গত বছর মার্কোস ফালোপার বিদায়ের সময় যে রকম নাটক হয়েছিল, এ বার আর্মান্দো কোলাসোকে কোচ রাখা নিয়ে ইস্টবেঙ্গলে অনেকটা সে রকমই পরিস্থিতি!
গোয়ায় ইস্টবেঙ্গলের দুই শীর্ষ কর্তার সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পরও আর্মান্দো চুক্তিপত্রে সই করতে রাজি হননি। উল্টে কিছু শর্ত চাপিয়ে দিয়েছেন ক্লাবকে। যা দেখার পর অগ্নিশর্মা হয়ে ক্লাব-সচিব কল্যাণ মজুমদার বলে দিয়েছেন, “ওর শর্ত মানার কোনও প্রশ্ন নেই। আর্মান্দো ক্লোজড চাপ্টার। আমরা নতুন কোচ খুঁজতে শুরু করেছি।” পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “ও আমাদের কোচিং করতে করতে আইএসএলেও কোচিং করতে চাইছে। সেটা মানা সম্ভব নয়। ওই সময় আমরা অন্য টুর্নামেন্ট খেলতে পারি।”
ক্লাব-সচিবের চাঁচাছোলা মন্তব্য শুনে মনে হচ্ছিল আর্মান্দোর আর ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করার কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ক্লাবের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারের মন্তব্যের পর আর্মান্দো এপিসোড নিয়ে ফের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তিনি বলে দিয়েছেন, “কেউ একা ইস্টবেঙ্গলের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আমাদের ক্লাবে যা সিদ্ধান্ত হয় সব যৌথ ভাবে। সভা ডেকে।” ক্লাব সূত্রের খবর, দু’ তিন দিনের মধ্যেই সভা ডেকে কোচের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শোনা যাচ্ছে সেখানে আর্মান্দোকে রেখে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করতে পারেন কেউ কেউ।
কর্তারা আর্মান্দোকে নিয়ে যে মন্তব্যই করুন এটা ঘটনা, নতুন মরসুমের কোচ নিয়ে তাঁরা বেশ বেকায়দায়। কারণ তাঁদের ধারণা ছিল, আর্মান্দোকে পরের মরসুমের কোচ করা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। সে জন্যই ফুটবল সচিব এবং ক্লাবের শীর্ষকর্তা চুক্তিপত্র সঙ্গে নিয়ে গোয়া গিয়েছিলেন আর্মান্দোকে সই করানোর জন্য। গোয়ান কোচের সঙ্গে ডিনার করার পাশাপাশি তাঁর সাহায্য নিয়েই ডুডু, পিটার কার্ভালো এবং ডেঞ্জিল ফ্রাঙ্কোর সঙ্গে কথাও বলেন লাল-হলুদ কর্তারা। তাঁরা ভাবতেই পারেননি এত কিছুর পরও আইএসএল, পারিশ্রমিক দ্বিগুণ করার প্রস্তাব, টিমের কিছু ফুটবলার বাদ দেওয়া এবং নেওয়া, নিউট্রিশিয়ান, জিম ট্রেনার-সহ নানা শর্ত চাপিয়ে আর্মান্দো তাঁদের বিপদে ফেলে দেবেন।
গত আট মাস ধরে ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য। বার বার মর্গ্যান জানতেও চেয়েছেন, ইস্টবেঙ্গল তাঁকে পরের মরসুমে নেবে কি না! কিন্তু কর্তারা আর্মান্দো সম্পর্কে এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, মর্গ্যানকে তিনি না করে দেন। মর্গ্যানের কাছ নাইরোবির একটি ক্লাবের প্রস্তাব আছে। মর্গ্যান সেখানে গিয়ে কথাও বলে এসেছেন। আনন্দবাজারকে সোমবার করা ই-মেলে তিনি লিখেছিলেন, “এই সপ্তাহের শেষে আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব।’’
আপনি কি ফের মর্গ্যানকে কোচ করার প্রস্তাব দেবেন? ফুটবল সচিব সন্তোষবাবু পুরো ব্যাপারটি এড়িয়ে গিয়ে বললেন, “আর্মান্দোকে আমরা তো এখনও কোচ রাখতে চাইছি। তার পর কী হলে কী হবে এখনই বলা সম্ভব নয়। শুনেছি, মর্গ্যান তো নাইরোবির টিমটার কোচ হয়ে গেছে।” ফুটবল সচিবের কথাতেই পরিষ্কার মর্গ্যানকে পাওয়া কঠিন।
আর্মান্দো যদি শেষ পর্যন্ত খারিজ হয়ে যান, তা হলে কী হবে? বরাবরই নানা বেফাঁস কথা বলে যিনি বিতর্ক তৈরি করেন, সেই ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণবাবুর মন্তব্য, “নতুন কোচ খুঁজব। কেউ অপরিহার্য নয়। আমাদের কাছে সারা বছর প্রচুর বায়োডাটা আসে। সেখান থেকে বেছে নেব।”
করিম বেঞ্চারিফা, এলকো সাতোরি বা অন্য ক্লাবে কোচিং করিয়ে যাওয়া কাউকে অবশ্য পছন্দ নয় জানিয়ে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল সচিব। পড়শি ক্লাবে যখন টিডি নির্বাচন করে ফেলেছে। ৯ জুন থেকে অনুশীলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দিনও টিডির সঙ্গে কর্তারা বসেছিলেন বিদেশি বাছার পদ্ধতি ঠিক করতে। তখন ইস্টবেঙ্গলে কোচ নির্বাচন নিয়ে অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন হয়েছিল এক বছর আগে মর্গ্যান চলে যাওয়ার পর।
তবে ফুটবলাররা অনেকেই ধরে নিয়েছেন, আর্মান্দো সামনের মরসুমে আর কোচ থাকবেন না। সেটা শুনেই বেঁকে বসা এডে চিডি হঠাৎ-ই এ দিন বিকেলে হাজির লাল-হলুদ তাঁবুতে। কর্তারা জানাচ্ছেন, তিনি বকেয়া চেক ও দেশে ফেরার টিকিট নিতে এসেছিলেন। চিডি অবশ্য বললেন, “আর্মান্দো কোচ না থাকলে আমি খেলব। টাকা পয়সা নিয়ে সমস্যা রয়েছে ঠিকই। হয়তো সেটা মিটে যাবে।” তা হলে কী কর্তারা তাঁকে ইঙ্গিত দিয়েছেন নতুন কোচ আসবে? প্রশ্ন শুনে চিডি বলেন, “আর্মান্দো থাকছেন না শুনেই আমি কথা বলতে গিয়েছিলাম ইস্টবেঙ্গলে।”
কিন্তু কী করবেন র্যান্টি মার্টিন্স? এ দিনই তিনি আর্মান্দোকে এসএমএস করেছেন, “আপনার কথায় সই করেছি। এখন শুনছি আপনি থাকবেন না। ব্যাপারটি কী?”
সব মিলিয়ে মরসুম শুরুর মুখে ইস্টবেঙ্গলে চূড়ান্ত ডামাডোল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy