সাও পাওলোয় এ ভাবেই ডাচ ডিফেন্সের অতন্দ্র প্রহরায় খেলতে হয়েছে এলএম টেন-কে।
লিওনেল মেসিকে আটকাতে জোয়াকিম লো কোন স্ট্র্যাটেজি নিতে পারেন ফাইনালে?
আমি নিশ্চিত, জার্মান কোচ লুই ফান গলের রাস্তায় হাঁটবেন না। রবিবার রাতের মারাকানায় জার্মান-চতুর্ভুজ-ই হবে লো-র প্রধান অস্ত্র।
মেসিকে অকেজো করতে নেদারল্যান্ডস বুধবার রাতের সেমিফাইনালে ব্যবহার করেছিল ছয় ডিফেন্ডারকে। চার ডিফেন্ডারের সঙ্গে দু’জন ডিফেন্সিভ স্ক্রিন। ফান গল সফল হয়েছিলেন। টাইব্রেকারে হেরে গেলেও রবেনদের বিরুদ্ধে মেসি কিন্তু কিছুই করতে পারেনি। ডেড বল সিচুয়েশন থেকে একটা অসাধারণ ফ্রিকিক মেরেছে। ওটা তো ওর ট্রেডমার্ক কিক। আর একটা কাজ অধিনায়ক হিসাবে করেছিল এল এম টেন। যা টিমের পক্ষে টনিকের কাজ করেছে। পেনাল্টি শুট আউটের প্রথম কিকটা মারতে গিয়েছিল এবং গোল করে দলকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। ডু অর ডাই অবস্থায় এটা বড় ব্যাপার।
জার্মানি কিন্তু নেদারল্যান্ডসের তুলনায় সব বিভাগেই শক্তিশালী। ছয় নয়, মেসি ম্যাজিক আটকাতে ম্যাচ চলার সময় চর্তুভুজ তৈরির ব্যবস্থা করবেন লো। অন্তত আমার সেটাই মনে হয়। সেটা কেমন? মেসির সামনে জার্মান কোচ দাঁড় করিয়ে দেবেন সোয়াইনস্টাইগারকে। ওই হবে প্রথম ব্লকার। মেসির খেলার স্টাইলটাই হল, ডানপ্রান্তে সরে গেলে বাঁ পায়ে আউটসাইড স্কোয়ার ডজ করে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে। মাঝেমধ্যে উল্টোটাও করে বাঁ দিকে গিয়ে। যে প্রান্তেই মেসি যাক, সেই প্রান্তে তাকে ধরতে ছুটে আসবে কাছাকাছি থাকা একজন স্টপার এবং সাইড ব্যাক। ধরা যাক লাম এবং বোয়াতেং। তিন জনের সঙ্গে আরও একজন থাকবে মেসিকে আটকাতে। ওজিল, ক্রুজ, খেদিরার মধ্যে থেকে একজন নেমে আসবে মেসির সামনে। অথাৎ স্ট্র্যাটেজিটা কী দাঁড়াল-- মেসি বল ধরলেই তাকে ঘিরে ধরবে চার জন জার্মানির ফুটবলার।
ফাইনালে মেসির জন্য সম্ভাব্য জার্মান প্রহরা। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।
মেসিকে কি এই স্ট্র্যাটেজিতেও বধ করা সম্ভব? লো শুধু নয়, বিশ্বের কোনও কোচ-ই এ ব্যাপারে গ্যারান্টি দিতে পারবেন না। তবে এটা বলছি, মেসি কিন্তু মারাদোনা, রোনাল্ডো বা নেইমারের মতো সরাসরি ড্রিবল করে এগোনোর চেষ্টা করে না। ও নিজে ফাঁকায় যাওয়ার চেষ্টা করে এবং সেখানে গিয়ে বল বাড়ায়। একজন ভাল সঙ্গী চায় ওয়াল খেলে এগোনোর জন্য। তাতেও কিছু না হলে, ও ম্যাচ থেকে হঠাৎ-ই হারিয়ে যায়। মাঠে হাঁটতে দেখা যায় ওকে। যেন খেলায় ইচ্ছে নেই বা হতাশ। এতে কী হয়, মেসির উপর থেকে নজর অনেকটাই সরে যায় বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের। কিন্তু ওটাই হচ্ছে ওর ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগের মুহূর্ত। ইরান ম্যাচে এটা করেই কিন্তু শেষ মূহূর্তে গোল করে ম্যাচটা বের করে নিয়ে গিয়েছিল। মেসি এমন একজন ফুটবলার যে একটু সুযোগ পেলেই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে।
জোয়াকিম লো অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং ধুরন্ধর কোচ। জার্মানি বিশ্বকাপ জিতুক না জিতুক, ওকে আমি এ বারের সেরা কোচ বলব। লো নিশ্চয়ই জানে, স্কোরিং অঞ্চলে মেসিকে খেলতে দেওয়া মানেই নিজেদের বিপদ ডেকে আনা। ফলে জার্মানি চাইবে ওকে যতটা সম্ভব চাপে ফেলে পিছনে পাঠাতে। যাতে সেন্টার লাইনের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে মেসি। দি’মারিয়া না থাকায় মেসির সমস্যা হচ্ছে। লাভেজ্জি, ইগুয়াইন বা আগেরোর সঙ্গে মেসি সাবলীল হতে পারছে না। অন্তত রবেনদের বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখে তাই মনে হয়েছে। কিন্তু স্বপ্নের শেষ সিঁড়ি পার হওয়ার জন্য আর্জেন্তিনা অধিনায়ক নিশ্চয়ই চেষ্টা করবেন সেই সাবলীলতা আনার। সে জন্যই ওর সাপ্লাই লাইন কেটে দিতে হবে জার্মানিকে।
খেলোয়াড় জীবনে আমরা সব সময় চেষ্টা করতাম কৃশানু দে-র সঙ্গে চিমার পাসিং সংযোগ ছিন্ন করতে। চিমা যে এত গোল করেছে তার পিছনে কৃশানুর অবদান ছিল বেশি। ও বল সাপ্লাই দিত। সেট পিস ছাড়া মেসির বেশির ভাগ গোলের পাস কিন্তু জাতীয় দলে এসেছে দি’মারিয়া বা ইগুয়াইনের কাছ থেকে। সেটা তাই আটকাতে চাইবেন লো।
যেখানেই যাচ্ছি প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হবে কে? আমি বলছি, মেসিকে আটকানোর উপরই নির্ভর করছে জার্মানির কাপ জেতা। তবে সাবেয়ার টিমের রক্ষণও খুব ভাল খেলছে। জার্মানি ব্যালান্সড দল। ওদের মধ্যে একটা টিম গেম কাজ করে। গোল করার লোক আছে, পাস বাড়ানো বা খেলা তৈরির লোক আছে। গতি দিয়ে বিপক্ষকে সমস্যায় ফেলতেও পারে। যদিও জার্মানির টিমে ক্লোজে বা মুলার থাকলেও একটা মেসি কিন্তু নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy