোনও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে পারে। প্রতি রেলস্টেশনের সঙ্গেই রয়েছে মেট্রোর যোগ।

সাবেক: সাংহাইয়ের ওল্ড স্ট্রিট

এই শহরটির দু’টি অংশ। সাবেকিয়ানা ও আধুনিকতা হাত ধরে হাঁটে। আর মাঝখানে হুয়াংপু নদী। প্রাচীন বিশাল অট্টালিকা থেকে হাল আমলের পার্ল টাওয়ার... সব মিলিয়ে বাঁধা গতের বাইরে এ এক অন্য শহর। সঙ্গে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা ব্রিজ, হাই স্পিড ম্যাগলেভ ট্রেন ও বুলেট ট্রেন। নতুন শহরের মাঝে পুরনো শহরটাকেও যত্নে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দ্রষ্টব্যগুলি ভাল করে দেখতে হলে দুটো দিন চাই-ই।

দিনের চেয়ে রাতের সাংহাই আরও সুন্দর। আর তা চাক্ষুষ করতে‌ই একবেলা সময় রাখি বান্ড অঞ্চলে। হুয়াংপু নদীর ধারে সাংহাইয়ের এটি স্পন্দন। বসার জন্য সুসজ্জিত বেঞ্চ। দিন বা রাত যে কোনও সময়ই হুয়াংপু নদীতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা মনে রাখার মতো। আছে আলো ঝলমলে ছোট ছোট স্টিমারে ভাসমান রেস্তরাঁ। সাধে কি আর একে বলে ‘এশিয়ার নিউ ইয়র্ক’! দুনিয়ার ব্যয়বহুলতম শহরগুলির মধ্যে অন্যতম সাংহাই। শহরের ইতিহাসও বেশ প্রাচীন। তবে কয়েক দশকে বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু এবং বিলাসে-ব্যসনে জাঁকজমকপূর্ণ শহর হয়ে ওঠার গল্পটা রূপকথাকেও হার মানায়। ওয়র্ল্ড ফাইনান্সিয়াল সেন্টার, ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ারের সৌন্দর্য ক্যামেরায় নয়, ধরা রইল মনে।

কেনাকাটা: নানজিং রোড মার্কেট

পরের দিনটা কাটল জেড বুদ্ধ টেম্পলে। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠলেই সাদা জেড পাথরে তৈরি দু’টি অনিন্দ্যসুন্দর মূর্তি। মন্দির চত্বরে রয়েছে চিনা চা পান করার স্টল। সাংহাই সফর শেষ হয় না মিং ও কিউয়িং রাজত্বে তৈরি ইউ গার্ডেন এবং ডিজ়নি ল্যান্ড ছাড়া। আর এখানকার শপিং অভিজ্ঞতার রেশ রয়ে গিয়েছে এখনও। বিশ্বের তাবড় ফ্যাশন ডিজ়াইনার ও ব্র্যান্ডের স্টোর নিয়েই গড়ে উঠেছে শিনথিয়ানদি শপিং স্ট্রিট, নানজিং রোড মার্কেট, ইউ ইউয়ান (ওল্ড স্ট্রিট)।

সাংহাইয়ের অলিগলিতে কী কম চমক? ডাম্পলিং, স্টার ফ্রায়েড ক্র্যাবের পাশাপাশি রয়েছে নানা ধরনের নুডলস। স্টোর থেকে কাঁচা আনাজ, মাছ, মাংস বেছে নিয়ে চোখের সামনে উনুনে বসানো পাত্রে সেগুলো সিদ্ধ হতে থাকল। তবে এই অথেন্টিক চাইনি‌জ় খাবার চেখে দেখতে গিয়েই প্রথম দু’দিন নাক বিদ্রোহ করে বসেছিল! চিনের অন্যান্য জায়গার তুলনায় সাংহাইয়ে স্পাইসি খাবারের চল রয়েছে বলে খাবার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে দ্বিধা করিনি। নারকেল মালার মধ্যে মিট বলের সুপ, জিয়াংবিং প্যানকেক... সব ক’টির স্বাদ অপূর্ব।

সাংহাই যুদ্ধের কঠিন সময় পেরিয়ে বিশ্বের কাছে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণ করেছে। এ শহরে মেট্রোর লাইনে ভিড়েও থাকে ধৈর্যের পরীক্ষা, গাড়িতে নো হর্নের নিয়মশৃঙ্খলা, ট্র্যাফিক আইন, পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট... এ শহর শুধু দেখার নয়, শেখারও।

অন্য বিষয়গুলি:

China Shanghai Travel Tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy