সর্প-আবির্ভাব ।
গুগলি পিচ ও টস।
উপরের দু’টো শব্দ শনিবার বাংলার ভাগ্য একেবারে ঘুরিয়ে দিতে পারত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে দেওয়াল লিখনটাও আনায়াসে করে ফেলা যেত— বাংলার বড় প্রাপ্তি। প্রবল চাপে বিদর্ভ। কিন্তু প্রথম দিনের শেষে বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি বোধহয় হাত কামড়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারবেন না!
একটা নয়। দু’টো নয়। তিন তিনটে উপহার বাংলাকে থালায় সাজিয়ে দিয়েছিলেন বিদর্ভ কোচ পারস মামরে। কিন্তু সেই উপহারের মর্যাদা দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে ঘরের মাঠে নিজেরাই এখন প্রবলভাবে কোণঠাসা। সাত ঘণ্টার যুদ্ধে একটার পর একটা নাটক। সব নাটকেই ‘অ্যাডভান্টেজ’ বাংলা। আর সবেতেই নিরঙ্কুশ ভাবে জয়ী বিদর্ভ।
শনিবার সাত সকালে সল্টলেকের মাঠে ঢুকতেই দেখা গেল, ওয়াসিম জাফর ও মামরে পিচ-পরীক্ষায় ব্যাস্ত। সবুজ উইকেটের পাশে দাঁড়িয়ে প্রায় পনেরো মিনিটের গম্ভীর আলোচনা। তাঁদের হাবভাবে কোথাও মনে হয়নি, টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেবে না বিদর্ভ। কিন্তু কে জানত, সেই সবুজের আড়ালে অন্য রহস্য লুকিয়ে? প্রথম পাঁচ ওভারেই স্পষ্ট হয়ে যায়, যাদবপুরের উইকেটে ঘাসের কোনও গুরুত্ব নেই। ওটা নামেই ঘাস! বরং বাস্তবে যাদবপুরের মাঠ নিজের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সেই লো বাউন্স, একেবারে পাটা ব্যাটিং উইকেট। নামমাত্র সুইং।
এক দিকে উইকেট ভোগালো ক্রমাগত। উন্টোদিকে ভোগালো নাগদেবতা। শনিবার বাংলা ইনিংস শুরুর পাঁচ ওভারের মাথায় পাশের জঙ্গল থেকে হঠাৎ একটা সাপ মাঠে ঢুকে পড়ে। যার আতঙ্কে দু’মিনিট খেলাও বন্ধ থাকে। তবে তাতে অবশ্য বাংলার সুবিধাই হল। সাপের টেনশনেই হোক বা অন্য কিছু স্বপ্নীল বন্দেওয়াল মহামুল্যবান একটা নো বল করলেন। তখন অভিমন্যূ চলে গেলে কপালে আরও দুঃখ ছিল বাংলার। মনোজ তিওয়ারির দল তখন সবে ১২। সেই জীবনদান নিয়ে প্রথম উইকেটে ১১৮ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ গড়েন অভিমন্যূ (৫৮) ও সায়ন শেখর মণ্ডল (৫৬)। সে সময় বিদর্ভের পিচ-আতঙ্কও দারুণ ভাবে সাহায্য করে বাংলার দুই ওপেনারকে। সবুজ ঘাসের টানে টিমের এক নম্বর স্পিনার অক্ষয় ওয়াখাড়েকে লাঞ্চের আগে পর্যন্ত সে ভাবে ব্যবহারই করলেন না বিদর্ভ অধিনায়ক বদ্রিনাথ। নিটফল, ৪৪ ওভার পর্যন্ত পেসাররা উইকেটের কোনও সন্ধান না পেয়ে আরও হতাশ হয়ে পড়লেন।
মনোজ-বিদায়। শনিবার রঞ্জির দুই ছবি।
তবে শুধু ভাগ্যের জোরে কি যুদ্ধ জেতা যায়? কিছু তো কাজেও দেখাতে হয়। কিন্তু বাংলার ব্যাটসম্যানরা সেই ভরসা দিলেন কোথায়? এমন ব্যাটিং উইকেটে যেখানে একটা মজবুত ভিত গড়ে দিলেন ওপেনাররা, সেখানে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল মনোজ তিওয়ারির মিডল অর্ডার। ১১৮-০ থেকে একটা সময় ১৮২-৫ বাংলা। দিনের শেষে ২১৭-৭। ক্রিজে একা সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ৪৯ রান করে লড়ছেন। ম্যাচের পরে অভিমন্যূ বলছিলেন, ‘‘এত দিন আমাদের ওপেনিং জুটি ক্লিক করছিল না। এ দিন মিডল অর্ডার কাজ করল না।’’
আর কবে করবে? পিচে তো তেমন কোনও জুজু ছিল না। তা হলে এ রকম ভাবে আত্মসমর্পণ কেন? উত্তর একটাই প্রয়োগ ক্ষমতার অভাব। বিদর্ভও ম্যাচের শুরুতে যে ভুলগুলো করেছিল, সেটা দ্বিতীয় সেশনে শুধরে নেয়। নরেন্দ্র হিরওয়ানির ছাত্র অক্ষয় ওয়াখাড়েও প্রথম স্পেলের (৩-০-১০-০) পরে অক্ষয় ‘খিলাড়ি কুমার’ হয়ে ওঠেন ২১-৪-৪০-৪ দ্বিতীয় স্পেলে। উইকেটে যে বড় টার্ন হচ্ছে, সেটা বলা যাবে না। বরং অক্ষয়ের সাফল্যমন্ত্র একটাই— নিখুঁত লাইন-লেংথ। ম্যাচ শেষে দিনের নায়ক বললেন, ‘‘কাল প্রথম এক ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ২৫০ রানের মধ্যে আটকে দিতে পারলে, ছ’পয়েন্ট জেতার ভাল সুযোগ আছে আমাদের।’’ খুব খারাপ আন্দাজ করেননি অক্ষয়। কেন না, যত সময় এগোচ্ছে ততই ব্যাটসম্যানদের জন্য আদর্শ হয়ে উঠছে যাদবপুরের পিচ। সেখানে জাফর, বদ্রিনাথের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা যে উইকেটের পুরোপুরি সুবিধা নিতে চাইবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
জাফর-বদ্রিনাথরা কতটা উপদ্রব বাঁধাবেন চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই হয়তো জানা যাবে। কিন্তু এ দিন সাপের উপদ্রবে প্রায় সারাক্ষণই তটস্থ থাকতে হল সিএবি কর্তাদের। বাংলা ড্রেসিংরুমের বাথরুমেও একবার ঢুকে পড়ে সাপ। এমনকী এক সিএবি কর্তাকে এও বলতে শোনা যায়, ‘‘রবিবার ওঝার ব্যবস্থা করব ভাবছি। এত সাপ শুধু কার্বোলিক অ্যাসিড ছড়ালে যাবে না।’’ ওঝা দিয়ে সাপ-সমস্যা মিটবে কিনা জানা নেই। তবে এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেতে হলে বাংলার বোধহয় অন্য এক ওঝার দরকার পড়বে। অক্ষয় ওয়াখাড়ের যিনি জবাবি অস্ত্র।
প্রজ্ঞান ওঝা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা (প্রথম ইনিংস) ২১৭-৭, অভিমন্যূ (৫৮), সায়ন (৫৬)। বোলিং: ওয়াখাড়ে (৪০-৪)।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy