Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
travel

অসমের পবিতোরার জঙ্গলে

অসমের অন্যতম জঙ্গল পবিতোরা। রাইনোসরাস ও পরিযায়ী পাখির আনাগোনাই পর্যটকদের ভিড় বাড়িয়ে চলেছে। লিখছেন অস্মিতা সরকারঅসমের অন্যতম জঙ্গল পবিতোরা। রাইনোসরাস ও পরিযায়ী পাখির আনাগোনাই পর্যটকদের ভিড় বাড়িয়ে চলেছে। লিখছেন অস্মিতা সরকার

সবুজের মাঝে, সবুজের সাথে

সবুজের মাঝে, সবুজের সাথে

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ১২:৫২
Share: Save:

ঘুরতে যাওয়ার প্রথম শর্তই ছিল কোনও নতুন জায়গা খুঁজে বার করা। গুয়াহাটি পৌঁছেই শুরু হল খোঁজখবর। স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকে শুনে ঠিক করে ফেললাম আমাদের গন্তব্য পবিতোরা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি। কাজ়িরাঙার চেয়ে ছোট হলেও এই স্যাংচুয়ারিতে পর্যটকের ভিড় নেই। বরং ভিড় লেগে থাকে রাইনো ও পাখিদের।

পরের দিন সকাল সকাল যাত্রা শুরু হল। সারাটা দিনই প্রায় কাটবে গাড়িতে। পবিতোরা ঘিরেই রয়েছে বেশ কিছু গ্রাম, যাদের গল্প শুনে লোভ সামলাতে পারলাম না। সে গল্পে অবশ্য পরে আসছি। হোটেলের কর্মীদের পরামর্শে গাড়িতেই মজুত রাখলাম লাঞ্চ। ছোটবেলার চড়ুইভাতির গন্ধ সঙ্গে দিয়ে রওনা হলাম। নারাঙ্গি-চন্দ্রপুর ও দিগারু গ্রামের পথ ধরে গাড়ি ছুটল। চালকের কথা শুনে এই পথ ভাগ্যিস ধরেছিলাম! কিছু দূর যেতেই পার হল পানিখেতি রেলওয়ে স্টেশন। তার পর থেকেই গাড়ির পাশে পাশে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র।

নদের ধার ধরে এসে পৌঁছলাম চন্দ্রপুর গ্রামে। গুয়াহাটির ইলেকট্রিক্যাল সাব-স্টেশন এই গ্রামের ডেয়ারি ফার্ম দেখে এগোলাম গন্তব্যের দিকে। পথে পড়ল দিগারু গ্রাম। গ্রামের রাস্তা ধরে ছুটে চলেছে স্থানীয় বাচ্চারা। কচি সবুজ এই গ্রামে থাকার জন্য রিসর্টও রয়েছে। আছে চা বাগান। তবে দিগারুতে বেশি সময় কাটালে আবার পবিতোরায় থাকার সময় কমে যাবে। তাই দিগারু ও স্থানীয় গ্রামগুলিকে পরের দিনের গন্তব্য তালিকায় রেখে পবিতোরাই আপাতত লক্ষ্যে রেখে এগিয়ে চললাম। চারপাশের ঘাস লম্বায় বাড়তে শুরু করেছে। উঁচু-নিচু জমির ঢালে শরীর বেঁকেচুরে এসে নামলাম পবিতোরা। সৌভাগ্যবশত, তখন সেখানে চলছিল পবিতোরা উৎসব। স্থানীয় মানুষ সেখানে তাঁদের পশরা সাজিয়ে বসেছেন। হাতে বোনা কাপড়, চাদরের সঙ্গেই রয়েছে সুস্বাদু খাবারের সম্ভার। সকালে ব্রেকফাস্টও ভাল করে খাওয়া হয়নি। সুতরাং খিদে মিটল মেলার লুসি-ভাজি, শিরা ও দই দিয়ে। বাঙালি লুচির ভাই বলা যায় লুসিকে। তবে এই লুসির মণ্ড মাখার সময়ে ময়দায় মেশানো হয় কালো জিরে। আর ঝিরি ঝিরি করে কাটা আলু, টম্যাটোর গরম গরম ঝোলের উপরে ছড়ানো কচি ধনে পাতা যেন খিদে বাড়িয়ে দিল বহু গুণ। পেট পুরে খেয়ে, ব্যাগ ভরে শপিং সেরে পা বাড়ালাম জঙ্গলের দিকে।

পানিমুর জলপ্রপাত

শুরু হল জিপ সাফারি। কিন্তু বেশ অবাক হলাম। জঙ্গল কই! দু’পাশে হাঁটুর সমান ঘাস বই তো কিছুই চোখে পড়ছে না। রাগ হচ্ছে। স্বামীও মজা করছেন, নতুন জায়গা বাছতে গিয়ে কোথায় এনে ফেলেছি তাঁকে। কিন্তু সে মজা জমল না। কারণ কিছুটা এগোতেই মাঝেমাঝে দেখা দিতে শুরু করল জলাশয় ও তার ধারে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। পক্ষিপ্রেমী স্বামী ক্যামেরার লেন্স বাগিয়ে ছুটলেন সে দিকে। আরও কিছু দূর যেতে পাখির সংখ্যা বাড়তে লাগল। পায়েড হ্যারিয়র, পার্পল হেরন, ব্ল্যাক বিটার্ন... কে নেই সেই তালিকায়। চালকের কাছ থেকে জানতে পারলাম এই জঙ্গল তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথমার্ধ ঘাসজমি, যা পেরিয়ে এসেছি। দ্বিতীয়ার্ধে রয়েছে জলাশয় বা বিল, যেখানে দেখা মেলে হাজারখানেক পাখির। আর শেষার্ধে রয়েছে আসল জঙ্গল, যার গহীনে দেখা মিলতে পারে চিতা, বনবিড়াল, বুনো শুয়োর ও চিনা প্যাঙ্গোলিনের।

বিলের পাখিদের ক্যামেরাবন্দি করে আরও কিছুটা এগোতেই এ বার জঙ্গল মালুম হল। তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে, তার সঙ্গে আলোও। জঙ্গল বলে না ভয়ে জানি না, বেশ শীত-শীত লাগতে শুরু করেছে। গাছপালার ভিড়ের মাঝখান দিয়ে এগোতেই চোখে পড়ল একশৃঙ্গ গণ্ডারের। কোথাও একা, কোথাও দোকা, কোথাও আবার দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। পিঠের উপরে বসে পাখি। কিন্তু তাতে তাদের কিচ্ছু যায়-আসে না। নিজের মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে জঙ্গলে। তবে চিতার দেখা মিলল না।

ফিরতি পথে পৌঁছলাম মেয়ং গ্রামে। অনেক গল্প শুনেছি এই গ্রামের। মায়াবি এই গ্রামে এখনও নাকি চলে ব্ল্যাক ম্যাজিক। তবে গ্রামে তেমন জাদুতে পারদর্শী কোনও মানব বা মানবীর দেখা মিলল না। স্থানীয়দের কাছে জানা গেল, তাঁদের পাওয়া যাবে ওই গহীন জঙ্গলেই।

বিকেল ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু বেড়ানো আর শেষ হয় না। খবর পেয়েছি এখান থেকে কাছেই আছে সুয়ালকুচি গ্রাম। মুগা, এরি সিল্ক ও সাদা পাটের জন্য যে গ্রাম বিখ্যাত। বহু দিনের ইচ্ছে অথেন্টিক মেখলা-চাদর কেনার। সুতরাং গাড়ির চাকার আগে মন ছুটল সেই গ্রামে। সোনালি পাড়ওয়ালা বেজ রঙের মেখলা কিনে পা বাড়ালাম ফিরতি পথে। পিছনে পড়ে রইল পবিতোরার গহীন জঙ্গল, যার ভিতরে কোনও মানবী হয়তো জাদুস্পর্শে সেই আধো অন্ধকারেও জাগিয়ে রেখেছে জঙ্গলের প্রাণীদের। তাদের কণ্ঠস্বরই যেন পিছু ডাকতে লাগল...

পানিমুর জলপ্রপাত

হাফলং থেকে ১২০ কিমি দূরত্বে অবস্থিত এই জলপ্রপাত। কোপিলি নদী পাথুরে পথে সফেন দুধের মতো যেখানে আছড়ে পড়ছে, সেখানে এর নাম হয়েছে পানিমুর জলপ্রপাত। সবচেয়ে কাছের স্টেশন লামডিং। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন কোপিলির ধারে। জলপ্রপাতের ধারে থাকার জায়গা বলতে ফরেস্ট ইনস্পেকশন বাংলো। তবে তা বুক করতে হয় আগে থেকে। কাছেই ঘুরে আসতে পারেন মাইবং ও উমরাংসো গ্রাম থেকে।

অন্য বিষয়গুলি:

travel Assam Panimur falls Chandrapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy