তাইল্যান্ড ঘোরা যাবে কম খরচে। শুধু জেনে নিতে হবে সঠিক উপায়। ছবি: সংগৃহীত।
সেই কোন ছোটবেলায় ‘কহো না প্যর হ্যায়’ দেখেছিলেন সুজন্যা। তখন থেকেই বরের সঙ্গে তাইল্যান্ড যাওয়ার শখ। বিয়ে হয়েছে। কিন্তু, সাধপূরণ হয়নি। বিদেশ যেতে বিপুল খরচ-খরচার ভয়েই পিছিয়ে যাচ্ছেন সুজন্যার স্বামী।
ভারতীয়দের বিদেশ ভ্রমণের তালিকায় তাইল্যান্ড পরিচিত নাম। আকাশছোঁয়া বহুতল, ঝাঁ চকচকে রাস্তা, নীল সাগর, বৌদ্ধ মন্দিরের টান অমোঘ। কিন্তু, খরচের ভয়ে অনেকেই পিছিয়ে যান। তবে জানেন কি, একটু পরিকল্পনা করলেই ভ্রমণের সাধপূরণ সম্ভব।
সম্প্রতি ভিসামুক্ত প্রবেশ নীতির মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করেছে ট্যুরিজ়ম অথরিটি অফ তাইল্যান্ড বা ট্যাট। ফলে তাইল্যান্ড যেতে আগামী বছরেও আর ভিসার জন্য খরচ লাগবে না ভারতীয়দের। জানা গিয়েছে, অনির্দিষ্ট কালের জন্য ভারতীয়দের জন্য এই নীতি বজায় থাকবে।
ফলে, আপাতত ভিসা খরচ নেই। আর কী কী পরিকল্পনা করলে বাকি খরচও কমিয়ে ফেলতে পারেন?
জায়গাটি সম্পর্কে ধারণা: বিদেশ-বিভুঁইয়ে কম খরচায় ভাল করে ঘুরতে হলে, জায়গাটি সম্পর্কে বিশদ জানতে হবে। কোথায় ঘোরা যায়, কী ভাবে ঘোরা যায়, কোন জায়গায় থাকলে গণপরিবহণ পাওয়া সহজ হয়। সে সব প্রথমে জেনে রাখুন। কেউ ফুকেটের নীল জলেই সময় কাটাতে চান, কারও আগ্রহ ব্যাংককের নৈশজীবনে। কী কী করতে চান, সেটি প্রথমে ঠিক করে নিন।
সময়: যে কোনও পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার মরসুম আছে। প্রথমেই দেখা দরকার কোন সময় পর্যটকদের ভিড় বেশি, কোনটি ‘অফ সিজ়ন’? খরচ কমাতে চাইলে যে সময় লোকজন কম যান, সেটি বেছে নিতে হবে। পর্যটকদের ভিড় কম হলে, ভাল হোটেলও সস্তা হয়। এমনকি, ঘোরার খরচও অনেকাংশে কমে যায়।
বিমান ভাড়া: তাইল্যান্ড যেতে গেলে বিমানই ভরসা। পর্যটন মরসুমে তাড়াহুড়োয় টিকিট কাটলে খরচ বেশি হবেই। তবে যদি অন্তত ৩ থেকে ৪ মাস আগে টিকিট কাটা যায়, খরচ কমানো সম্ভব। এক পিঠের টিকিট না কেটে একসঙ্গে যাওয়া-আসার টিকিট কাটলেও কম পড়ে। বিভিন্ন বিমান সংস্থা বিভিন্ন সময় ভাড়ায় ছাড় দেয়, সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেন। কলকাতা থেকে ব্যাংকক যেতে যাওয়া-আসা মিলিয়ে মাথা পিছু খরচ ১৫-২০ হাজার টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করে।
থাকার জায়গা: তাইল্যান্ডে থাকার জন্য প্রচুর হস্টেল রয়েছে। সেগুলি কিন্তু বিলাসবহুল হোটেলের মতোই । সুইমিং পুল, ওয়াইফাই পরিষেবা থেকে শুরু করে বহু কিছুই থাকে সেখানে। তবে এখানে একটি ঘরে একাধিক শয্যা থাকে। সে ভাবেই থাকতে হয়। একটি শৌচাগার একাধিক লোককে ব্যবহার করতে হয়। বহু বিদেশি এখানে হস্টেলে খাকেন। ব্যাংকক, ফুকেট, পাটায়া— তাইল্যান্ডের জনপ্রিয় তিন জায়গাতেই হস্টেল পাওয়া যাবে। চাইলে কোনও বাড়ি ভাড়া নিয়ে রান্না করেও খেতে পারেন। আবার সাধ্যের মধ্যে হোটেল বেছে নিতে পারেন। তবে, থাকার খরচ কমাতে চাইলে হস্টেল উপযুক্ত। হস্টেলে থাকার জন্য মাথা পিছু ১৫০০-২৫০০ টাকা খরচ পড়ে। কোনওটিতে সকালের খাবার এর মধ্যে ধরা থাকে।
খাওয়া: তাইল্যান্ডে গিয়ে ভারতীয় বা বাংলাদেশি রেস্তরাঁয় বাঙালি খাবার খুঁজতে গেলে গ্যাঁটের কড়ি ভালই খসবে। যে দেশে যাচ্ছেন, সেই দেশের স্থানীয় খাবার খেলে সস্তা হয়। রাস্তা থেকেও খাবার কিনতে পারেন। বিভিন্ন শপিং মল, খাবারের দোকান থেকে পছন্দমতো খাবার বেছে নিতে পারেন। যে কোনও রেস্তরাঁর চেয়ে খাবারের দোকান থেকে খাবার কিনলে খরচ কমানো সম্ভব।
গণ পরিবহণ: বিমানবন্দর থেকে হোটেল বা হস্টেলে যেতে হবে, গাড়ি ভাড়া করতে গেলেই মোটা টাকার ধাক্কা। তার বদলে দেখে নিন, যে জায়গাটিতে যাবেন, তার কাছাকাছি স্কাই ট্রেন আছে কি না? তাইল্যান্ডের শহরাঞ্চলে চলেছে এমআরটি, বিটিএস স্কাইট্রেন। স্কাইট্রেন অনেকটা ভারতের মেট্রোর মতো। শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খুব সহজেই এতে যাওয়া যায়, খরচও বাঁচে। শহর ভ্রমণের জন্য বাইক বা স্কুটার ভাড়া নিতে পারেন। লাইসেন্স থাকলেই ভাড়ায় পাওয়া যায় না। তবে বিদেশের রাস্তায় বাইক ছোটানোর আগে সেখানকার ট্রাফিক আইন জেনে নিতে ভুলবেন না।
প্যাকেজ: ফুকেট থেকে জেম্স বন্ড আইল্যান্ড, ফিফি আইল্যান্ড যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ রয়েছে। পছন্দমতো কোনও প্যাকেজ় সেখানে গিয়েও বুক করে নিতে পারেন। এতে গাড়ি, ঘোরা এবং খাওয়া নিয়ে খরচ অনেকটাই কম হয়। শুধু ঘোরা নয়, তাইল্যান্ডের সংস্কৃতি জানতে হলে এখানকার নাচ, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে নিতে পারেন। দেখে নিন, কোথা থেকে কী ভাবে বুকিং করলে অর্থ সাশ্রয় হবে?
ট্রেন এবং বাস: ব্যাংকক থেকে পাটায়া, ফুকেট যাওয়ার জন্য বাস ধরতে পারেন। ব্যাংককেই রয়েছে বাস স্ট্যান্ড। গাড়ির চেয়ে বাসে অনেক কম খরচে পৌঁছনো যায়। ফুকেট অনেকে বিমানে যান। খরচ কমাতে চাইলে অবশ্য বাস ভাল। ব্যাংকক থেকে চিয়াংমাই, চিয়াংরাইয়ের মতো জায়গাগুলিতে যাওয়ার জন্য ট্রেন বেছে নিতে পারেন।
দিন: যে কোনও ভ্রমণের খরচ নির্ভর করে কত দিন ঘুরবেন, কী ভাবে ঘুরবেন তার উপর। মোটামুটি ব্যাংকক, পাটায়া এবং ফুকেট দিন সাতেকে ঘোরা যায়। তবে খুব ভাল ভাবে ঘুরতে আরও বেশি দিন লাগে। কতটা খরচ করতে পারবেন তা বুঝে দিনের হিসাব করুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy