গর্বিত মালকিন। সোমবার রাতে দলের সঙ্গেই কলকাতায় পৌঁছলেন জুহি চাওলা। ছবি: উৎপল সরকার
এই দলে বাংলার কোনও খেলোয়াড় নেই। কিন্তু শহরের নামটা জড়িয়ে রয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। কেকেআর।
রবিবার রাতে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম যখন ‘কেকেআর’ বলে গর্জন করে আছড়ে পড়ল মাঠে, তার কিছু পরেই ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘এটা কলকাতার নামের জয়।’ সেই নাম-মাহাত্ম্যের জেরেই টালা থেকে টালিগঞ্জ রাতভর পটকা ফাটিয়ে, ঝান্ডা উড়িয়ে, উল্লাসে চিৎকার করে উৎসব করেছে। এই দলের মালিক পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহরুখ খান।
কেকেআর-এর দ্বিতীয় আইপিএল জয়ে শহরের এই মেজাজকে আরও উস্কে দিতে তাই নিজেই মাঠে নেমে পড়েছেন দিদি। সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভা ভোটে বিপুল জয়ের পরে পুরস্কার বিতরণের একটি সরকারি অনুষ্ঠান হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা বাদে সরকার বা শাসক দলের তরফে তেমন কোনও আনন্দ উৎসব দেখা যায়নি! কেকেআর-এর জয়কেই তাই সর্বজনীন উৎসবের রূপ দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্রিকেটার-টলিউড-লাখখানেক জনতা, জুহি চাওলা আর এসআরকে নির্বাচনোত্তর জয়োল্লাসের এমন আদর্শ মঞ্চ আর দু’টি নেই বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতারা।
সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েনের টুইট বলছে, “ফ্রম আইপিএল টু ইন্ডিয়ান পার্লামেন্টারি লিগ!” অর্থাৎ আইপিএল জিতেই এ বার পা বাড়াতে হবে সংসদের দিকে! আর বিরোধী কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, “৩৪টা আসন জিতেও বিজয় উৎসব করেননি মমতা। কারণ উনি জানেন এই জয় আসলে জল মেশানো। তাই ইডেনে জলসা করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন!”
নবান্নতে জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে মদন মিত্র। —নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ অনুযায়ীই উৎসবে থাকছে বিনোদন-ধামাকার যুগলবন্দি। মমতা নিজে সোমবার বলেওছেন সে কথা, “আমি এর সঙ্গে টলিউডকেও যোগ করেছি। কারণ, আইপিএলের মতো খেলায় এরাও জড়িত থাকে।” আর এই টলিউডেরই একটা বড় অংশ এ বার নির্বাচনে মমতার দলের প্রার্থী হয়ে জিতেছে, তৃণমূলের হয়ে প্রচার করেছে। সুতরাং সরকারি উদ্যোগে এই বেসরকারি বিনোদনকে সফল করতে উত্তরবঙ্গ সফর কাটছাঁট করে এ দিন রাতেই বিশেষ বিমানে কলকাতায় ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ, মঙ্গলবার ইডেন উদ্যানে সরকার এবং সিএবি-র যৌথ উদ্যোগে কেকেআর-এর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পর আবার তিনি ফিরে যাবেন উত্তরবঙ্গে।
এ দিন দুপুরে সাধারণ বিমানে কলকাতা থেকে বাগডোগরা যান মমতা। সন্ধ্যায় বাগডোগরা থেকে কলকাতায় তাঁকে ফিরিয়ে আনতে দিল্লি থেকে উড়ে যায় বিশেষ বিমান। একটি সূত্রের দাবি, ব্রিটিশ সংস্থার তৈরি এই বিমান দিল্লির স্প্যান এয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে ঘণ্টায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা হিসেবে ভাড়া নিয়েছে রাজ্য। সংস্থার চিফ অব অপারেশন ক্যাপ্টেন সুধীর মালিক টাকার অঙ্ক নিয়ে কিছু না বললেও রাজ্যকে বিমান ভাড়া দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। সরকারের তরফে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। জেট ইঞ্জিনের বিমানটি দিল্লি থেকে কলকাতা আসতে সময় নেয় দু’ঘণ্টা, বাগডোগরা থেকে ৫০ মিনিট। নয় আসনের বিমানটি এ দিন সন্ধ্যা সওয়া সাতটায় বাগডোগরা থেকে কলকাতায় নামে। বিমানে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন তৃণমূল নেতা মুকুল রায় এবং আরও ছ’জন। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বিমানটি এ দিন রাতে কলকাতায় থাকছে। রাতে থাকার জন্য আলাদা ভাড়া। মঙ্গলবার দুপুরে এই বিমানেই ফের হাসিমারা উড়ে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন কলকাতার দিকে রওনা হওয়ার আগে শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কলকাতার নামের সঙ্গে নামাঙ্কিত দল। আর শাহরুখ আমাকে বলেছে, আপনাকে থাকতেই হবে। তাই সফরসূচি কাটছাঁট করে ফিরে যাচ্ছি। উত্তরবঙ্গের নির্ধারিত অনুষ্ঠানগুলি এক দিন পর থেকে হবে।”
সংবর্ধনার মঞ্চে বিনোদনের ককটেল দেখার জন্য বিনামূল্যে প্রবেশপত্রের ব্যবস্থা রেখেছেন ‘দিদি’। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রবেশপত্র পেতে সোমবার রাতেই বিভিন্ন থানায় হামলে পড়ে জনতা। কিন্তু চাহিদার তুলনায় টিকিট কম থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েন পুলিশ কর্তারা। থানা থেকে ঘনঘন ফোন যায় লালবাজার কন্ট্রোলে।
মঙ্গলবার ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বিনামূল্যের প্রবেশপত্র থানা থেকে পাওয়া যাবে,
ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের এই ঘোষণার পরেই সোমবার ভিড় জমে বিভিন্ন থানার সামনে। পর্যাপ্ত টিকিট ছিল না বলে
কিছু থানায় উত্তেজনা ছড়ায়। সোমবার নিউ মার্কেট থানার সামনে রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কেমন হবে, তা ঠিক করতে এ দিন নবান্নে বৈঠক করেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ, ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র, সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া-সহ রাজ্য পুলিশ এবং প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। বৈঠকের পরে ক্রীড়ামন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতোই মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানসূচি তৈরি হয়েছে। দুপুর ১টা থেকে ২টো ইডেন গার্ডেন্সে সংবর্ধনা দেওয়া হবে কেকেআর সদস্যদের। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতর, কলকাতা পুরসভা, কলকাতা পুলিশ এবং সিএবি যৌথ ভাবে এই অনুষ্ঠান করছে। তবে এ বার রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন অনুষ্ঠানে থাকছেন না। তিনি বর্তমানে শহরে নেই।
তবে ২০১২ সালে প্রথম বার আইপিএল জয়ের পর হুডখোলা বাসে শহর ঘুরেছিলেন গৌতম গম্ভীররা। পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র এ দিন বলেছেন, “এ বার রোড শো হবে না।” পরিবর্তন আরও আছে। টান পড়েছে সরকারি উপহারের তালিকায়। এ বারের বাজেট খেলোয়াড় পিছু ২০ হাজার টাকা। খেলোয়াড়দের কী কী পুরস্কার বা স্মারক দেবে সরকার? ক্রীড়ামন্ত্রীর জবাব, “সব বলে দিলে উত্তেজনা থাকবে না।”
তবে প্রশাসনের অন্য সূত্রের খবর গত বার ছিল লকেট দেওয়া সোনার চেন, সিল্কের পাজামা-পাঞ্জাবি! এ বার তার জায়গায় স্যুট লেংথ, আলফানসো আম, ফুল। ভবানীপুরের শতাব্দীপ্রাচীন মিষ্টির দোকান বলরাম মল্লিক ছানা, ক্ষীর এবং আলফানসো আমের শাঁস দিয়ে তিন ফুট ব্যাসের সন্দেশ-কেক তৈরি করছে, যা দেখতে হবে ইডেন গার্ডেন্সের মতো। সরকারি সূত্র বলছে, গত বার সোনার চেন দেওয়া নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। তাই ওই মহার্ঘ এ বার বাদ পড়েছে। তবে সিএবি আগের বারেও আলাদা করে সোনার হার দিয়েছিল। এ বার তারা খেলোয়াড়দের এক ভরি সোনার আংটি দিচ্ছে।
ইডেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এ দিন সন্ধে ৬টা ১৫ নাগাদ সিপি ইডেনে যান। সোমবার রাতেই সব খেলোয়াড় শহরে ঢুকে পড়েছেন। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় চার্টার্ড বিমানে আসবেন শাহরুখ।
আইপিএল ফাইনালে কিঙ্গস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে সেঞ্চুরি করা ঋদ্ধিমান সাহাকে নিয়েও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, “ঋদ্ধিমানকে আমরা সম্মানিত করব। ঋদ্ধিমানের সময়সূচি দেখে আমরা নিশ্চয়ই একটা অনুষ্ঠান করে ওকে সংবর্ধনা দেব।” ঋদ্ধিকে পরে সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিএবি প্রেসিডেন্টও। তিনি এ দিন বলেন, “এত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। সিএবি-র পরবর্তী বৈঠকে ঠিক হবে। ঋদ্ধিকে সংবর্ধনা নিশ্চয়ই দেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy