প্রথম দিনের প্র্যাকটিসে জিদান-রোনাল্ডোর যে ছবিতে শুরু বিতর্ক।
মঙ্গলবার সকালে খবরটা কাগজে পড়ার পর বেশ কয়েক জায়গায় আমাকে একটাই প্রশ্ন শুনতে হল।
রোনাল্ডো-জিদান জুটি কি সফল হবে? না কি আর একটা সুপারস্টার জুটির ভাগ্যে যা হয়েছিল, সেটাই হবে? মানে মোদ্দা কথায়, মেসি-মারাদানোর মতো হাল হবে না তো এই দু’জনেরও?
জিদানকে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ হতে দেখে আমি কিন্তু একটুও অবাক নই। ও আগে রিয়ালের জুনিয়র টিমের কোচ ছিল। বড় টিমে কোচিং না করালেও জিদানকে কিন্তু কোচ হিসেবে তৈরি হওয়ার দারুণ সুযোগ দিয়েছে রিয়াল ম্যানেজমেন্ট। জানি, চ্যালেঞ্জটা এ বার একেবারেই অন্য মাত্রার। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো তারকাকে সামলানো মুখের কথা নয়। রিয়ালের মতো ক্লাবকে মরসুমের মাঝপথে দায়িত্ব নিয়ে সফল করাও বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ। তাতেও বলব জোসে মোরিনহোর মতো কোচের লোভে না পরে জিদানকে দায়িত্ব দেওয়া একটা মাস্টারস্ট্রোক।
জিদানের কোচ হওয়ার খবরটা পাওয়ার পর একটু ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখছিলাম। দেখলাম, একটা ছবি নিয়ে মিডিয়ায় খুব হইচই হচ্ছে। কোচ জিদানের রিয়ালের সঙ্গে প্রথম প্র্যাকটিস সেশনের ছবি। অন্য দিকে মুখ করে নিজের বিবটা খুলে জিদানের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে রোনাল্ডো। মিডিয়ার কথা মতো, এটা নাকি জিদানের মতো প্লেয়ারকে এক রকম অপমানই। বলা হচ্ছে, শুরুতেই যদি এই অবস্থা হয়, পরে তো ইগো ক্ল্যাশের চূড়ান্ত হবে।
আমি কিন্তু তা মনে করি না। আরে, সব কোচই প্লেয়ারদের বিব ধরে। এর মধ্যে অপমানের কোনও ব্যাপার নেই। বরং আমার মনে হয়, এই জুটি ক্লিক করে যাবে। কেন বলছি এ কথা? আসলে জিদান এবং রোনাল্ডো দু’জনেই কিন্তু দলের সাফল্য চাইবে। বেনিতেজ ছাঁটাইয়ের পিছনে অনেকেই কিন্তু রোনাল্ডোর হাত দেখেছেন। এমনকী এও পড়েছিলাম, রোনাল্ডো নাকি ক্লাব প্রেসিডেন্টকে বলে এসেছে, বেনিতেজ থাকলে আমি থাকব না। সে যাই হোক, ঘটনা হল, বেনিতেজকে ছেড়ে রিয়াল যে ভুল করেনি, সেটা কিন্তু রোনাল্ডোকেই মাঠে প্রমাণ করতে হবে। আর জিদান জানে ট্রফি জিততে গেলে রোনাল্ডো ছাড়া গতি নেই। তাই দু’জনের কেমিস্ট্রি রিয়ালকে সাফল্য এনে দিতে পারবে বলেই মনে হয়।
মেসি-মারাদোনার মতো অবস্থা হবে না তো নতুন জুটির?
স্টার প্লেয়ারদের সামলানোর জন্য অবশ্য মাঠের স্ট্র্যাটেজি কষার বাইরেও কিছু কিছু জিনিস করতে হয়। আমি যখন মোহনবাগানে কোচিং করাতাম, তখনও টিমে সুপারস্টারের অভাব ছিল না। যেমন ব্যারেটো, ইগর। আমি ওদের সঙ্গে আলাদা করে মিশতাম। বাড়িতে ডেকে আড্ডা মারতাম। বোঝাতাম, তোমরা সিনিয়র। দলটাকে তোমাদেরই চালাতে হবে। আমি জানি না জিদান কী স্ট্র্যাটেজি নেবেন। তবে রোনাল্ডোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে যদি গেমপ্ল্যান সাজান, তা হলে রোনাল্ডোও নিশ্চয়ই হতাশ করবে না। জিদানের মতো সুপারস্টারের ‘ভোট অব কনফিডেন্স’ পেলে যে কোনও প্লেয়ারের সেরাটা বেরিয়ে আসা স্বাভাবিক।
অনেকেই এখানে পাল্টা প্রশ্ন তুলতে পারেন, মেসি আর মারাদোনা জুটিটা তা হলে জমল না কেন? আসলে দেশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্য রকম। ওখানে কম সময়ের মধ্যে সেরা বোঝাপড়াটা তৈরি করতে হয়। কম সময়ের মধ্যে কোচের মানসিকতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। ক্লাবের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। মরসুমভর অনেক দিন সময় পায় ফুটবলাররা কোচের ছকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। তাই সেই সমস্যাটাও এখানে হবে না।
কোচ হিসেবে হয়তো খুব বেশি অভিজ্ঞতা নেই জিদানের। কিন্তু এই ক্লাবে খেলেছেন। রিয়ালকে অনেক সাফল্য দিয়েছেন। প্রাক্তন প্লেয়ারের নিজের ক্লাবের উপর আবেগ অন্য জিনিস। আর জিদানের মতো ফুটবলার কোচ হওয়া মানে ক্লাব সমর্থকদের আবেগটাও অন্য জায়গায় চলে যাবে। সেটা কিন্তু টিমের কাছে একটা বাড়তি মোটিভেশন হবে। কোনও তুলনা হয় না জানি। কিন্তু মোহনবাগানে আমার ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছিল।
জিদান ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ থেকে ইউরো সব দিয়েছেন। রিয়ালকে ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দিয়েছেন, লা লিগাও দিয়েছেন। কোচ হিসেবেও শূন্য হাতে ফিরবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy