Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
travel

মায়াময় ধাকুরি পাস

কুমায়ুনের বুকে পাহাড়ি নিস্তব্ধতা জড়ানো এই পাস।

প্রশান্তি: ধাকুরি পাস

প্রশান্তি: ধাকুরি পাস

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৯
Share: Save:

হিমালয়ের বুকে এমন অনেক ঠিকানা আজও রয়েছে যেখানে মানুষের ভিড় কম, যেখানে প্রকৃতি আত্মমগ্ন হয়ে সৌন্দর্যের আঁকিবুকি কাটে প্রত্যহ। এমনই এক গন্তব্য, ধাকুরি পাস। উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন হিমালয়ের বাঘেশ্বর জেলায় এই পাস।

ধাকুরি পাসে যেতে হলে কাঠগোদাম অথবা হলদোয়ানি স্টেশন থেকে বাঘেশ্বর পৌঁছতে হবে। গোমতী আর সরযূ নদীর সঙ্গমস্থল বাঘেশ্বর ‘বাঘনাথ শিব’-এর কারণে বিখ্যাত। শিবের মন্দির ছাড়াও রয়েছে চণ্ডিকা মন্দির, শ্রীহারুর মন্দির, গৌরী উদিয়ার গুহামন্দির। এখান থেকে বাস অথবা জিপে করে যেতে হয় কাপকোট পেরিয়ে সঙ-এ। সেখানে মিলবে ক্ষীণকায়া রেবতী গঙ্গার দর্শন। এর পর হাঁটা পথে বা জিপে লোহারখেত গ্রাম। পাহাড়ের কোলে রং-বেরঙের সুদৃশ্য বাড়ি, বাড়ি লাগোয়া অজস্র ফুলের বাগান আর চাষজমি নিয়েই লোহারখেত। গ্রামের মানুষেরা লোহার মতো পাথুরে মাঠিতে ফসল ফলানোর নিরন্তর প্রচেষ্টা করে চলেন। আপার লোহারখেত থেকে শুরু হয় ট্রেকিং পথ। বুগিয়াল পার করে, অতঃপর কঠিন চড়াইয়ের

১১ কিলোমিটার পথ পৌঁছবে ধাকুরি খালে, যাকে ধাকুরি টপও বলা হয়। এখান থেকে এবড়োখেবড়ো পাথর বসানো পথে এক কিলোমিটার নীচে নামলে ধাকুরি গঞ্জ। সবুজ ঘাসে মোড়া এই গঞ্জ একটি মাঠের মতো। এক প্রান্তে রডোডেনড্রন, ফার, জুনিপার আর পাইন গাছের সমারোহ। অন্য প্রান্তে রয়েছে পিডব্লিউডি বাংলো ও কেএমভিএন কটেজ। এর পরে শানবাঁধানো বসার জায়গা, তার পর শুধুই গভীর গিরিখাত আর শ্যামলবর্ণা পর্বতরাজির আনমনে ওঠা নামা। কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে বালিজুড়ি, নন্দা খাট, চাঙ্গুজ, পাওয়ালিধর, নন্দাকোট, মাইকতলি প্রভৃতি বিখ্যাত শৃঙ্গগুলি।

ধাকুরি থেকে পাথুরে এক পথ গিয়েছে সুন্দরডুঙ্গার দিকে। অন্য পথ খাতি গ্রাম পার করে নিয়ে যায় পিণ্ডারি হিমবাহে। পিণ্ডারি যাওয়ার পথে দোয়ালি থেকে কাফনি হিমবাহও ঘুরে আসা যায়। তবে যাঁরা কষ্টকর ট্রেকিংয়ে অভ্যস্ত নন, তাঁরা অনায়াসেই ক’দিন থেকে যেতে পারেন ধাকুরি গঞ্জে। যদি পিডব্লিউডি বা কেএমভিএনের কটেজ বুকিং নাও পাওয়া যায়, তবু থাকার বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। কেএমভিএন-এর কেয়ারটেকার সবুজ ঘাসজমির উপরে টেন্টের ব্যবস্থা করে দেন।

দুপুর শেষ হতেই পাস দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। গাইড, পোর্টাররা মাঠের এক প্রান্তে জড়ো হতে আরম্ভ করেন। ঘাসে গা এলিয়ে তাঁরা শুরু করেন খোশগল্প। তাঁদের কথায় উঠে আসে কষ্টকর, অনাড়ম্বর পাহাড় জীবনের নানা গল্প। তাঁদের কাছ থেকেই জানা যায়, কাছাকাছি কোথায় বরফ পড়ছে, কোথায় গেলে বরফরাজ্যে প্রবেশ করা যাবে ইত্যাদি। তাঁদের পোষ্য ঘোড়াগুলো আনমনে ঘুরে বেড়ায় ধাকুরির দীর্ঘ ঘাসজমি জুড়ে। তাদের গলায় বাঁধা ঘণ্টির টুং-টুং শব্দ আর পাহাড়ি মানুষের গলায় কুমায়ুনি গান শহুরে মনের ভারকে লাঘব করে দেয়।
ধাকুরিতে বিকেল পড়তেই শুরু হয় মেঘ-কুয়াশার খেলা। তখন সকলে ভিড় করেন মাঠের এক দিকে এক চায়ের দোকানে। পার্বত্য গঞ্জে ওই একটি মাত্র দোকান। জলখাবারও মিলবে সেখানে। প্রয়োজনে দু’জন মানুষের থাকার বন্দোবস্তও আছে দোকান লাগোয়া একটি ঘরে।

সন্ধের ডাক এলে কাটতে থাকে মেঘ-কুয়াশার চাদর। সূর্যের আবির রং লেগে থাকে শ্বেতশুভ্র হিমানীশিখর ঘেরা পুঞ্জীভূত মেঘে। একে একে সেই মেঘগুলোও এক সময়ে সরে যায় পর্বতচুড়ো থেকে। তখন ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো জেগে ওঠে গিরিরাজ। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে মেঘমুক্ত আকাশে ধাকুরি পাস থেকে চন্দ্রালোকে নিমজ্জিত গিরিশৃঙ্গ দেখার বিরল অভিজ্ঞতা হতে পারে।

সকালের দিকে সাত কিলোমিটার চড়াই ভেঙে দেখে নেওয়া যায় নন্দাদেবীর মন্দির। ইচ্ছে হলে, ধাকুরি থেকে যাওয়া যায় খাতি গ্রামে। বরফচূড়াগুলোকে ধ্রুবতারার মতো রেখে অনেক বসতি পেরিয়ে যায় এই পথ। চোখে পড়বে বাচ্চাদের রোমশ বকরি নিয়ে প্রাণোচ্ছল খেলা। সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে স্রোতস্বিনী পিণ্ডারি নদীর। পিণ্ডারির হাত ধরে এক সময়ে গহন অরণ্যের রাস্তা ধরতে হবে। শাল, পাইন, খয়ের, টিক, হলুদ, শিমাম গাছের ঘনঘটা। পিণ্ডারি হিমবাহ যাওয়ার পথে শেষ গ্রাম হল খাতি। পিডব্লিউডি বাংলো এবং পর্যাপ্ত হোম স্টের বন্দোবস্ত আছে এই গ্রামে। খাতি গ্রামের মানুষজন নিরামিষভোজী। খাবারের মধ্যে পাওয়া যায় খিচুড়ি, রুটি, সবজি, পাঁপড় আর আচার। রাতের বেলায় হাড়-কাঁপানো শীতে পর্যটকদের ডেকে নেওয়া হয় হোমস্টে’র রান্নাঘরে। সেখানেই চলে খাওয়াদাওয়া, গানবাজনা। সঙ্গে উনুনের তাপে শরীর গরম করার সুযোগটুকুও মেলে।

অন্য বিষয়গুলি:

travel The Himalaya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy