স্কুল ফুটবলারদের সঙ্গে হফেনহেইমের রবের্তো। ছবি: উৎপল সরকার।
আইএফএ শিল্ড দিয়ে জুলাইতে মরসুম শুরু করতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান।
বুধবার ফেডারেশনের কার্যকর কমিটির সভার পর যে ফুটবল ক্যালেন্ডার প্রকাশ করছে তাতে এ বছর ফেড কাপ হচ্ছে না। ২০১৫-র মে মাসে আই লিগ শেষ হওয়ার পর ফেড কাপ হবে জম্মু কাশ্মীরে। আই লিগ শুরু হবে ডিসেম্বরেই।
গত কয়েক বছর ধরেই আই লিগের মাঝে শিল্ড করতে গিয়ে ল্যাজেগোবরে হয়েছে আইএফএ। ভাল টিম জোগাড় করতেই পারেনি। আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “জুলাইতে শিল্ড হওয়ায় আশা করছি, আই লিগের অনেক টিমকেই পাব।”
ক্যালেন্ডার তৈরির পাশাপাশি এ দিনের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ক্লাবগুলিকে একজন আইকন ফুটবলার রাখতেই হবে। যাঁরা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্বকাপ বা অন্তত এশিয় কাপে দেশের হয়ে খেলেছেন। বাজেটের কথা বলে বা অন্য নানা কারণ দেখিয়ে দু’একটি ক্লাব আইকন ফুটবলার বাধাতামূলক করা নিয়ে যেভাবে সরব হয়েছে তাকে গুরুত্ব দিতে চাননি ফেডারেশন সচিব কুশল দাস। দিল্লি থেকে ফোনে বললেন, “গত বার লাজং এফসি বিশ্বকাপার কর্নেল গ্লেনকে সই করিয়েছিল। তার আগে ইউনাইটেড স্পোর্টস বিশ্বকাপার কার্লোস হার্নান্ডেজকে এনেছিল। আইকন ফুটবলার নিতে তা হলে সমস্যা কোথায়? ওটা তো গতবারই ঠিক হয়েছিল। ক্লাবগুলো তো মেনেও নিয়েছিল।”
কোচ এবং টিডিদের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ক্লাবগুলির লাইসেন্স থাকাটাও বাধ্যতামূলক মনে করছেন ফেডারেশেন কর্তারা। জানা গিয়েছে রাংদাজিদ, চার্চিল ব্রাদার্স, ইউনাইটেড স্পোর্টস এবং মহমেডান ক্লাব লাইসেন্সের শর্ত পূরণ করার জন্য যে কাগজপত্র দেওয়া দরকার তা পুরোটা দেয়নি। ২১ মে লাইসেন্সিং কমিটির সভায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। ফেডারেশনের সচিব বললেন, “ফিফার নিয়ম মেনেই আমরা লাইসেন্সিংয়ের বিষয়টি দেখছি। ক্লাবগুলো শর্ত পূরণ করতে না পারলে আই লিগ খেলতে পারবে না। তবে তাদের আবেদন করার সুযোগ থাকছে।” ফেডারেশন সূত্রের খবর, চার্চিল যদি লাইসেন্সিং শর্ত পূরণ না করতে পারে তা হলে বেঙ্গালুরুর সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলকে এএফসি-তে খেলার ছাড়পত্র দেওয়া হবে। আই লিগে ইস্টবেঙ্গল রানার্স হয়েছে।
সভায় অনুর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কমিটির তিন সদস্য হলেন--- প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক ভাইচুং ভুটিয়া, বর্তমান অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী এবং দেশের অন্যতম সফল কোচ ডেরেক পেরেরা। আরও কয়েকজনকে পরে নেওয়া হবে কমিটিতে। যুব বিশ্বকাপের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবে এই কমিটি।
এ দিকে যুবভারতীতে অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের খেলা হবে কী তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। সল্টলেক স্টেডিয়াম নিয়ে ফিফা একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছে ফেডারেশনের কাছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, ১) নতুন করে ড্রেসিংরুম করতে হবে, ২) কৃত্রিম ঘাসের মাঠ রাখা চলবে না, স্বাভাবিক ঘাসের মাঠ করতে হবে। ৩) ভিআইপি এবং ভিভিআইপিদের জন্য যে জায়গা রয়েছে সেটা বাড়াতে হবে, ৪) প্র্যাকটিসের মাঠে ফ্লাডলাইট করতে হবে। তৈরি করতে হবে ড্রেসিংরুমও। ৫) বাকেট চেয়ার রাখার পাশাপাশি দর্শকদের স্বচ্ছন্দের জন্য পরিকাঠামোর উন্নতি করতে হবে। যেগুলো ফেডারেশন ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্তের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠান হয়েছে। অক্টোবর বা নভেম্বরে যুবভারতী দেখতে আসার কথা ফিফা প্রতিনিধিদের। পরিস্থিতি যা তাতে যুব বিশ্বকাপের জন্য মাঠ সংস্কার করতে হলে ইন্ডিয়ান সুুপার লিগ যুবভারতীতে হওয়া সম্ভব হবে না।
তিন বছর পরের অনুর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের দল তৈরির কথা মাথায় রেখে অনুর্ধ্ব-১৫ আই লিগ চালু করতে চলেছে ফেডারেশন। সেখান থেকে এবং বিভিন্ন অ্যাকাডেমি থেকে ফুটবলার নেওয়া হবে। এই দলটিকে এবং এশিয়াডের প্রস্তুতির জন্য তিন কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
কার্যকর কমিটির সভায় সেরা ফুটবলার এবং স্ট্রাইকার বেছে নেওয়া হল বেঙ্গালুরুর সুনীল ছেত্রীকে। সেরা কিপার সালগাওকরের করণজিৎ সিংহ, সেরা ডিফেন্ডার বেঙ্গালুরুর জন জনসন, সেরা মিডিও ডুহু পেরেরা। সেরা রেফারি প্রতাপ সিংহ। সবথেকে যেটা মজার তা হল, সেরার তালিকায় বাংলার কোনও ক্লাবের কারও নাম নেই।
ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে চিন্তিত নয় বাগান
লাইসেন্স না থাকলে রিজার্ভ বেঞ্চে তো নয়ই, অনুশীলন বা ড্রেসিংরুমেও ঢুকতে পারবেন না কোনও কোচ বা টিডি। ফেডারেশনের কার্যকর কমিটি বুধবার এই কড়া সিদ্ধান্ত নিলেও তাদের টিডি লাইসেন্সহীন সুভাষ ভৌমিকের কোনও সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন মোহনবাগান কর্তারা।
এএফসি-র কাছ থেকে ‘লেটার অব কমপিটেন্স’ পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই ক্লাবের মাধ্যমে আবেদন করছেন সুভাষ। যা ফেডারেশনের মাধ্যমে পৌঁছে গিয়েছে এশীয় ফুটবল নিয়ামক সংস্থার দফতরেও। তিন বার আই লিগ জয়ী কোচের অস্ত্র এএফসি-র একটি নিয়ম। যাতে লেখা আছে লাইসেন্সহীন কোচেদের কোনও ক্লাব নিয়োগ করলে তাকে অন্তত পাঁচ বছর জাতীয় বা পেশাদার লিগে কোচিং করিয়ে আসতে হবে। সুভাষ ১০ মে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে তিনি তাঁর দীর্ঘ ফুটবলজীবন থেকে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, চার্চিল, সালগাওকর, মহমেডানের কোচিং করানোর কথা লিখেছেন। এবং অনুরোধ করেছেন কোচিং করানোর অনুমতি দেওয়ার জন্য। এ দিন অবশ্য সুভাষ এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। বলে দিলেন, “যা করার ক্লাব করবে বা বলবে। এখানে আমার কিছু করার নেই।” তবে বাগানের অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বলে দিয়েছেন, “সুভাষদাকে আমরা টিডি করেছি। সে জন্যই তাঁর অবেদনকে সমর্থন করে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি এএফসি ওকে কোচিং করানোর ছাড়পত্র দেবে।”
এ দিকে, আইকন ফুটবলার খেলানো বাধ্যতামূলক হওয়ায় ক্ষুব্ধ ইস্টবেঙ্গল। শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “যদি কোনও ক্লাব তাদের চার বিদেশিকে দু’বছরের জন্য চুক্তি করিয়ে থাকে তা হলে কী হবে? ফেডারেশনের উচিৎ ছিল আলোচনা করা।” যা শুনে আই লিগ সি ই ও সুনন্দর মন্তব্য, “এটা তো একবছর আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy