Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

জেলে গেলেন সম্পাদক

জেমস অগাস্টাস হিকি। আঠেরো শতকের কলকাতায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্রের প্রাণপুরুষ। নিজের ছাপাখানা, কাগজও নিজের। লিখতেন ইংরেজদের দুর্নীতি, মানুষের অধিকারের খবর। প্রশাসক হেস্টিংসের কোপে নিলাম হল প্রেস। সেই শুরু। খুব কি দিন বদলেছে?জেমস অগাস্টাস হিকি। আঠেরো শতকের কলকাতায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্রের প্রাণপুরুষ। নিজের ছাপাখানা, কাগজও নিজের। লিখতেন ইংরেজদের দুর্নীতি, মানুষের অধিকারের খবর। প্রশাসক হেস্টিংসের কোপে নিলাম হল প্রেস। সেই শুরু। খুব কি দিন বদলেছে? স্বাতী ভট্টাচার্য

ছবি: কুনাল বর্মণ

ছবি: কুনাল বর্মণ

স্বাতী ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

বাড়ি ঘিরে ফেলেছে পুলিশ। জানলার খড়খড়ি ফাঁক করে উঁকি দিয়ে বাড়ির মালিক দেখলেন, সাদা উর্দির বুকে সাঁটা দুটো অক্ষর। সি পি। ক্যালকাটা পুলিশ। নেটিভপাড়ায় এত সাদা চামড়ার পুলিশ দেখে জুটে গিয়েছে আরও কয়েকশো লোক।

গেট ভেঙে পুলিশ ঢুকতেই বেরিয়ে এলেন গৃহকর্তা। হাতে খোলা তরোয়াল। ‘‘এক পা এগোলে কেটে ফেলব। কে পাঠিয়েছে?’’ উত্তর এল, ‘‘স্যর এলাইজা ইম্পি, সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস।’’

‘‘কোর্টে ফিরে প্রধান বিচারপতিকে আমার সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানাও। বলো, আমি পোশাক পরে তৈরি হয়ে আসছি।’’ পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর যখন পৌঁছলেন, তত ক্ষণে উঠে গিয়েছেন জজ সাহেবরা। জামিন হল না। ভারতের প্রথম সংবাদপত্র ‘হিকিজ় বেঙ্গল গেজেট’-এর সম্পাদক জেমস অগাস্টাস হিকি ঢুকলেন জেলে।

জেলে অবশ্য তাঁকে যেতে হয়েছিল এর আগেও। এক অর্থে তাঁর কাগজের শুরুটাই জেলে। ঠিক শুরু নয় অবশ্য। শুরুর শুরু।

কপাল ফেরাতে কলকাতা আসেন হিকি। সেটা ১৭৭৩ সাল। যা ছিল জঙ্গল, তা এখন ঘাসে-ঢাকা ময়দান। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘সার্ভেন্ট’-দের বাহারি বাড়ি মাথা তুলছে। কলকাতা হয়ে উঠছে ‘প্রাসাদনগরী’। ইংল্যান্ডের মানুষ জানে, টাকা উড়ছে কলকাতায়। দেশে যা আয় হয়, দাঁও মারলে কলকাতায় মিলবে তার পঞ্চাশ গুণ।

হিকিকে যে কলকাতা টানবে, আশ্চর্য কী। দুটো পয়সা করতে কী না করেছেন এই আইরিশম্যান। কখনও উকিলের ক্লার্ক, ছাপাখানার শিক্ষানবিশ, কখনও নৌসেনার যোদ্ধা। শেষমেশ সার্জনের সঙ্গী হিসেবে জাহাজে চাকরি। যেই কলকাতায় ভিড়ল জাহাজ, চম্পট দিলেন। ঠাঁই হল ব্ল্যাক টাউনে। মুচি, তেলি, দর্জি, কামার, গরিব ফিরিঙ্গিদের সঙ্গে। গোড়ায় ডাক্তারিই করছিলেন। ফোড়া কাটা, বদরক্ত বার করা। তার পর ধার করে একটা ছোট জাহাজ কিনলেন। কপাল মন্দ, পর পর দু’বছর মাদ্রাজ থেকে কলকাতার পথে ঝড়জলে নষ্ট হল মালপত্র। দেনার দায়ে জাহাজ, বাড়ি, আসবাব, সব গেল। এ দিকে হিকির মেজাজটি তিরিক্ষি, কোর্টে নিজের উকিলকে যাচ্ছেতাই গালি দেন। কে লড়বে তাঁর হয়ে? জেল হয়ে গেল হিকির।

ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। হাজার দুয়েক টাকা গচ্ছিত ছিল বন্ধুর কাছে। তা দিয়ে ছাপাখানার ‘টাইপ’ কিনলেন। ছুতোর দিয়ে প্রিন্টিং প্রেস বানালেন। তখন নিয়ম ছিল, নিজের খরচ জোগাতে হবে বন্দিকেই। অনেকেই রোজগার করত জেলে বসে। হিকি ছাপতে লাগলেন হ্যান্ডবিল, বিজ্ঞাপন, দলিল, দিনপঞ্জিকা, বিমার দরখাস্তের ফর্ম। এখন যা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সেখানে ছিল ‘কমন জেল’। কলকাতায় ছাপাখানার পত্তন সেখানে।

ভোর থেকে রাত দুটো অবধি ছাপাখানা চালান হিকি। একটু একটু করে ব্যবসা দাঁড়াল। এক সহৃদয় ইংরেজ উকিলের সহায়তায় দেনার মামলা থেকে নিস্তার মিলল। সেনার এক বড়কর্তা একটা মস্ত বরাত দিলেন। সেনার সব সংশোধিত নিয়মকানুন ছাপার কাজ। আটত্রিশ হাজারেরও বেশি পাতার ‘আর্মি রেগুলেশন’ ছাপা হবে। হিকি খুশি, চটিতং সেনার মেজো-সেজো কর্তারা। নতুন আইন ছেপে বেরোলে উপরি যাবে কমে, ফাঁকি ধরা পড়বে। এ দিকে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের দুই বন্ধু ছাপাখানা খুলেছেন। সব নথিপত্র ছাপার চুক্তি তাঁদের দিচ্ছেন হেস্টিংস। হিকি কে?

হিকির কর্মী ভাঙিয়ে নেয় সেনা, বারবার আটকে দেয় বিল। বিরক্ত হিকি ঠিক করলেন, চুলোয় যাক সেনার অর্ডার। খবরের কাগজ ছাপবেন তিনি। ১৭৮০ সালের জানুয়ারিতে, কলকাতা পত্তনের নব্বই বছর পরে, ৬৭ নম্বর রাধাবাজারে হিকির ছাপাখানা থেকে বেরোল ‘হিকিজ় বেঙ্গল গেজেট।’ চার পাতার কাগজ, দাম এক টাকা। তাতে কেষ্টবিষ্টু সাহেবদের কেচ্ছা যেমন ছিল (সাহেবদের সমকামিতার ইঙ্গিত থাকত প্রচুর), তেমনই ‘রস বাইতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু’, ‘নৌকোডুবির পর বাঘের পেটে’ গোছের খবরও ছাপতেন। শোভাবাজারে এক ধনীর জুড়িগাড়ি চাপা দিল এক গরিবকে। ‘শোনা যাচ্ছে, কুড়ি টাকা দিয়ে কেসটা চাপা দেওয়া হয়েছে,’ লিখলেন হিকি।

থাকিলে ডোবাখানা, হবে কচুরিপানা। আর খবরের কাগজ থাকলে কর্তাদের বিরুদ্ধে দু-চার কথা থাকবেই। কোম্পানির সেনাবাহিনীর ইংরেজ অফিসার, সেপাইরা হিকির কাগজের গ্রাহক। তারা চিঠি লিখতে লাগল, ‘যারা না লড়ে ফিরে গেল তারা পুরস্কারের টাকা পেল, আর আমরা শুকোচ্ছি।’ ‘যাদের চেনাশোনা আছে, তাদের প্রোমোশন হচ্ছে, আমরা বারো-চোদ্দো বছর তেতেপুড়ে মরছি।’

হিকি কলম ধরলেন মহীশূর যুদ্ধের সময়ে। ইংরেজ কম্যান্ডার সাহায্যের আবেদন অগ্রাহ্য করে পুকুরে গুলি-বারুদ ফেলে পালালেন, কচুকাটা হল কোম্পানির সেপাইরা। তবু হায়দার আলিকে ‘ভিলেন’ বানাতে পারলেন না হিকি। লিখছেন, হায়দার কোম্পানির সেনাদের নিরাপদে রেখেছেন, নিজের হরকরা দিয়ে তাদের চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন। ইংরেজমাত্রই সভ্যতার পরাকাষ্ঠা, ভারতীয়রা অমানুষ, কাপুরুষ— সাহেবরা আগামী দেড়শো বছর যে প্রচার চালাবেন, তা ধাক্কা খেয়েছিল দেশের প্রথম খবরের কাগজে।

হিকির কাগজ থেকে ইংরেজদের পরাজয়ের খবর ছাপতে লাগল আমেরিকার কাগজ। তারাও ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়ছে। হিকিও নিজের কাগজের মাথায় ছাপতে লাগলেন মার্কিনিদের স্লোগান, ‘ওপেন টু অল পার্টিজ় বাট ইনফ্লুয়েন্সড বাই নান’। প্রশ্ন করলেন, কলকাতার উন্নতির জন্য সবার উপর চোদ্দো শতাংশ কর বসানোর কী অধিকার আছে কোম্পানির? যাদের প্রতিনিধি নেই সরকারে, তাদের উপর কর বসানো কেন? আমেরিকান বিপ্লবের মন্ত্র, ‘প্রতিনিধি নইলে ট্যাক্স নয়।’

আর একটা মৌলিক প্রশ্ন তুললেন হিকি। ব্রিটিশ রাজত্বে সব নাগরিক কেন সমান বিচার পাবে না? চিঠি জাল করেছিলেন দু’জনেই, রবার্ট ক্লাইভ আর মহারাজা নন্দকুমার। এক জনের কিস্যু হল না, আর এক জন ঝুললেন ফাঁসিতে। আইনের শাসন এই?

হেস্টিংস কী করলেন? ঠিক তা-ই, যা আজকের শাসকরা করেন। প্রথমে তাঁর বশংবদ দুই সাহেবের কাগজ ‘ইন্ডিয়া গেজেট’-এর পোস্টেজ দিলেন ফ্রি করে (এই কাগজ হায়দার আলিকে ‘মানুষরূপী রাক্ষস’ বলেছিল)। তার পর পোস্ট অফিস থেকে হিকির কাগজ বিলি বন্ধ করার নির্দেশ বার হল।

খোঁচা-খাওয়া বাঘের মতো খেপে উঠলেন হিকি। গবেষক অ্যান্ড্রু ওটিস দেখাচ্ছেন, এর আগে পর্যন্ত এগারো মাসে হিকি কোম্পানির দুর্নীতি নিয়ে দুটো, সংবাদের স্বাধীনতা নিয়ে মাত্র একটা লেখা ছেপেছিলেন। ডাকঘরে বেঙ্গল গেজেট নিষিদ্ধ হওয়ার পর দু্র্নীতি নিয়ে বাইশটা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে একুশটা, আর কোম্পানির স্বৈরতন্ত্র নিয়ে চুয়াল্লিশটা নিবন্ধ বার করেন হিকি। আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হেস্টিংস। তিনি পেটোয়া লোককে চুক্তি পাইয়ে দিয়ে বাজারের দামের তিনগুণ দাম দিচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টকে এড়াতে পত্তন করেছেন সদর দেওয়ানি আদালতের। সেখানে যাকে প্রধান বিচারপতি করেছেন, সেই এলাইজা ইম্পিকে এন্তার ঘুষ পাঠাচ্ছেন। হেস্টিংস তাঁর উচ্চাশার জন্য কোম্পানিকে একের পর এক যুদ্ধে জড়াচ্ছেন, প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ সেনাদের।

হিকির সাংবাদিকতা খুব উঁচু দরের ছিল, এমন নয়। অনেক কথা এমন লিখেছেন, যা স্রেফ চরিত্রহনন। ঠারেঠোরে বলছেন, যুদ্ধের চাপে হেস্টিংস যৌনক্ষমতা হারিয়েছেন। কিংবা, পোষা ছাগলের সঙ্গে হেস্টিংসের চাপরাশি ‘অজাচার’ করেছে। বিদ্রুপ, শ্লেষ, কৌতুক, এই ছিল হিকির অস্ত্র। বিজ্ঞাপনের ঢঙে লিখছেন, ‘প্রয়োজন: ঘুষ না খাওয়ার সঙ্কল্প। খোয়া গিয়েছে: সততা। নগদে বিক্রয়: যা কিছু যোগ্যতায় পাওয়ার কথা। দরিদ্রপীড়নে উৎসাহীদের চাকরি নিশ্চিত।’

প্রথম সংবাদপত্রই তৈরি করে দিল সাংবাদিক-রাষ্ট্র সম্পর্কের নকশা। ৫ এপ্রিল ১৭৮১, রাত তিনটেয় তিন জন জোর করে ঢোকার চেষ্টা করল হিকির বাড়ি। এক জন ফ্রেডরিক চার্লস, ‘ইন্ডিয়া গেজেট’-এর অন্যতম মালিক বার্নার্ড মেসিংকের সহকারী। মেসিংক আবার হেস্টিংস-ঘনিষ্ঠ। হিকি নিশ্চিত, হেস্টিংসই খুন করতে লোক পাঠিয়েছেন! কাগজে লিখলেন, ‘ভাগ্য হিকিকে ভারতে পাঠিয়েছে স্বৈরাচারী শয়তানদের মৃত্যুদূত হিসেবে। ক্ষমতাবানের ভ্রুকুটিতে ভয় পান না তিনি।’ মাসখানেক পরে (২ জুন) ‘ব্রিটানিকাস’ হিকির বেঙ্গল গেজেটে লিখছেন, ‘এই হল আদি চুক্তি: সরকার মানুষের কল্যাণে কাজ করবে, মানুষ সরকারকে মানবে। সেই শর্ত উপেক্ষিত বা লঙ্ঘিত হলে আনুগত্যের দায় থাকে না।’

এর দশ দিন পর জেলবন্দি হলেন হিকি। মানহানির মোকদ্দমা করেছেন গর্ভনর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস। সেই সঙ্গে প্রভাবশালী মিশনারি জোহান কিয়েরনান্ডর, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় কোটিপতি। তাঁর দুর্নীতি নিয়েও খবর ছেপেছিলেন হিকি। বিচারের দায়িত্বে হেস্টিংসের পেটোয়া ইম্পি, যাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন হিকি। গির্জা, রাষ্ট্র, বিচারব্যবস্থা, সকলেই বিপরীতে! যেমন বিচার আশা করা যায়, তেমনই হল। ইম্পি জামিন ধার্য করলেন ৪০ হাজার পাউন্ড। হিকির অসাধ্য, জেনেই। জেল থেকেও হিকি কাগজ চালালেন কিছু দিন। কিন্তু একের পর এক মামলা আনলেন হেস্টিংস। প্রতিটিতেই হিকিকে দোষী সাব্যস্ত করলেন ইম্পি। হেস্টিংসকে ‘ক্ষতিপূরণ’ দিতে ছাপাখানা নিলাম হল ১০ এপ্রিল, ১৭৮৩। বন্ধ হয়ে গেল হিকিজ় বেঙ্গল গেজেট।

তা বলে বেঙ্গল গেজেটে বেরোনো অভিযোগ মিলিয়ে গেল না। ইম্পিকে দুর্নীতির দায়ে ‘রিকল’ করা হল ইংল্যান্ডে। হেস্টিংস ফিরে যাওয়ার পর তাঁর ‘ইমপিচমেন্ট’ শুরু হল পার্লামেন্টে, চলল আট বছর। কিয়েরনান্ডরকে বহিষ্কার করল তাঁর মিশনারি সোসাইটি, ব্যবসায় ক্ষতির জেরে প্রায় কপর্দকহীন অবস্থায় মারা গেলেন তিনি। তিন জনকেই তাড়া করেছে সেই অভিযোগ, যা হিকি তুলেছিলেন। তিন জনের কেউই পূর্বের প্রতিপত্তি, সম্মান ফিরে পাননি।

দু’বছর খবরের কাগজ বার করে সাড়ে তিন বছর জেল খাটলেন হিকি। যখন বেরোলেন, তখন সর্বস্বান্ত, বন্ধুহীন। কলকাতায় সুবিধে হল না। সত্তরোর্ধ্ব হিকি ভাগ্য ফেরাতে চাপলেন জাহাজে, চিনের পথে। মাঝরাস্তায় যাত্রা শেষ। তাঁর হ্যামকের মধ্যেই তাঁকে সেলাই করে দিল নাবিকরা, শেষ ফোঁড়টা দিল নাকের মধ্যে দিয়ে। ‘ছাইতে ফিরে যাক ছাই, ধুলোতে ধুলো,’ প্রার্থনা করলেন ক্যাপ্টেন। ভারত মহাসাগর আর প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে, মালাক্কা প্রণালীর জলে তলিয়ে গেলেন হিকি। ১৮০২, অক্টোবরের কোনও এক দিন।

দীর্ঘ দিন ইতিহাস তাচ্ছিল্য করেছে হিকিকে। তরুণ মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো গবেষকরা তাঁকে আবার মর্যাদার আসন দিয়েছেন। এ বার রুদ্ধশ্বাস কাহিনির মতো করে হিকির জীবনের গল্প লিখলেন ওটিস। কী দিন তখন এই কলকাতায়! কত বিচিত্র চরিত্র, কত অবিশ্বাস্য মোড় যুদ্ধে আর চুক্তিতে। তার মধ্যেও বিস্ময় জাগায় এক রগচটা, অকুতোভয় আইরিশম্যান, দেনা শোধ করার দায়ে যে কাগজ বার করেছিল। সাহেবদের কাছে হেঁ-হেঁ করে, চাট্টি বিজ্ঞাপন নিয়ে দুটি পয়সা জমালে কেউ দোষ দিত না। কিসের তাড়নায় লোকটা ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সত্য বলতে গেল?

এক দিন যে আফ্রিকা থেকে দাস পাচারের জাহাজে কাজ করেছে, সেই হিকির কলম লিখল, ‘যদি সংবিধান খারিজ হয়, মানুষ দাসত্বে পতিত হয়, এক জন সাহসী মানুষ আর একটা স্বাধীন সংবাদপত্র তাদের উদ্ধার করতে পারে। কিন্তু সংবাদের স্বাধীনতা না থাকলে মস্ত বীরপুরুষও স্বাধিকার, স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে না।’ দুশো সতেরো বছর আগে ছাপা হয় কথাগুলো, এই কলকাতাতে।

এই শহরেই হিকি লিখেছিলেন তাঁর শেষ চিঠি। চিরশত্রু হেস্টিংসকে। সাহায্যের জন্য কাতর প্রার্থনা জানিয়ে। উত্তর আসেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

James Hicky Hicky's Gazette
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy