পরীক্ষা: গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে নামার আগে অনুশীলনে নেমার। ছবি: রয়টার্স
কে ভেবেছিল, গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাবে ব্রাজিলের কাছে। বাস্তবে সেটাই হচ্ছে।
আজ, বুধবার সার্বিয়ার সঙ্গে ম্যাচটাকে আদৌ হেলাফেলা করা যাবে না। চার পয়েন্ট এবং +২ গোল পার্থক্য নিয়ে গ্রুপ শীর্ষে থেকেই নামবে আমাদের দল। কিন্তু পরিস্থিতিটা অতটা সহজ নেই। তিনটি দলের সামনে নক-আউট পর্বে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সুইৎজারল্যান্ড খেলবে কোস্টা রিকার সঙ্গে, যারা দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে। কোস্টা রিকার আত্মবিশ্বাস কম থাকবে বলে আমার মনে হচ্ছে। এই গ্রুপ থেকে সুইৎজারল্যান্ড দ্বিতীয় দল হিসেবে নক-আউটে যেতে পারে। ড্র করলেই চলবে ওদের।
ব্রাজিলকে কিন্তু জেতার কথা ভেবেই খেলতে হবে। কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে ২-০ জিতে যে ছন্দটা আমরা পেয়ে গিয়েছি, সেটাকে ধরে রাখতে হবে। কোস্টা রিকার সঙ্গে শেষ ৩০ মিনিট আমরা যে রকম কর্তৃত্ব নিয়ে খেলেছি, সেটা চালিয়ে যেতে পারলে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, সুইৎজারল্যান্ডের সঙ্গে কিন্তু জানপ্রাণ দিয়ে লড়েছিল সার্বিয়া। শেষ পর্যন্ত ওরা ১-২ হারলেও লড়াইটাকে উপেক্ষা করলে ঠকতে হতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘বিশ্বকাপের মঞ্চে চেনা ছন্দে মেসি, মানরক্ষা হল আর্জেন্টিনার’
কয়েকটা পরিসংখ্যান দেখছিলাম। বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত সার্বিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি ম্যাচ খেলেছে ব্রাজিল (যুগোস্লাভিয়ার অংশ থাকার সময় ধরে)। একটি জিতেছে, একটি হেরেছে, একটি ড্র হয়েছে। তার মানে সার্বরা কখনওই আমাদের খুব সহজ প্রতিপক্ষ ছিল না। এ বারে তো আরওই সহজ হবে না কারণ, গ্রুপ ‘ই’-র শেষ ম্যাচে ওরাও সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপাবে। চাইবে মরণকামড় দিয়ে ব্রাজিলকে হারিয়ে সেরা অঘটন ঘটিয়ে নক-আউট পর্বের যোগ্যতা অর্জন করতে।
আমার ধারণা, তিতে এই ম্যাচে ৪-৩-৩ কম্বিনেশনে দলকে খেলাতে চাইবেন। অ্যালিসন থাকবে গোলে। চার জনের রক্ষণে থিয়াগো সিলভা আর মিরান্ডা সেন্টার ব্যাক। মার্সেলো আর ফ্যাগনার যথাক্রমে লেফ্ট এবং রাইট ব্যাক। মিডফিল্ডে বদল হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। ডান দিকে পাওলিনহোর জায়গায় তিতে আনতে পারেন ফার্নান্দিনহোকে। ‘হোল্ডিং মিডফিল্ডার’-এর ভূমিকায় সম্ভবত রাখা হবে কাজিমিরো। বাঁ দিকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে ছেড়ে রাখা উচিত ফিলিপে কুটিনহোকে। আর উপরে আক্রমণের ঝড়
তোলার জন্য থাকুক উইলিয়ান, গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)। আমার মনে হয় ফিরমিনোকে পরে নামানো হবে জেসুস বা উইলিয়ানের জায়গায়। আরও একটা আকর্ষণীয় ব্যাপার আছে। ব্রাজিল ৪-৩-৩ ছকে শুরু করলেও ফিরমিনোকে এনে পরে তিতে ৪-১-২-৩ ছকে আরও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার দিকে ঝুঁকতে পারেন। তখন দুই উইং থেকে নেমার আর ফিরমিনো চকিতে ঢোকার চেষ্টা করবে। আর মিডফিল্ড থেকে কুটিনহো উপরে উঠে ওদের দু’জনকে সাহায্য করবে। এ রকম ছক দেখা যেতে পারে যদি ব্রাজিল প্রথমার্ধে গোল না পায়।
আমি আজও কুটিনহোর থেকে দারুণ ফুটবল দেখার আশায় আছি। তবে আমি নিশ্চিত এই ম্যাচ থেকে ওকে কড়া মার্কিংয়ে রাখবে। এখন প্রতিপক্ষরাও বুঝে গিয়েছে, কুটিনহোকে ধরতে না পারলে ব্রাজিলকে ধরতে পারবে না। ওকে অনেক কড়া ট্যাকলের মুখেও পড়তে হতে পারে। তবু আমি কুটিনহোর উপর আস্থা রাখছি, কারণ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ এবং লা লিগায় এ রকম কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ও অভ্যস্ত। কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে থেকে সফল হয়ে বেরিয়ে আসার মানসিকতা ওর তৈরিই হয়ে গিয়েছে। এই ম্যাচটা ব্রাজিলের আক্রমণ বনাম সার্বিয়ার রক্ষণের আর আগের দিনের মতোই আমার ঘোড়া কুটিনহো।
সার্বিয়া সম্ভবত ৪-২-৩-১ ছকে খেলবে। ওদের আগের কোচ স্লাভোজুব মুসলিন ৩-৪-৩ নকশায় খেলতে পছন্দ করতেন। যোগ্যতা অর্জন পর্বে সেই পদ্ধতিতেই খেলেছিলেন। কিন্তু বর্তমান কোচ মাদেন ক্রিস্তাইচ চার ব্যাকের ছকে ফিরে গিয়েছেন। প্রথম দিকে নতুন কোচের নতুন পদ্ধতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধায় পড়লেও এখন সার্বিয়ার ফুটবলাররা থিতু হয়ে গিয়েছে। এই বিশ্বকাপে এই ছকে খেলে প্রতিপক্ষদের সমস্যায় ফেলছে সার্বিয়া। অধিনায়ক নেমানইয়া মাতিচ এবং ক্রিস্টাল প্যালেসের লুকা মিলিভোজেভিচ থাকায় ওদের মিডফিল্ড খুব শক্তিশালী। দুই উইঙ্গার দুসান তাদিচ এবং ফিলিপ কস্তিচও বেশ ভাল ফুটবলার। ওদের উপর নজর রাখতে হবে ব্রাজিলকে। আমার মনে হয়, সার্বিয়া অপেক্ষার খেলা খেলবে। ওরা কাউন্টার অ্যাটাকে ভীষণ শক্তিশালী, তাই ধৈর্য ধরে রক্ষণ সামলাতে থাকবে। ব্রাজিলকে ওরা নিজেদের অর্ধে আসার সুযোগ দেবে। তার পর থামানোর চেষ্টা করবে। ব্রাজিলের অর্ধে গিয়ে ওরা ব্রাজিলকে থামাতে যাবে না। তার পর ওদের অর্ধে দলবল নিয়ে ঢুকে পড়া ব্রাজিলের থেকে বল কেড়ে নিয়ে প্রতি আক্রমণে যাবে। সার্বিয়ার রক্ষণের দেওয়াল ভাঙার পাশাপাশি তাই ব্রাজিলকে ওদের কাউন্টার অ্যাটাক নিয়েও সজাগ থাকতে হবে।
ব্রাজিলের ফরোয়ার্ডদের মধ্যে জেসুসকে নিয়ে আমি কিছুটা উদ্বেগে। ওর উচ্চতা খুব বেশি নয় বলে সার্বিয়ার ডিফেন্ডারদের সামনে সমস্যায় পড়তে পারে। এখানেও কুটিনহোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। ওর টাচ-প্লে ব্রাজিলের রক্ষাকবচ হয়ে উঠতে পারে। নেমার, উইলিয়ান, ফার্নান্দিহোদের সঙ্গে কুটিনহোর সুন্দর বোঝাপড়ার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। যখন কোনও টিম মরিয়া ভাবে রক্ষণ সামলায়, দেওয়াল ভাঙার জন্য মাঠকে বড় করাই একমাত্র পথ। ব্রাজিলকে সেটা করতে গেলে কুটিনহোর উপর ভরসা করতে হবে।
আগেই বললাম, সার্বিয়া ৪-২-৩-১ ছকে খেলবে। যারা এই ছকে খেলে, তারা উইংয়ের দিকে দুর্বল হয়। ব্রাজিলকে তার ফায়দা তুলতে হবে। সার্বিয়ার ডিফেন্সকে প্রসারিত করে উইংয়ের দিকে ঠেলে দিতে হবে। যাতে মাঝখানে ফাঁক তৈরি হয় আর তার সুবিধে আদায় করে নেমার আর জেসুস গোলের রাস্তায় ঢুকে পড়তে পারে। আমার আগের লেখায় নেমারের কয়েকটি ব্যাপার নিয়ে সমালোচনা করেছিলাম। বিশ্বকাপ বলেই ওকে সতর্ক করে দেওয়া দরকার। কারণ, আবার সুযোগ আসবে চার বছর পরে।
বুধবারের ম্যাচের আগেও কয়েকটা পরামর্শ দিতে চাই নেমারকে। মাই বয়, মনে রেখো সার্বিয়া কিন্তু জোনাল মার্কিং করবে আর নির্মম ভাবে শারীরিক বল প্রয়োগ করার চেষ্টা করে তোমাকে থামানোর চেষ্টা করবে। তাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে, তোমার স্কিলকে পুরোপুরি ব্যবহার করা। ওরা যদি বল প্রয়োগের রণনীতি নেয়, তা হলে ওদের অর্ধে সাহস করে ঢুকে তোমার স্কিলেই সার্বিয়াকে ধরাশায়ী করতে হবে। বোকামি করে নাটক করার দরকার নেই। চারদিকে ক্যামেরা রয়েছে। ধরা পড়লে সেটা তোমার ভাবমূর্তির জন্য ভাল হবে না। গোটা বিশ্ব ব্রাজিলের দশ নম্বরকে চিরকাল সম্মানের চোখে দেখেছে। সেটা মাথায় রেখে যা করার, করো।
যাও ব্রাজিল, যাও ছেলেরা, জয় করে এসো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy