মুল্ক
পরিচালনা: অনুভব সিংহ
অভিনয়: ঋষি, প্রতীক, রজত, তাপসী, আশুতোষ, মনোজ
৬.৫/১০
যে দেশে লোকে গো-হত্যার বদলা নিতে নরহত্যার পথে হাঁটে, সে দেশে এই ছবি নিঃসন্দেহে কিছু প্রশ্নের ঝাঁপি খুলে দেয়।
আয়নার সামনে দাঁড়ালে সেই প্রশ্নেরাই দেখিয়ে দেয়, বিশ্বাসের ঘরে কী ভাবে লুকিয়ে থাকে অবিশ্বাসের চোরাকুঠুরি। বিশ্বাসে ঘা পড়লে পাশের বাড়ির চেনা লোকটাই কী ভাবে রাতারাতি অচেনা হয়ে যায়। আর নিজের পাড়া থেকে নিজের জন— সকলেই কী ভাবে তাকায় অস্বস্তির বাঁকা চোখে। এই অস্বস্তি আর অবিশ্বাসই আসলে এ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র।
বারাণসীর এক মুসলমান পরিবার। দুই ভাই, মুরাদ (ঋষি) ও বিলাল (মনোজ পহওয়া) একসঙ্গে থাকে। মুরাদ আইনজীবী। বিলাল ছোট দোকানি। মুরাদের ছেলে (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) থাকে ইংল্যান্ডে। তার হিন্দু স্ত্রী আরতি (তাপসী) এসেছে শ্বশুরবাড়িতে কয়েক দিন থাকবে বলে। এরই মধ্যে ইলাহাবাদে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৬ জন মারা যায়। পুলিশ জানতে পারে, বিলালের ছেলে শাহিদ (প্রতীক বব্বর) তাতে যুক্ত। পুলিশের ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’ দানিশ (রজত) বাড়িতে হানা দিয়ে গুলি করে মারে শাহিদকে।
এর পরেই শুরু টানাপড়েন। বিলালকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। মুরাদও গ্রেফতার হয়। সরকারি আইনজীবী সন্তোষ (আশুতোষ) আদালতে প্রমাণ করার চেষ্টা করে, মুরাদ ও বিলালের গোটা পরিবারই সন্ত্রাসে যুক্ত। কারণ তারা মুসলমান। আর কে না জানে, মুসলমান মানেই সম্ভাব্য জঙ্গি।
পাড়াতেও এক অবস্থা। পড়শিরা তাদের প্রায় একঘরে করে দেয়। সকলের চোখেই অবিশ্বাস। পরিবারের সম্মান বাঁচাতে শ্বশুরের অনুরোধে মামলা লড়তে নামে বৌমা আরতি। সমানে সমানে টক্কর দেয় ঝানু সরকারি আইনজীবীর সঙ্গে। এবং শেষমেশ আদালতকে বোঝাতে সমর্থ হয় যে, ধর্মের ভিত্তিতে নিজেদের ‘আমরা’ আর ‘ওরা’য় ভাগ করার এই প্রবণতা কী চরম সর্বনাশ ডেকে আনছে।
‘পিঙ্ক’ ছবিতে তাপসী আইনজীবী ছিলেন না। কিন্তু ওই কোর্টরুম ড্রামার হাত ধরেই তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন। এই ছবিতেও তাপসী অনবদ্য। সরকারি কৌঁসুলির চরিত্রে আশুতোষ প্রত্যাশা মতোই অসাধারণ। কিন্তু তাঁর মতো অভিনেতার সামনে পড়েও তাপসী হারিয়ে যাননি, বরং কোথাও কোথাও তাঁকে ছাপিয়ে গিয়েছেন।
বুড়ো বয়সে এসে ঋষি কপূরও তাঁর জাত চেনাচ্ছেন। আর তাঁর ভাইয়ের চরিত্রে মনোজ পহওয়া মনে দাগ কেটে যান। জঙ্গি ছেলের অসহায় বাবার বিপন্নতাকে চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন মনোজ। রজত কপূর সম্ভবত এমন ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ চরিত্রে এই প্রথম। এক পুলিশ অফিসার, যিনি নিজে মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও মুসলমান জঙ্গিদের প্রতি অতিরিক্ত কঠোর ও নৃশংস।
এ বার আসা যাক পরিচালক অনুভব সিংহের কথায়। গল্পে এবং চিত্রনাট্যে খামতি অনেক। কোথাও কোথাও হিন্দু-মুসলমান সমস্যার অতিসরলীকরণে গল্পের তাল কেটে যায়। তবু নির্মেদ এবং ঋজু ন্যারেটিভ দিয়েই বেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। তাঁর ছবি পাকিস্তান ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ করেছে। অনুভবের নিজের ‘মুল্ক’ কী বলে, এখন তার অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy