আউশগ্রামের জলটুঙ্গির সৌন্দর্য ফুটে ওঠে সন্ধ্যা হলে। ছবি: সংগৃহীত।
দুর্গাপুজো মানেই মনের মতো সাজ, মণ্ডপে মণ্ডপে টহল, খাওয়া-হুল্লোড়, দেদার আড্ডা। পুজো মানেই ছুটির মেজাজ। তবে ছুটি উপভোগে এক এক জনের পছন্দ এক এক রকম। কেউ এই সময় উৎসবমুখর শহর ছেড়ে বাইরে পা ফেলতেই চান না। আবার কেউ চান একটু ঘোরাঘুরি, শরতের মেঘ, কাশের বন দেখতে গ্রামবাংলার পথঘাটে বেরিয়ে পড়তে।
কলকাতার আশপাশে এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে গিয়ে সে দিনেই ফিরে আসা যায়। এমন একটি জায়গা পূর্ব বর্ধমানের ওড়গ্রাম। পাশেই রয়েছে আউশগ্রাম।
একটা দিন সময় করে সকালবেলাতেই চারচাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। শহুরে কোলাহল ছেড়ে বেরোলেই পাবেন প্রকৃতির সান্নিধ্য। নীল আকাশে পেঁজা তুলোট মেঘের আনাগোনা। আর রাস্তার পাশে কাশের বন। রাস্তায় যেতে যেতে ঠাকুর দেখাও হয়ে যাবে। গ্রামীণ পুজোর সেই স্বাদ শহরে বসে পাওয়া যাবে না।
কলকাতা থেকে গাড়ি ছোটাতে হবে বর্ধমানের দিকে। ডানকুনি হয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। পিচের ঝকঝকে রাস্তা। পালসিট আসার বেশ কিছু ক্ষণ আগে থেকেই আপনাকে স্বাগত জানাবে রাস্তার পাশে সাদা কাশের দল। এক-আধটা নয়, চারদিক শুধু সাদা আর সাদা। সেই রং ফুরোতে না ফুরোতেই দেখা মিলবে ঘন সবুজের। রাস্তার পাশেই ক্ষেত। সেখানেই হয়ে ঘন সবুজ ধানগাছ। এই পথে খানিক জিরিয়ে নিতে চাইলে, পেয়ে যাবেন ধাবা, বড়সড় রেস্তরাঁও।
তবে যদি চা-পানের বিরতি চান, তা হলে সোজা ঢুকে পড়তে হবে শক্তিগড়ে। সেখানে আবার ল্যাংচার হাতছানি। ল্যাংচা ভবন, মহল, প্যালেস... কত কী তাদের নাম!
ল্যাংচা, মিহিদানায় রসনাতৃপ্তি করে শক্তিগড় ছাড়িয়ে বর্ধমান পার করে ডান দিকে ঢুকে পড়তে হবে শান্তিনিকেতন যাওয়ার রাস্তায়। এই রাস্তাতেও সবুজের বাহার কম নয়। মাঝেমধ্যেই মাথা দোলায় কাশের দল। সেলফি তোলার জন্য সব জায়গাই আদর্শ। বেড়াতে বেরিয়েছেন, তাই যেখানে ইচ্ছা দাঁড়িয়ে পড়তে পারেন। অনায়াসে ঢুকে পড়তে পারেন কাশের বনে। খোলা আকাশের নীচে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারেন।
খানিক হইহুল্লোড় সেরে ফের চেপে বসতে হবে গাড়িতে। গন্তব্য ওড়গ্রাম। গ্রামে রয়েছে জঙ্গল। সেই জঙ্গলের মধ্যে পরিত্যক্ত বিমানঘাঁটি। স্থানীয়েরা একে বলেন ‘চাতাল’। ওয়েব সিরিজ় ‘ডাকঘর’-এর শুটিং হয়েছিল ওড়গ্রামেই।
পূর্ব বর্ধমানের ভাতার ব্লকে গ্রামটি। ওড়গ্রামের জঙ্গলে পৌঁছনোর পথের হদিস পেতে কাছাকাছি গিয়ে গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন। ওড়গ্রামের জঙ্গলের ভিতরে চারচাকা নিয়ে যাওয়া যায় বটে, তবে বড় গাড়ি হলে একটু অসুবিধা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জঙ্গলে আনাচকানাচে পায়ে হেঁটেই ঘুরতে হবে।
ঘোরার জায়গা বলতে পাবেন ধানজমি, চাষের ক্ষেত আর পরিত্যক্ত ‘চাতাল’। তবে শহরের কংক্রিটের জঙ্গলের বাইরে যে কোনও খোলা প্রান্তরই ভাল লাগবে, হলফ করে বলা যায়। ওড়গ্রামেই রয়েছে একটি হোটেল এবং রেস্তরাঁ। দিনভর ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা থাকলে এই রেস্তরাঁতেও দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
ঘণ্টা তিনেকে এই এলাকাটি ঘুরে নিতে পারবেন। বিকেলের দিকে গাড়ি ছুটিয়ে দিন আউশগ্রামে, জলটুঙ্গির দিকে। জলটুঙ্গি আসলে এক জলমহল। বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদ তাঁর স্ত্রী রাজেশ্বরীকে খুশি করতে এটি তৈরি করিয়েছিলেন।
জলটুঙ্গির সৌন্দর্য উপভোগের সময় সন্ধ্যা। যখন প্রকৃতির আলো ফুরিয়ে যায়, তখন জলটুঙ্গিতে সযত্নে সাজানো আলো জ্বলে ওঠে। আঁধারে সেই আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে জলমহল। সেই রূপ দেখার মতো।
জলটুঙ্গি দেখে পাশেই তৈরি হওয়া রিসর্টে সান্ধ্য চা-জলখাবার খেয়ে ফেরার পথ ধরতে পারেন। চাইলে সেখানে রাত্রিবাসও করতে পারেন।
যেতে কত ক্ষণ সময় লাগবে?
কলকাতা থেকে ওড়গ্রামের দূরত্ব ১৩১ কিলোমিটার। আউশগ্রামের দূরত্ব ১৪১ কিলোমিটার। ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন সেখানে।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে ডানকুনি হয়ে ধরতে হবে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। সিঙ্গুর, ধনেখালি, গুড়াপ, জৌগ্রাম, পালসিট, শক্তিগড় হয়ে বর্ধমান। নবাবহাট মোড় থেকে সিউড়ি রোড দিয়ে সোজা গেলেই পৌঁছনো যাবে ওড়গ্রামে। সেখান থেকে গুসকরা হয়ে আউশগ্রাম।
কোথায় থাকবেন?
কলকাতা থেকে সকালে বেরোলে সারা দিন ঘুরে রাতেই ফিরে আসা যাবে। যদি থাকতে চান, ওড়গ্রামে জঙ্গলের ভিতরে একটি রিসর্ট আছে। আউশগ্রামে জলটুঙ্গির পাশেই একটি থাকার হোটেল রয়েছে।
আর কী দেখবেন?
এখান থেকে ভালকিমাচান বেশ কাছেই। ভালকিমাচান, গড়জঙ্গল ঘুরে নিতে পারেন। বর্ধমানে আসার সময় নবাবহাট ১০৮ শিবমন্দির পড়বে। সেখানেও কিছুটা সময় কাটাতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy