গত কয়েক বছর মোহনবাগান কোনও ম্যাচে হারলে বা কোনও টুর্নামেন্টে বিদায় নিলে যে দাবিটা আমি তুলতাম, রবিবার ঠিক সেটাই বাস্তবে ঘটে গেল! ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সচিব, অর্থসচিব অবশেষে নিজেদের চেয়ার ছাড়লেন।
বিশ্বাস করুন, খবরটা শুনে আনন্দ তো দূরের কথা বরং দুঃখেই মনটা ভরে গেল!
কার জন্য? চেতলার ওই সঞ্জয় সেনের জন্য। ফুটবলারদের জন্য। আমার প্রিয় ক্লাবের সমর্থকদের জন্য। যাঁদের কাছে মোহনবাগান নামটাই আত্মসম্মান। এই ক্লাবটাই ইজ্জত।
আমার তো মনে হচ্ছে, নিজেদের পিঠ বাঁচাতে কর্তারা ফের একটা ইস্তফা-নাটক শুরু করলেন। সাতাত্তরের লিগে ইস্টবেঙ্গলের কাছে দু’গোলে হারার পর মাঠে আমাদের দিকে বৃষ্টির মতো ইট উড়ে আসছিল। তখনকার কর্তা মান্নাদা (শৈলেন মান্না) বুক দিয়ে আগলে আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁবুতে।
আর এই কর্তারা কোচ-ফুটবলারদের এক গলা জলে নামিয়ে দিয়ে শুরু করে দিলেন প্রায় একটা যাত্রাপালা। সঞ্জয় আমার সহকারী কোচ ছিল ইউনাইটেড স্পোর্টসে। একটা বাঙালি পরিশ্রমী ছেলে জীবনে প্রথম বড় দলের দায়িত্ব নিয়ে চাপে পড়ে গেল এই কর্তাদের জন্য। ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাসটাও ধ্বংস করে দিলেন এই কর্তারা। ফুটবলাররা আর এই কর্তাদের বিশ্বাস করবে? ওরা বুঝে গেল বিপদে পড়লেই এই কর্তারা পালাবেন কাপুরুষের মতো।
কেন এই ইস্তফাকে নাটক বলছি? সালগাওকরের কাছে চার গোল খেয়ে মোহনবাগান ফেড কাপ ছেকে ছিটকে গেল বলে কর্তাদের পদত্যাগ? তা হলে, বছরখানেক আগে যখন ডেম্পোর কাছে পাঁচ গোল খেয়েছিল তখনও তো এঁরাই কুর্সিতে ছিলেন। তখন সরেননি কেন?
তা ছাড়া পদত্যাগটা এই তিন শীর্ষকর্তা কোথা থেকে করলেনম্যাকডাওয়েল মোহনবাগানের অংশীদারি থেকে, না মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব থেকে?
কাগজেই পড়েছি ফুটবলাররা ফেড কাপে যাওয়ার আগে আড়াই মাস বেতন না পেয়ে সচিবের দ্বারস্থ হয়েছিল। নানা সূত্র থেকে শুনছি, ইউবি গ্রুপ বকেয়া টাকা আর দেবে না। তা হলে গোয়া ফেরত ফুটবলারদের থেকে বাঁচতেই কি এই পদত্যাগ-নাটক?
সচিব, অর্থ-সচিবের পদত্যাগপত্র দেওয়ার কথা প্রেসিডেন্টকে। সেই প্রেসিডেন্ট নিজেই পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্র জমা পড়েছে ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে। যা তিনি নিয়মমতো গ্রহণ করতে পারেন না। তাই হয়তো দিন সাতেকের মধ্যেই ডাকা হবে কর্মসমিতির বৈঠক। পদত্যাগী কর্তারা হয়তো এটাই চান। কারণ, ওই কর্মসমিতি জুড়ে রয়েছেন সচিব, প্রেসিডেন্টের পুত্র-কন্যা, পারিষদরা। সব হাত তোলা পার্টি। তাঁরা বৈঠকে নির্ঘাত অনুরোধ করবেন পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নিতে। তখন সেই ‘একবার সাধিলেই খাইব’ ছুঁতোয় হয়তো শুনবেন, ওই তিন কর্তা বলেছেন, ক্লাবের ব্যর্থতায় পদত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু দুঃসময়ে ক্লাবের স্বার্থে দূরে সরে থাকতে পারলাম না। তাই নতুন শুরু করছি।
আসলে পুরো ব্যাপারটাই ক্লাবের আসন্ন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে সদস্যদের সহানুভূতি আদায়ের জন্য নাটক। ক্লাবের জন্য এত চিন্তা-ভালবাসা থাকলে পদত্যাগ কেন? পদত্যাগের সঙ্গেই নিজেদের ক্লাব সদস্যপদ পরিত্যাগ করার সাহস দেখান না। তা হলে বুঝব! এই ক্লাবে স্যর বীরেনও পদত্যাগ করেছিলেন। আর পদে ফেরেননি। আর এই কর্তারা প্রত্যেক বছর একটা পদত্যাগ পালায় অভিনয় করে যাচ্ছেন।
এর পর মোহনবাগানের কী হবে? কিচ্ছু হবে না। সব যেমন চলছে তেমনই চলবে। গোপনে এঁরাই ক্লাব চালাবেন। বাইরে চলবে ভোটের জন্য এই নাটক। তবে এ ভাবে আমার প্রিয় ক্লাব বেশি দিন চলতে পারে না। রবিবার অনেকে আমায় ফোন করেছেন। মোহনবাগানের জন্য যারা ঘাম-রক্ত ঝরিয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনার সময় এসে গিয়েছে!
...হঠাত্ করে কারও উপর দায়িত্ব না দিয়ে সবাই মিলে ছেড়ে দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। তবে এতে যদি ওরা মনে করে থাকে ক্লাব চলবে না, তবে সেটা ভুল। কয়েকটা দিন সমস্যা হলেও আবার মোহনবাগান উঠে দাঁড়াবেই। সুব্রত ভট্টাচার্য, সত্যজিত্ চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ চৌধুরির মতো ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলাররা দায়িত্ব নিলে বরং ভাল হবে। অনেক দিন ধরে তো এরা ক্লাবে রাজত্ব করছে। এ বার পরিবর্তন দরকার। টুটু, অঞ্জন, দেবাশিসের সরে যাওয়াটা মোহনবাগানের পক্ষে মঙ্গল। তবে নির্বাচন এখন না করে কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়া উচিত।
চুনী গোস্বামী
..একটা হারের জন্য মোহনবাগান কর্তারা পদত্যাগ করেছেন, বিশ্বাস করি না। মোহনবাগান এ বছর যথেষ্ট ভাল টিম। ফুটবলাররা খেলতে না পারলে কর্তারা কী করবেন? আমি এই পদত্যাগের পিছনে অন্য গন্ধ পাচ্ছি। সামনে ওদের ক্লাবে নির্বাচন। সেটাকে মাথায় রেখে চোখে ধুলো দেওয়ার একটা চেষ্টা হতে পারে এই পদত্যাগ!
কল্যাণ মজুমদার (ইস্টবেঙ্গল সচিব)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy