নীলিমা: প্রচিদা দ্বীপের প্যানোরোমিক ভিউ
রোম শহর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ প্রচিডা। অনেকের মতে, মাত্র ৪.১ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপটি হল গাল্ফ অব নেপলসের গুপ্ত বিস্ময়। বাস বা গাড়িতে রোম থেকে নেপলস (নাপোলি) পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা, ট্রেনে লাগে আরও কম। নেপলস-এর পোর্ট মলো বেভেরেল্লো থেকে জলপথে ৪০ মিনিটেই প্রচিদা।
এ হল এক বর্ণময় দ্বীপ, ভেনিসের কাছে বুরানো বা মুরানো দ্বীপেও দেখা যায় হরেক উজ্জ্বল রঙের বাড়ি। কিন্তু প্রচিদা অন্য রকম। চারদিকে জল কিন্তু দ্বীপের মধ্যে রয়েছে বেশ চড়াই উতরাই। ভৌগোলিক টোপোগ্রাফির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সারি সারি অপূর্ব প্যাস্টেল রঙের বাড়ির এক অদ্ভুত সমাহার এই দ্বীপ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই প্রচিদা ছাপিয়ে যেতে পারে প্রতিবেশী অপেক্ষাকৃত বড় দ্বীপ ইসকিয়া অথবা ইটালির বিখ্যাত কাপ্রি আইল্যান্ডকেও। পর্যটকদের অপেক্ষাকৃত কম আনাগোনাও নিঃসন্দেহে বাড়িয়ে তোলে প্রচিদার আকর্ষণ। পায়ে হেঁটে সহজেই ঘুরে দেখা যেতে পারে এই আইল্যান্ড, ব্যবস্থা আছে ছোট বাস, ট্যাক্সি এবং সাইকেল ভাড়া করারও। এখানে নেই টুরিস্ট লজের ভিড় কিন্তু তীরবর্তী বেশ কিছু রেস্তরাঁর লোভনীয় সিফুড এবং লিমনচেল্লো বা ওয়াইন সহযোগে প্রচিদা হয়ে উঠতে পারে এক খাঁটি ইটালিয়ান অভিজ্ঞতা।
স্থাপত্য: মার্টার্স স্কোয়ারে চার্চ সান্তা মারিয়া দেল্লা গ্রাৎজ়ি
অগস্ট মাসের এক রোদ ঝকঝকে দিনে সুযোগ হয়েছিল প্রচিদায় কিছুটা সময় কাটানোর। নেপলস থেকে ফেরিতে করে প্রথমে পৌঁছলাম সেখানকার মারিনা গ্রান্দে, আইল্যান্ডের ব্যস্ততম জায়গা। পোর্টে নেমে কূলবর্তী রাস্তা ভিয়া রোমা ধরে বাঁ দিকে কিছু দূর এগিয়ে দেখতে পেলাম হলুদ রঙের চার্চ সান্তা মারিয়া দেল্লা পিয়েতা। চার্চের সামনেই মারিনা স্কোয়ার আর তার পাশের নীল জলরাশিতে ভাসছে ছোট-বড় আকারের বোট, যার মধ্যে বেশির ভাগই মাছ ধরার। স্কোয়ার থেকে আইল্যান্ডের মধ্যে চলে গিয়েছে ভিয়া ভিত্তোরিয়ো ইমানুয়েল, এই রাস্তা ধরে চলতে থাকলাম। প্রচিদা হল এমন এক জায়গা যেখানে পরিকল্পনাহীন ভাবে ইটালিয়ান অলিগলির আনাচকানাচে হারিয়ে যাওয়া যায়। চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম মার্টার্স স্কোয়ারে বারোক স্টাইলের চার্চ সান্তা মারিয়া দেল্লা গ্রাৎজ়ির সামনে। চার্চটির জুতসই অবস্থান এবং সৌন্দর্যের জন্য এটি হয়ে উঠেছে এই দ্বীপের অন্যতম দ্রষ্টব্য। এখান থেকে নীচের দিকে রাস্তা চলে যায় মারিনা করিচেল্লার দিকে আর উল্টো দিকের চড়াই রাস্তা সালিতা কাস্তেল্লো যায় মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের নিদর্শন ওয়ালড সিটি টেরা মুরাটার দিকে। বেলভদেরে অব টেরা মুরাটা থেকে বে অব নেপলস আর রঙিন মারিনা করিচেল্লার অসাধারণ যে দৃশ্য সে দিন দেখেছিলাম, তা ভোলার নয়।
টুকিটাকি
বেড়ানোর আদর্শ সময় এপ্রিল থেকে জুন বা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর। অগস্টে অনেকে যান, তবে গরম পেতে পারেন। এখানকার পিৎজ়া, পাস্তা ও লিমনচেল্লো অবশ্যই চেখে দেখার
টেরা মুরাটা আপনাকে নিয়ে যেতে পারে অন্য এক ঐতিহাসিক সময়ে। এর দুই মূল আকর্ষণ হল অ্যাবি স্যান মিকেলে আর্কান্জেলো এবং পালাৎজো দাভালোস, এর মধ্যে দ্বিতীয়টি একটি ষোড়শ শতাব্দীর রাজপ্রাসাদ যা পরবর্তী কালে পরিণত হয়েছিল কারাগারে। পরবর্তী গন্তব্য ছিল মারিনা করিচেল্লা। চার্চের ঘণ্টার আওয়াজ শুনতে শুনতে স্কালাতিনেল্লি বা উঁচুনিচু সিঁড়ি রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে পৌঁছে গেলাম দ্বীপের সবচেয়ে পুরনো গ্রাম করিচেল্লায়। দূর থেকে যে রঙিন বাড়িগুলি দেখছিলাম, তার বেশির ভাগ এই জেলেদের গ্রামের অংশ। জানলাম, সমুদ্র থেকে নিজেদের বাড়ি খুঁজে পাওয়ার জন্যই বিভিন্ন রঙের ব্যবহার। কাছেই ছিল, স্পিয়াজ্জিয়া (বিচ) কিয়াইয়া, ফেরার তাড়া থাকায় না দেখা রয়ে গেল বেশ কিছু বিচ। করিচেল্লা বা মারিনা গ্রান্দে দুই জায়গাতেই রয়েছে সিফুড, পিৎজ়া, পাস্তা চেখে দেখার সুযোগ। কথা দিতে পারি, এই স্বাদ মিলবে না ইটালির অন্য কোনও বড় শহরে। অগস্ট মাসের রোদের তেজে ব্যক্তিগত উপলব্ধি, আরও কম গরমের সময়ে গেলে ভালই হত। আরাম করে দেখার জন্য অন্তত দু’দিন লাগবে। তবে জায়গাটি সম্বন্ধে ধারণা পেতে এক দিনের ট্রিপও খারাপ নয়।
যাতায়াতের পথে সময় থাকলে নেপলসের পিয়াৎজ়া গ্যারিবল্ডি যেতে ভুলবেন না। আরও গুরুত্বপূর্ণ দূরের মাউন্ট ভিসুভিয়াসের দৃশ্য দেখতে দেখতে আসল পিৎজ়া নাপোলিতানা খাওয়া। স্বপ্নের মতো দ্বীপ প্রচিদার এমন জাদু যে, এক বছর পরেও চোখে ভেসে ওঠে নিখুঁত ছবি। মন ভরে যায় এক অনির্বচনীয় ভাল লাগার রেশে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy