পরামর্শ: ঘরোয়া ক্রিকেটেও গোলাপি বলে ম্যাচ চান হরভজন।
আঙুলের সাহায্যে করা স্পিনার (ফিঙ্গার স্পিনার) নয়, ইডেনে দিনরাতের গোলাপি বলে টেস্টে কব্জির স্পিনারদের (রিস্ট স্পিনার) বিরুদ্ধে খেলাটাই বেশি কঠিন হবে বলে মনে করেন হরভজন সিংহ। সেই হরভজন, ইডেনে স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যাঁর ঐতিহাসিক টেস্ট হ্যাটট্রিকের স্মৃতি আজও উজ্জ্বল দর্শকদের মনে।
হরভজন বলেছেন, ‘‘গোলাপি বলে খেলার সময় সব চেয়ে কঠিন তার গতিটা বোঝা। তাই কব্জির মোচড়ে যারা স্পিন করায়, তারাই কিন্তু ইডেনে সুবিধে পাবে।’’ এই ভারতীয় দলে কব্জির স্পিনার হিসেবে রয়েছেন কুলদীপ যাদব। তা হলে কি তাঁকেই ইডেনে সুযোগ দেওয়া উচিত? হরভজন অবশ্য সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন। দল নিবার্চন নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘দল পরিচালনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁরাই সেটা ঠিক করবেন। আমি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ যোগ করেছেন, ‘‘তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রথমে পেসারদের খেলতে হবে। ইডেনের পিচে দ্রুতগতির বোলাররা সাহায্য পাবে। তার পরে স্পিনারদের খেলার ব্যাপার আসবে।’’ ইডেনে সাম্প্রতিককালে স্পিন-সহায়ক থেকে পাল্টে পেসারদের সাহায্য করার মতো পিচ হচ্ছে। ২২ নভেম্বর থেকে ঐতিহাসিক দিনরাতের টেস্টের জন্যও পিচে ঘাস রাখা হয়েছে।
এখানেই থামেননি ভারতের হয়ে ১০৩ টেস্টে খেলা ৪১৭ উইকেটের মালিক। ইডেনের গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্ট সম্পর্কে হরভজন আরও বলেছেন, ‘‘কলকাতায় সাড়ে তিনটে থেকে চারটের মধ্যে সূর্যাস্ত হয়। এই সময়টায় পেসাররা সব চেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তবে ভবিষ্যতে যদি আমরা আরও দিনরাতের টেস্ট খেলি, তা হলে স্পিনারদের নিয়েও ভাবা দরকার।’’
দল নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য না করলেও কুলদীপের কথা আলাদা করে বলেছেন ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অফস্পিনার। তাঁর মন্তব্য, ‘‘দলীপ ট্রফির কথা কারও মনে থাকলে তিনি ভালই জানবেন যে, কুলদীপের কব্জির স্পিন কেউ বুঝতেই পারছিল না। সে বার লেগস্পিনাররা অনেক উইকেট নিয়েছিল।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আঙুলের সাহায্যে যারা স্পিন করায়, তারা বল একটা গতিতে ছাড়ে। যাতে বল ঘোরে এবং লাফায়। কিন্তু লেগস্পিনের ক্ষেত্রে, বলে গতি বেশি থাকে। ওদের খেলা কঠিন।’’
সেই প্রসঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন অফস্পিনার মুথাইয়া মুরলীধরনের কথাও বলেন হরভজন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। মুরলী আঙুলের সাহায্যে স্পিন করালেও গোলাপি বলে বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারত। তার কারণ ওর অফব্রেক আর দুসরায় যথেষ্ট গতি থাকত।’’
‘এসজি’ গোলাপি বলে পালিশ বেশি থাকে। যাতে রাতের আলোয় বলের রং এক থাকে এবং দেখতে অসুবিধায় না পড়েন ব্যাটসম্যানেরা। হরভজনের বক্তব্য, ‘‘পালিশ বেশি থাকলে বল খুব ভাল করে ধরতে হবে (গ্রিপ)। বিশেষ করে আঙুলের সাহায্যে যারা স্পিন করায়, তাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এই বল হাত থেকে পিছলেও যায়।’’
ইডেনে দিনরাতের গোলাপি বলে টেস্টে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে শিশির। এমন পরিস্থিতিতে সাদা এবং গোলাপি বলে বোলিং করার পার্থক্যের কথাও ব্যাখ্যা করেছেন হরভজন। তিনি বলেছেন, ‘‘সবাই হয়তো ভাবে পিচ্ছিল সাবানের মতো আচরণ করবে বল। যেমনটা সাদা বলে দিনরাতের ম্যাচে হয়। সাদা বল পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ার কারণ ভিজে গেলে তার পালিশ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু গোলাপি বলে পালিশ বেশি থাকে। চামড়া বেশি ভেজে না। কিন্তু সেলাইটা খুবই ভিজে থাকে। এখানেই আঙুলের সাহায্যে যারা স্পিন করায়, তাদেরই সমস্যা বেশি হয়।’’
হরভজন মনে করেন, কী ধরনের ক্রিকেট খেলা হচ্ছে সেটাও পার্থক্য গড়ে দেওয়ার বড় কারণ। ‘‘৫০ বা ২০ ওভারের ম্যাচে বল ভিজে গেলে গতির তারতম্য ঘটিয়ে ব্যাটসম্যানকে পিছনের পায়ে (ব্যাকফুটে) খেলতে বাধ্য করানোর সুযোগ থাকে। যাতে বেশি খুচরো রান ওঠে। কিন্তু টেস্ট ম্যাচে ওই রকম ভাবে ফিল্ডিং সাজানোর সুযোগ থাকে না। বল তাই সামনেই ফেলতে হবে। ভিজে বল নিয়ে ওভারে ছ’বার একই জায়গায় রাখা কঠিন পরীক্ষা।’’
হরভজন মনে করেন, স্পিনাররা ঘরোয়া ক্রিকেটও গোলাপি বলে দিনরাতের ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে অনেক ধারালো হয়ে উঠতে পারবেন। তিনি বলছেন, রঞ্জি ট্রফির কয়েকটি ম্যাচ ও দলীপ ট্রফিতে গোলাপি বলে খেলানোর ব্যবস্থা করা উচিত ভারতীয় বোর্ডের। হরভজন চান, সেই সব ম্যাচে এ দেশের তারকা ক্রিকেটারেরাও খেলুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy