বেঞ্জিমাদের প্র্যাকটিস।
পরিবারের শিকড় ধরে যত নামবেন, তত পরিষ্কার হবে করিম বেঞ্জিমার পিতৃদেব বা ঊর্ধ্বতন পুরুষদের কেউই ফরাসি নন। জন্মসূত্রে তিনি লিয়ঁর জাতক, কিন্তু পিতামহ-প্রপিতামহ সবাই আলজিরিয়ার। জিনেদিন জিদানের সঙ্গে তাঁর সত্যিই অদ্ভুত মিল।
ফ্রান্সে ছোট থেকে বড় হয়েছেন, কিন্তু দেশকে কতটা অগ্রাধিকার দেন বেঞ্জিমা, ঠিক বোঝা যায় না। ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত ‘লা মার্সেইয়েজ’ যখন গেয়ে ওঠেন কাবায়ে-দেবুসিরা, ঠোঁট নড়তে দেখা যায় না বেঞ্জিমার। কেন ফ্রান্সের জাতীয় সঙ্গীত তাঁকে গাইতে শোনা যায় না, তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। কিন্তু সে সব বিতর্ক আপাতত অতীত। ফরাসি মননে এখন ফুটবল বলতে ওই একটাই নাম করিম মোস্তাফা বেঞ্জিমা। ফ্রান্স মনে করছে, আদরের জিজুর পর বিশ্ব ফুটবলে নতুন করে ফরাসি বিপ্লব যদি কেউ ঘটাতে পারেন তো তিনি বেঞ্জিমা।
মানুষ হিসেবে যিনি বেশ চুপচাপ, মোটেও মিশুকে নন। কিন্তু ফুটবল পায়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপে প্রচণ্ড সরব। ফুটবলবিশ্ব যখন তাঁর সঙ্গে জিদানের মিল খুঁজতে ব্যস্ত, সিনিয়র বেঞ্জিমা তখন ছেলের মধ্যে আর এক বিখ্যাত ফরাসির ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। তিনি নেপোলিয়ন বোনাপার্টে!
“নেপোলিয়নের পিছনে গোটা একটা আর্মি ছিল। করিমের বেলাতেও সেটা হচ্ছে,” সপ্তাহখানেক আগেই ঘোষণা করেছেন হাফিদ বেঞ্জিমা। কী রকম? “সাহায্য পেলে তবেই দায়িত্ব নেওয়া যায়। ওর জন্য টিম খেলছে, আর ও খেলছে টিমের জন্য। যার ফলে ফ্রান্স আজ এই জায়গায়।”
যদিও কেউ কেউ আরও একটা কারণ খুঁজে পাচ্ছেন বেঞ্জিমা এবং ফ্রান্সের এই সাফল্যের। বলা হচ্ছে, ফ্রাঙ্ক রিবেরি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়ে শাপে বরই হয়েছে। কারণ সে ক্ষেত্রে মাঠে দু’জন অধিনায়ক থাকত। এখন শুধু বেঞ্জিমা। যাঁর নেতৃত্বে টিম হিসেবে খেলতে পারছে ‘ল্যে ব্লুজ’। যে টিমের অঘোষিত ক্যাপ্টেন সোমবারের নাইজিরিয়া ম্যাচের আগে অক্লেশে বলে দিচ্ছেন, “জানি নকআউট অন্য লড়াই। কিন্তু জয়ের জন্য নিজেদের নিঃশেষ করে দেব আমরা।”
যাঁর সিংহাসনে বেঞ্জিমাকে দেখতে পাচ্ছে ফরাসি জনমানস, সেই জিনেদিন জিদানের সঙ্গে বেঞ্জিমার সখ্যতা কম নয়। তাঁকে এক রকম শিষ্যই বলা যায় জিদানের। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে গত এক বছর ধরে যে জায়গায় বেঞ্জিমা পৌঁছেছেন, বলা হয় তা অনেকটাই রিয়ালের ডিরেক্টর জিদানের তত্ত্বাবধানে। শিষ্যকে জিজু যদি বলেন “দেশঁর টিমের অঘোষিত অধিনায়ক,” তা হলে গুরুকে নিয়ে বেঞ্জিমাও কম আপ্লুত নন। বিশ্বকাপ চলাকালীনই যেমন বলেছেন, “জিজুর প্রভাবেই আমার জীবন পাল্টে গিয়েছে। ওর মতো ফুটবলারকে পাশে পাওয়াটা বাড়তি অনুপ্রেরণা।” গুরু-শিষ্যের নিয়মিত যোগাযোগ থাকছে বিশ্বকাপের মধ্যেও। ফোনে রোজ কথা হচ্ছে দু’জনের। বেঞ্জিমা চেয়েছিলেন জিদানকে ব্রাজিলে নিয়ে আসতে। জিজুর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু গ্রুপ লিগের ম্যাচ দেখে শিষ্যকে মেসেজ করেছিলেন জিদান। বলেছিলেন, তুমি আমাকে গর্বিত করছ। যার নিটফল, ব্রাজিল বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই তিনটে গোলের মালিক ফরাসি স্ট্রাইকার।
শুধু একটা ব্যাপারেই ছাত্রের উন্নতি চান জিদান। তাঁর মতে বেঞ্জিমা বড্ড বেশি মুখচোরা, বড্ড বেশি লাজুক। জিদান চান টিমের সঙ্গে আরও বেশি করে কথা বলুন বেঞ্জিমা। অন্যদের জায়গা ছেড়ে না দিয়ে।
তবেই না জিনেদিন জিদান হওয়া যাবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy