আকর্ষণ: স্থানীয় ক্রিকেটের ডার্বিতে ঋদ্ধিমান। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বেলগাছিয়ায় ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের ছাত্র বছর সাতেকের ঋষভ মণ্ডল। তাপপ্রবাহের তোয়াক্কা না করেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে সকাল থেকে ঠায় বসা ঋষভ। ঠিক করে এসেছে, প্রিয় ক্রিকেটারের সই না নিয়ে মাঠ ছাড়বেই না।
তার থেকে কিছুটা দূরে তখন মোহনবাগান জার্সিতে ফিল্ডিং করছেন ঋষভের প্রিয় ক্রিকেটার। শনিবার যাঁর হাতে উইকেটকিপিং গ্লাভস ছিল না। বরং পয়েন্টে ফিল্ডিংয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিন দিন আগেই আইপিএল খেলে কলকাতায় ফিরেছেন। তাতেও চড়া রোদ্দুরে মোহনবাগান জার্সিতে সিএবি লিগে খেলতে নেমেছেন। তিনি— ঋদ্ধিমান সাহা। দুরন্ত সব ক্যাচের জন্য যাঁকে এখন বলা হচ্ছে ‘সুপারম্যান’।
তীব্র গরমে বাকি মোহনবাগান ক্রিকেটাররা মাঠের বাইরে আসছেন। জল খাচ্ছেন। ঋদ্ধিমান কিন্তু নির্লিপ্ত। চা-পানের বিরতি ছাড়া শুরু থেকে দিনের শেষ বল, একবারও মাঠের বাইরে এলেন না। ৮৯ ওভার টানা ফিল্ডিং করেও চোখেমুখে কোনও ক্লান্তি নেই। হাসিমুখে ঋদ্ধিমান বলছেন, ‘‘আমার ফিল্ডিং করতে ভাল লাগে। ছোটবেলা থেকেই তাই। এটা ঠিক এত গরমে তিন দিন খেলা খুব কঠিন। তবু উপভোগ করছিলাম।’’
কিংগস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে সুন্দর কয়েকটা ইনিংস খেলেছেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মতো বোলিং লাইন আপের বিরুদ্ধে ওপেন করে ৫৫ বলে ৯৩ করেন। ওপেনার ঋদ্ধি কি তৈরি? ভারতীয় টেস্ট দলের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান যোগ করলেন, ‘‘হ্যাঁ ওপেন করতে কোনও সমস্যা নেই। এক থেকে এগারো, দলের জন্য যে কোনও জায়গায় খেলতে তৈরি।’’
আইপিএল ফাইনালে মুখোমুখি হতে চলেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্ট। চলতি মরসুমে মুম্বই অপ্রতিরোধ্য ফর্মে থাকলেও পুণের বিরুদ্ধে তিন বার হেরেছে রোহিত শর্মার দল। তাতেও আইপিএল ফাইনালে ঋদ্ধির বাজি মুম্বই। ‘‘অবশ্যই আমার ফেভারিট মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। কারণ মুম্বইয়ে অনেক ভাল অলরাউন্ডার আছে, যারা ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে,’’ বলছেন তিনি।
তাঁর ফেভারিট মুম্বই হলেও ঋদ্ধি মনে করিয়ে দিতে চাইছেন আইপিএল থ্রিলারের মতো। যেখানে নিমেষেই ছবিতে নাটকীয় মোড় এসে যেতে পারে। ‘‘আইপিএলে কোনও কিছুই নিশ্চিত নয়। যে কেউ তার দিনে জিতিয়ে দিতে পারে। পুণের কেউ যদি সে রকম পারফরম্যান্স করে, তা হলে ওদের সুযোগ থাকবে জেতার,’’ বলছেন প্রীতি জিন্টার দলের কিপার। কলকাতা নাইট রাইডার্স প্রসঙ্গ তুলে এনে ঋদ্ধিমান আরও বলছেন, ‘‘গোটা মরসুমে দুর্দান্ত খেলেছে কেকেআর। কিন্তু মোক্ষম সময়ে হেরে বসল। আমি ম্যাচটা পুরো দেখিনি। যখন টিভি চালালাম, দেখলাম পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছে নাইটদের। আসলে প্রথমে ব্যাট করে অন্তত ১৪০ থেকে ১৫০ তুলতেই হতো।’’
সল্ট লেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মাঠে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের ক্রিকেট ডার্বি দেখতে ভিড়ই ছিল না। জনশূন্য মাঠ বললেও ভুল হবে না। তাতেও দিনের শেষ সেশনের আগে যতটুকু লোক হল, তা ঋদ্ধিমানের জন্যই। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার পরেও হাজির কয়েকজন ভক্ত সেলফি তুলতে ব্যস্ত ঋদ্ধিমানের সঙ্গে। তার মধ্যেই ঋদ্ধিমান তাঁর ফুটবল-প্রীতির কথা জানালেন। ক্রিকেটার হলেও ফুটবলও ভালবাসেন তিনি। ভাইচুং ভুটিয়া তাঁর প্রিয় ফুটবলার। ভাইচুং যে ক্লাবে খেলতেন সেই ক্লাবকেই সমর্থন করতেন।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের দল নিয়েও আশাবাদি ঋদ্ধিমান। ‘‘দারুণ দল। বিরাট খুব ভাল কিছু করবে। দীনেশ কার্তিকও যোগ্য ক্রিকেটার হিসেবে দলে স্থান পেয়েছে,’’ বলছেন ঋদ্ধিমান। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে ঋষভ পন্থ-কেই উঠতি প্রতিভা হিসেবে দেখছেন তিনি। ‘‘পন্থ খুব ভাল ক্রিকেটার। উইকেটকিপারদের মধ্যে ও অন্যদের থেকে ভাল,’’ বলছেন ঋদ্ধিমান।
আইপিএল থেকে পঞ্জাব ছিটকে যাওয়ার সময় বীরেন্দ্র সহবাগের মন্তব্য নিয়ে উঠেছিল ঝড়। বিদেশি ক্রিকেটারদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সহবাগ। আঙুল তুলেছিলেন অধিনায়ক গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দিকে। ঋদ্ধি সেই বিতর্ক নিয়ে হাসতে হাসতে বলে গেলেন, ‘‘আমার কিছু বলার নেই। সহবাগ যদি ভাবে দলে সবাই সহবাগের মতো ব্যাট করবে তা হলে কী করে হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy